অভিজাত ১৩ ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশ
রাজধানীর ঢাকা-উত্তরা ক্লাব ও দেশের অভিজাত ১৩টি ক্লাবসহ সারা দেশে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দ্রুত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া এবং জুয়া খেলা আইন আরও যুগোপযোগী করার কথা বলেছেন আদালত। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঢাকা ক্লাবসহ দেশের বিভিন্ন শহরের ১৩টি অভিজাত ক্লাবে জুয়া খেলা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন- ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. দেলোয়ার হোসেন ও মো. সেলিম আজাদ। ১৩ ক্লাবের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, ‘আদালত আরও বলেছেন, আজকের এ আদেশের পর থেকেই এটি কার্যকর হবে’।
তিনি জানান, সারা দেশে টাকা বা অন্য কিছুর বিনিময়ে তাস, ডাইস, হাউজি খেলাসহ সবধরনের জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে সকল ক্লাবকে ‘পাবলিক প্লেস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, ক্লাবসহ জনসমাগম স্থানে জুয়ার উপকরণ পাওয়া গেলে তা জব্দ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ধরনের খেলার অনুমতি দাতা, খেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত বলেছেন, যেসব খেলার ফলাফল দক্ষতার বদলে ‘চান্স’ বা ভাগ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়, সেগুলোই জুয়া খেলা। হাউজি, ডাইস, থ্রি কার্ড, ফ্লাস, ওয়ান টেনসহ এ জাতীয় অন্যান্য খেলা দক্ষতার পরিবর্তে ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল। আইনে এসব খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব খেলার আয়োজন করা অপরাধ। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত, তারা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী।
আদালত বলেন, ১৮৬৭ সালের জুয়া আইনে ঢাকা মহানগরীর বাইরে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই আইনে সাজার পরিমাণ খুবই নগন্য। মাত্র ২০০ টাকা জরিমানা ও ৩ মাসের কারাদণ্ড। এই আইন সংশোধন করে সাজার পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
আদালত বলেন, ঢাকা মহানগরীর ভিতরে জুয়া খেললে জুয়া আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুয়া আইন বৈষম্যমূলক। কারণ সংবিধানেই বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান।
আদালত বলেন, অপরাধ অপরাধই। এখানে ধনী ও গরিবের বৈষম্যর সুযোগ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি মনে রাখতে হবে।
ব্যারিস্টার রেদওয়ান আহমেদ রানজীব বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ-১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট-১৮৬৭ অনুযায়ী জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইসঙ্গে সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদে সরকারকে গণিকাবৃত্তি (পতিতাবৃত্তি) ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ তখন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রিট আবেদন করা হয়। এই রিট আবেদনে আদালত জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করেছেন।
ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এই রায় দেখার পর তা নিয়ে ঢাকা ক্লাব কর্তৃডক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে খেলাগুলো ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল সে খেলাগুলো জুয়া হিসেবে ঘোষণা করে অবৈধ করা হয়েছে। যে ক্লাবগুলোকে প্রাইভেট প্লেস বলা হচ্ছিল সেগুলোকে পাবলিক প্লেস বলা হয়েছে। এই ক্লাবগুলোতে সদস্যদের সাথে বহিরাগতরাও সে ক্লাবগুলোতে যেতে পারে।
ফলে যে নামেই অবিহিত করা হোক না কেন, নিপুন খেলা, চরচরি, ডাইস এক থেকে দশ, হাউজি, থ্রি কার্ড ইত্যাদি যে খেলাগুলো ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল, দক্ষতার উপর নয় সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আর রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেখানেই তারা এগুলো পাবে দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করবে। এই রায়টি সারা দেশের জন্যই প্রযোজ্য’।
এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘জুয়া আইনে জুয়ার সংজ্ঞায় পাবলিক প্লেসের কথা কবরা হয়েছে। অর্থাৎ, পাবলিক প্লেসে হলে সে খেলাটা জুয়া হবে। ক্লাবগুলো দাবি করে আসছিল ক্লাব হচ্ছে প্রাইভেট প্লেস। কিন্তু আদালত রায়ে ক্লাবগুলোও পাবলিক প্লেস হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ফলে এতদিন ক্লাবগুলোতে বিভিন্ন খেলা চলে আসলেও অর্থের বিনিময়ে বা ভাগ্যের উপর নির্ভরশীল কোনো খেলা এখন থেকে আর কেউ খেলতে পারবে না।’
২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা কেন অবৈধ হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অন্য ক্লাবগুলো হলো- গুলশান ক্লাব, বনানী ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব ঢাকা, ঢাকা লেডিস ক্লাব, ক্যাডেট কলেজ ক্লাব গুলশান, চিটাগাং ক্লাব, চিটাগাং সিনিয়র্স ক্লাব, নারায়ণঞ্জ ক্লাব ও খুলনা ক্লাব।
রুলে জুয়া জাতীয় অবৈধ ইনডোর গেম যেমন- কার্ড, ডাইস ও হাউজি খেলা অথবা এমন কোনো খেলা যাতে টাকা বা অন্য কোনো বিনিময় হয় তা বন্ধের নির্দেশনা কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চান আদালত।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার ঢাকা, খুলনা ও সিলেট এবং র্যাবের মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও নারায়ণগঞ্জকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এবং পাবলিক গেম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭ অনুযায়ী কোনো প্রকার জুয়া খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। একই সঙ্গে সংবিধানের ১৮ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারকে পতিতাবৃত্তি ও জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা ক্লাবসহ দেশের ১৩টি ক্লাবে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলা বন্ধে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। পরে ওই দিন রায় ঘোষণার জন্য ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) দিন ধার্য করেন। পরে রায়ের দিন পিছিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) ধার্য করেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/এমএআর/পিআর/এমআরএম
সর্বশেষ - আইন-আদালত
- ১ টয়োটা বাংলাদেশের এমডিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে
- ২ শতাধিক গুম-খুনের অভিযোগে জিয়াউল আহসানকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে
- ৩ প্রধান আসামি ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির ফের ৫ দিনের রিমান্ডে
- ৪ নিষিদ্ধ সংগঠনের পোস্টার লাগানো ইস্ট-ওয়েস্ট শিক্ষার্থী রিমান্ডে
- ৫ আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলা বিচারিক আদালতে পাঠানোর আদেশ