ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: খুলনার ৯ আসামির পক্ষে প্রথম সাক্ষ্য

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় খুলনার ডুমুরিয়ার শেখ আব্দুর রহিমসহ ৯ জনের পক্ষে প্রথম সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৫ মার্চ দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শেখ মুশফেক কবীর বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার শেখ মুশফেক কবীর। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজি এম এইচ তামিম ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।

মামলায় ১১ আসামিদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। বাকি ৯ জনের মধ্যে একজন পলাতক। আব্দুর রহিম জামিন পাওয়ায় এখন কারাগারে সাতজন রয়েছেন বলে জানান আইনজীবীরা।

এর আগে ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আসামি শেখ আব্দুর রহিমের জামিন মঞ্জুর করেন। আইনজীবী জানান, ২০১৭ সালের এপ্রিলে আব্দুর রহিম গ্রেফতার হয়েছেন। ২০১৮ সালে তিনি কারাগারে স্ট্রোক করেছিলেন। কারও ওসাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। তবে তিনি নিজ বাড়িতে থাকবেন। কোনো সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না। আর প্রতি ধার্য তারিখে তিনি আদালতে হাজির হবেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ১৯৭১ সালের ১৮ মে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া গ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা আনু মোল্লা ওরফে আজিজ শেখ, মজিদ বিশ্বাস, সাহেব আলী, শামসুল মোল্লা, ইমাম শেখ, আমজাদ সরদার, আব্দুল লতিফ মোড়ল ও কাওসার শেখসহ নয়জনকে ধরে নির্যাতন করতে করতে রানাই এলাকার বকুলতলা এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের গুলি করে হত্যার পর মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।

২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর খুলনার ডুমুরিয়ার আব্দুর রহমানসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। মামলার অন্য ১০ আসামি হলেন- সামছুর রহমান গাজী ওরফে মেজো ভাই (৮২), মো. ওমর আলী ফকির (৭০), জাহান আলী বিশ্বাস (৬৭), মো. আক্কাস সরদার (৬৮), নাজের আলী ফকির (৬৫), মো. শাহাজাহান সরদার (৭৫), আব্দুল করিম শেখ (৬৫), আবু বক্কার সরদার (৬৭), মো. রওশন গাজী ওরফে রওশন মল্লিক (৭২) ও মো. সোহরাব হোসেন সরদার ওরফে মুহাম্মদ আব্দুল হামিদ ওরফে খুলনার হুজুর (৬২)।

প্রথমে এ মামলায় আসামি ছিল ১১ জন। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। এখন আসামি আছেন ৯ জন। এর মধ্যে একজন পলাতক। একজন জামিনে বাকিরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন বলে হান্নান খান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এ মামলা খুলনার ডুমুরিয়া থানার খর্নিয়া ইউনিয়নের। আসামিরা খর্নিয়া ইউনিয়ন পরিষদ অফিস দখল করে রাজাকার ক্যাম্প করেছিল। এ মামলার আসামির প্রত্যেকেই খুলনার রাজাকারদের প্রশিক্ষণ (আনসার ক্যাম্প) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী রাজাকারদের যে তালিকা করেছিল, সেখানেও তাদের নাম আছে। একাত্তরে ডুমুরিয়া থানার ওই এলাকায় বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে আসামিদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত সংস্থার প্রধান সমম্বক আব্দুল হান্নান খান বলেন, ১৯৭১ সালে আটক, অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হচ্ছে এ মামলার সব আসামির বিরুদ্ধে। আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় ২২ জনকে হত্যা করে। ৫৬-৫৭টি বাড়ির মামলার লুট করে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় খুলনার আনসার ক্যাম্প দখলে নিয়ে তারা রাজাকারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প করেছিল। তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

হেলাল উদ্দিন বলেন, এ মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। তদন্তকালে বিভিন্ন ঘটনায় ৪৮ জনের জবানবন্দি নেওয়া হয়ছে। এছাড়া তিনজনকে জব্দ তালিকার সাক্ষী করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৫২ জন সাক্ষীর তালিকা দেওয়া হয়েছে ৭৩০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনে।

গ্রেফতার আসামিরা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শেখ আব্দুর রহিম, সামছুর রহমান গাজী ও সোহরাব হোসেন সরদার গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

এফএইচ/এএএইচ/এএসএম