সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের জামিন নিয়ে হাইকোর্টে রুল
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, ফাইল ছবি
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছন হাইকোর্ট।দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী মনসরুল হক চৌধুরী।
পৃথক পাঁচ মামলায় জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর হাইকোর্টের বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মনসরুল হক চৌধুরী ও কামরুল হক সিদ্দিকী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন।
কারাগারে থাকা খায়রুল হক পাঁচ মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার পর উচ্চ আদালতে পৃথকভাবে গত ১৯ অক্টোবর বিচারপতি খায়রুল হক জামিনের আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এর পর ২০ অক্টোবর আবেদনগুলো শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। আদালত শুনানির জন্য ২৬ অক্টোবর আবেদনগুলো কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানান। এর ধারাবাহিকতায় আবেদনগুলো আদালতের আজকের কার্যতালিকার ৯৮২ থেকে ৯৮৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উল্লেখ করেন খায়রুল হকের আইনজীবীরা। আদালত বেলা সোয়া দুইটায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
আপিল বিভাগে থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় দেন খায়রুল হক। হাইকোর্ট বিভাগে থাকাকালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার রায় ও সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায় দিয়েছিলেন খায়রুল হক।
২০১৩ সালে তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মেয়াদ শেষে কয়েক দফা একই পদে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয় সাবেক এই বিচারপতিকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছিল না।
চলতি বছর ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে তাকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আব্দুল কাইয়ূম আহাদ হত্যা মামলায় তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। এরপর বে-আইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে করা একটি মামলায়ও খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে চলতি বছরের আগস্টে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা গেছে, বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ীর হত্যা মামলা; শাহবাগ, নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও ফতুল্লা থানায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক রায় জালিয়াতি এবং রাজউকের প্লট কেনায় দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিচারিক আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টে আসেন।
শাহবাগ, নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও ফতুল্লা থানায় রায় জালিয়াতির মামলায় জামিনের আবেদনে বলা হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক মামলার রায়ের সময় আপিল বিভাগে ৭ জন বিচারক ছিলেন। তারা সবাই মিলে এ রায় দিয়েছেন। একজন বিচারকের পক্ষে রায় দেওয়া সম্ভব না। রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিচারককে জোর করা হয়নি। ওই সব বিচারপতি এত দিনেও এ বিষয়ে আপত্তি করেননি।
হত্যা মামলায় জামিনের আবেদনে বলা হয়, যে তারিখে হত্যার ঘটনা দেখানো হয়েছে, সেদিন পর্যন্ত খায়রুল হক আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি পুলিশ প্রোটোকল ছাড়া তিনি কোথাও যাননি। পুলিশের মুভমেন্ট ডায়েরি অনুযায়ী তিনি সেদিন বাড়িতে ছিলেন।
দুদকের মামলায় জামিনের আবেদনে বলা হয়, এই মামলায় রাজউকের পূর্বাচল প্লটের জন্য সময় মত কিস্তি না দিয়ে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ টাকা সুদ মওকুফের অভিযোগ আনা হয়েছে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে। তবে খায়রুল হক সুদ মওকুফের জন্য আবেদন করেননি। আর সুদ মওকুফ আইনগত বিষয়, ফৌজদারি অপরাধ নয়।
২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান খায়রুল হক। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হয়। ২০১১ সালের ১৭ মে তিনি অবসরে যান। ২০১৩ সালে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয়। পর পর তিনবার তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হন।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস