ফরিদপুর শেখ মুজিব মেডিকেলের শিক্ষার্থী মাহিরের মাইগ্রেশন স্থগিত
ফাইল ছবি
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মাইনুল এহসানকে (মাহির) কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন বা বদলির আদেশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
রিটের শুনানি নিয়ে ছয় মাসের জন্য মাইগ্রেশন স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তার বদলির আদেশ কেন বেআইনি ও আইনি কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা চিকিৎসা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ আটজনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে রোববার (১৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. খাইরুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তাসমিয়া প্রধান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আদেশের বিষয়ে আবেদনকারী আইনজীবী তাসমিয়া প্রধান বলেন, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ছাত্র মাইনুল এহসানকে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে বেআইনিভাবে মাইগ্রেশন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ছাড়পত্র পাঠানো হয়। পরে ২ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) ডা. মুজতাহিদ মুহাম্মদ হোসেনের সই করা অফিস আদেশে মাহিরকে মাইগ্রেশন করা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন বলা আছে, সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির জন্য নির্ধারিত তারিখ শেষে শূন্য আসনের বিপরীতে ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের মাইগ্রেশন আবেদন, মেধাস্থান ও মাইগ্রেশন আবেদনে উল্লিখিত কলেজ পছন্দ অনুযায়ী সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরপর সর্বোচ্চ চারবার কলেজ পরিবর্তনের (অটো মাইগ্রেশন) সুযোগ পাবে। তবে চতুর্থ মাইগ্রেশন ক্লাস শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রত্যেক মাইগ্রেশন শেষে প্রাপ্ত শূন্য আসনে যে কোটা থেকে আসন খালি হবে সেই কোটার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে মেধাক্রম ও পছন্দক্রম অনুসারে পূরণ করা হবে।
ওই আইনে আরও বলা হয়েছে, অটো মাইগ্রেশন সম্পন্ন করে চূড়ান্তভাবে ভর্তি শেষের পর অনুচ্ছেদ ৬(১) এ বর্ণিত নিয়ম ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীকে ইন্টার্নশিপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই ভর্তিকৃত সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিটে থেকে অন্য কোনো মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, ডেন্টাল ইউনিটে বদলি করা যাবে না।
আইনজীবী তাসমিয়া প্রধান বলেন, মাহিরকে মাইগ্রেশন দেওয়ার আগে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ কিংবা চিঠি দেওয়া হয়নি। এ কারণে সংক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই মাইগ্রেশনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ১১ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট করেন মাহির।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত মাইগ্রেশনের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মাহিরের বদলির আদেশ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
এর আগে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন মাইনুল এহসান মাহি। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল এক শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করার অভিযোগে ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে জানান। এরপর এ ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ দেখা হয়।
পরে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা চিঠিতে মাহিরকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এরপর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ মাহিরকে মাইগ্রেশন দিয়ে কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজে পাঠাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ছাড়পত্র পাঠান। এরই ধারাবাহিকতায় ২ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মাহিরকে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন দিয়ে আদেশ জারি করে।
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম