ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

ট্রাইব্যুনালে ফজলুর রহমান: আমার জীবনে আর এ রকম হয়নি, ক্ষমা চাই

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আদালত অবমাননার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। তার ক্ষমার আবেদন মঞ্জুর করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ফজলুর রহমান সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘আল্লাহর পরে আপনাদের সম্মান। হয়তো আমার অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল করে কিছু বলা হয়ে যেতে পারে। আমিও মানুষ। আমার জীবনে আর এরকম হয়নি। আমি ক্ষমা চাই।’

শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে বিএনপি নেতাকে অব্যাহতি দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান এর আগে বেলা ১১টার পর আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে আসেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের তিন বিচারক এজলাসে আসেন। এজলাস কক্ষে শুনানির শুরুতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন জানান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানি করবেন।

শুনানিতে কাজল ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ফজলুর রহমান একজন সিনিয়র আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। তার বক্তব্যের বিষয়ে আমরা লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছি। এসময় ফজলুর রহমান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে বসার অনুমতি দেন।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, প্রসিকিউশন আগে বলুক। এরপর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি, এই কোর্ট আমি মানি না। প্রতিদিন বলছি এই কোর্ট আমি মানি না।’

ট্রাইব্যুনাল এসময় ফজলুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনি এসব কথা বলেছেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, আমি এভাবে বলিনি। সেই সঙ্গে তিনি ক্ষমা চান।

তখন ব্যারিস্টার কাজল বলেন, আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা উনার কাছ থেকে শুনি। উনি যদি বলেন, এগুলো বলিনি, তাহলে একভাবে বিবেচনা করবো, আর যদি বলেন- বলেছি, আরও বলবো; তাহলে অন্যভাবে বিবেচনা করবো।

ব্যারিস্টার কাজল ফের বলেন, আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। উত্তরে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ওনাকে তো আমরা চিনি। সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা, সিনিয়র আইনজীবী। কথা হলো, তিনি আরও বলবেন কি না? তিনি যা বলেছেন, তা শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে। তিনি এসব বললে মানুষ কী মনে করবে?

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, এখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অপরাধেরই বিচার হবে না। আইনে বলা আছে, আইন হওয়ার আগে-পরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে। তখন ব্যারিস্টার কাজল বলেন, এই ট্রাইব্যুনালের বিচার সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। তাই বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল বলেন, বাইরে আলোচনা হয় যে মুক্তিযোদ্ধাদের এখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আরে, আমরাও তো মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছি। আমার পরিবারে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ‍দিয়েছি, কোন ব্রিজ ভাঙতে হবে দেখিয়ে দিয়েছি, সহযোগিতা করেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা না, যারা লন্ডনে ছিলো তারা মুক্তিযোদ্ধা? কিন্তু আমরা কখনো এগুলো বলি না। এদেশে কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে না। কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের টানবেন না।

ফজলুর রহমানকে উদ্দেশ করে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, গত ১৫ বছর দেখেছি, আপনি কত অন্যায় আর অবিচারের শিকার। হঠাৎ কেন এমন ইউটার্ন নিলেন? এসময় ফজলুর রহমান বলেন, আমি আপনাদের এত সম্মান করি, আল্লাহর পরেই আপনাদের প্রতি আমার সম্মান। আমার বয়স ৭৮ বছর। ওরকম কথা জীবনে কখনো বলিনি।

ট্রাইব্যুনাল আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা সিনিয়র আইনজীবী, আমরা আশা করি আপনারা বিচার বিভাগকে দিকনির্দেশনা দেবেন। ভালো-মন্দ দেখবেন। কোনো ব্যত্যয় হলে সরকারকে বলবেন, প্রধান বিচারপতিকে বলবেন। যেখানে বলা দরকার, সেখানে বলবেন।

এ পর্যায়ে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, টকশোতে গেলে যা বলতে চাই না, অনেক সময় তাও মুখ থেকে বের করে ফেলা হয়। এখন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আর সমাজে সম্মানটা পাওয়া যাওয়া না। ফজলুর রহমান ও রকম কথা বলবেন, তা কি বিশ্বাসযোগ্য? আদালত সবার ওপরে। বিচার বিভাগ না থাকলে রাষ্ট্র বরবাদ হয়ে যাবে। তারপরও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন।

পরে ফজলুর রহমানের উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শুভকামনা থাকলো। আরও অনেকদিন বেঁচে থাকেন।

এসময় শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনাল মানেন না বলে টেলিভিশনের এক টক-শোতে বলেছিলেন উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর জেরে গত ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ফজলুর রহমানকে তার একাডেমিক ও বার কাউন্সিল সনদ নিয়ে সশরীর হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। আজ তার হাজিরার দিন ধার্য ছিল।

এফএইচ/একিউএফ/এমএস