অ্যাটর্নি জেনারেল
বিচার বিভাগ ধ্বংসের দায় সাবেক দুই প্রধান বিচারপতির
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন-ফাইল ছবি
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসহ বিচার বিভাগ ধ্বংসে সাবেক দুই প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দায়ী করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদসহ বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে আবারও ফিরলো নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা।
রায়ের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। এসময় তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাসহ বিচার বিভাগ ধ্বংসে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের পর আরেক সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দায়ী।’
এদিকে রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনী ছিল সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংক্ষিপ্ত রায়ের পরিপন্থি। রায়ে আদালত বলেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা কোর্ট যখন বলছেন অবৈধ, তার মানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বৈধ। আর ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে সাতজন বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে দুটি নির্বাচন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাতজন বিচারপতির মধ্যে পরবর্তীতে তিনজন পল্টি মেরেছিলেন। জ্ঞানপাপী একজন বিচারপতি ছিলেন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নাম। তিনি মূল রায় ঘোষণার ১৭ মাস পর লিখিত রায় দেন। সেখানে উনি রায় দিলেন, পরবর্তী দুটি নির্বাচন হবে তবে পার্লামেন্ট ঠিক করবে কোন ফরমেটে হবে। বিচাপতি খায়রুল হকের সাথে নাম মেলালেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। উনারা বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। উনাদের কারণে বাংলাদেশে আজ গণতন্ত্র নির্বাসিত। উনাদের সাজা হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসায় কার অধীনে নির্বাচন হবে, এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এই সরকার যদি ১৩ অ্যামেন্ডমেন্টের (ত্রয়োদশ সংশোধন) রায়ের পরে আমরা দেখি, অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকার কি সেটা করতে পারবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘কেন পারবে না? অবশ্যই পারবে।’
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্য নতুন সরকার গঠন করতে হবে নাকি অন্তর্বর্তী সরকারকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এই (অন্তর্বর্তী) সরকার রিনেমড (নতুন নাম) হবে। যেমন, জেলা ও দায়রা জজের নাম শুনেছেন। একই ব্যক্তি যখন সিভিল মামলা করেন, তখন তাকে বলা হয় জেলা জজ। একই ব্যক্তি যখন ক্রিমিনাল মামলা করেন, তখন তাকে বলা হয় দায়রা জজ।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার প্রক্রিয়া কেমন হবে, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সেটা সুপ্রিম কোর্ট নির্ধারণ করবেন।’ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আজকের রায়ে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। ওইটার (অন্তর্বর্তী সরকার) সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই।’
রায় ঘোষণার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরাটা রিটকারী পক্ষ অবৈধ ঘোষণা দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট পুরোটা অবৈধ বলেননি। তবে পুরোট অবৈধ বলার মতো উপাদানের কথা উনারা বলে গেছেন। অনুচ্ছেদ ৭ক ও ৭খ এ দুটো অবৈধ। এটা এমনভাবে ধরে নিতে হবে যে এটা আইনে ছিল না। সংবিধানে এটা ছিল না এভাবে হবে।’
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করাটা অবৈধ হয়েছে। এখানে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েছে। উনারা রেফারেন্স হিসেবে বলেছেন, গত তিনটি নির্বাচন কীভাবে হয়েছে এবং কীভাবে দেশের গণতন্ত্র নির্বাসিত হয়েছে। কীভাবে আইনের শাসন ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। কীভাবে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কীভাবে সংবিধানের মূলকাঠামোতে আঘাত করা হয়েছে।’
এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম