ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি
গোপালগঞ্জের লোকেরাই কোটার সুযোগ বেশি পেয়েছে
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন আপ বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ/ ফাইল ছবি
গোপালগঞ্জের বাসিন্দারাই সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথার সুযোগ বেশি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নতুন রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি বলেন, কোটার কারণে মেধাবীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। এই সুবিধা নিতে অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়।
গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৪৮তম সাক্ষী হিসেবে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন আলী আহসান জুনায়েদ।
আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘২০১৩ সালে কোটা আন্দোলনের সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলাম। আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ছাত্রলীগও আমাদের মিছিলের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের আন্দোলন আর অগ্রসর হয়নি।’
জবানবন্দিতে জুনায়েদ আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে “সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ”-এর ব্যানারে কোটা সংস্কারের আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়। এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ ও ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ চালায়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হাসান আল মামুন, নুরুল হক নূর ও রাশেদ খান প্রমুখ। আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হয়ে রাগের বশবর্তী হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সরকারি চাকরির নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেডে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন। ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপুতিদের জন্য ৩০ শতাংশ, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী ও এক শতাংশ কোটা প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারণ করে। ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে দেখা যায় যে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের জন্য পাশ মার্ক ৭২, অন্যদিকে কোটাধারীদের জন্য তা হয় ৪২।’
প্রসিকিউশনের এই সাক্ষী বলেন, কোটা প্রথা বাতিল করে জারি করা প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ’-এর পক্ষ থেকে ওহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করেন। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে সেই আন্দোলন সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে।
এফএইচ/এমএমকে/এএসএম