গরমে কালো কোট বাধ্যতামূলক না করতে ২০ আইনজীবীর আবেদন
প্রতীকী ছবি
অসহনীয় গরমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় প্রতিবছরের মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত আইনজীবীদের কালো কোট পরা ‘ঐচ্ছিক’ নির্ধারণ বা বাধ্যতামূলক না করার আবেদন জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ২০ আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান বরাবর এই আবেদন করা হয়েছে।
আবেদনে আইনজীবীরা উল্লেখ করেছেন, আইনজীবী হিসেবে পেশায় যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক নির্ধারিত পোশাক পরিধান করতে হয়। যার ফলে বছরের সব মাসেই নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে কালো কোট পরিধান করতে হয়। অথচ, বাংলাদেশ একটি গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। প্রতি বছরের মার্চ থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত উচ্চমাত্রার উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশের আইনজীবীরা অসহনীয় শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট সহ্য করে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এতে আরও বলা হয়, সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা সিইজিআইএসের হিসেবে, ১৯৬১ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে আমাদের দেশের তাপমাত্রা বেড়েছে শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ১৯৯১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর তাপমাত্রা বেড়েছে গড়ে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, আগের তিন দশকের তুলনায় গত তিন দশকে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এর প্রায় সাড়ে চারগুণ।
‘আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত পোশাকের মধ্যে কালো কোট মূলত শীতকালীন পোশাক। কালো কোটের কারণে অসহনীয় গরম সহ্য করতে হয়। এছাড়া গাঢ় রঙের পোশাক অতিরিক্ত তাপ শোষণ করে। তাই গরমের সময় এ ধরনের কাপড় এড়িয়ে চলাই ভালো।’
আবেদনে আইনজীবীরা আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অতিরিক্ত উষ্ণ আবহাওয়ায় কালো কোট পরিধানের কারণে অনেক আইনজীবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও প্রচণ্ড গরমে আইনজীবীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েও সেবামূলক মহান এই পেশায় নিজেদের নিয়োজিত রেখে চলেছেন। ফলে এ বিষয় স্পষ্ট যে, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় আইনজীবীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটছে এবং জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করা হচ্ছে, আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য শফিউল আলম (সদস্য নং- ২৫৬৯৪) মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দুইজন নাবালক সন্তান রেখে হিটস্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
‘আবার কখনো কখনো দেখা গেছে, তীব্র গরমে কালো কোট পরিধান করে অনেক আইনজীবী আদালতে যেতে পারেন না। ফলে অনেক আইনজীবী পেশাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া যেসব আইনজীবী পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং আর্থিক প্রয়োজনে তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে নিয়মিত পেশা পরিচালনা করছেন, তারাও ধীরে ধীরে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। শুধু কালো কোট বাধ্যতামূলকভাবে পরিধান করার কারণে উদ্ভূত এই সমস্যা থেকে এখনই পরিত্রাণ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং মানবিক তথা সময়ের প্রয়োজন।’
তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় প্রতি বছরের মার্চ থেকে অক্টেবর মাস পর্যন্ত আইনজীবীদের জন্য কালো কোট পরিধান ঐচ্ছিক হিসেবে নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আবেদনকারীরা হলেন- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান, মো. মহসিন কবির, তানজিলা রহমান জুঁই, সুবীর নন্দী দাস, জেসমিন আখতার, ফারজানা ইসলাম, নিশাত ফারজানা, চট্টগ্রামের জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য তানিয়া বেগম, মুন্সিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সারমিন আক্তার, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পূজা বিশ্বাস, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ভূঁইয়া, মো. আইনুল ইসলাম, মাহমুদা আহমেদ নিলা, সামিনা রহমান, আসমা উল হুসনা, নাশিদুস জামান, কে এম আশরাফ রাব্বী, তানজিলা আহমেদ লিসা এবং ইফাত হাসান শাম্মী।
এফএইচ/কেএসআর/এএসএম