ত্বকের যত্নে দই

সানজানা রহমান যুথী
দই শুধু একটি স্বাস্থ্যকর খাবার নয়, আপনার ত্বকের যত্নে এটি হতে পারে চমৎকার একটি প্রাকৃতিক উপাদান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ তাদের রূপচর্চার অংশ হিসেবে দই ব্যবহার করে আসছে। এর পুষ্টিগুণ এবং প্রাকৃতিক নিরাময় ক্ষমতার জন্য দই ত্বকের নানা সমস্যার সহজ ও নিরাপদ সমাধান হিসেবে বিবেচিত।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
দইয়ে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন ও প্রোবায়োটিক উপাদানগুলো ত্বককে পুষ্টি দেয়, মৃদুভাবে এক্সফোলিয়েট করে এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা যায় অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
১. প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর
দই একটি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে ফেলে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। এটি অন্যান্য রাসায়নিক এক্সফোলিয়েটরের মতো কঠিন নয়, বরং অনেক বেশি মৃদু, তাই এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্যও নিরাপদ।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
মৃত কোষ সরানোর ফলে ত্বকের ছিদ্রগুলো পরিষ্কার হয় এবং ত্বক হয় মসৃণ ও উজ্জ্বল।
২. ত্বককে আদ্র ও ময়েশ্চারাইজ করে
শুষ্ক ও খসখসে ত্বকের জন্য দই একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা প্রোটিন ও চর্বি ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা যোগায় এবং ত্বককে নরম ও কোমল করে।
বিজ্ঞাপন
শীতকালে যখন ত্বক বেশি শুকিয়ে যায়, তখন দইয়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করলে তা ত্বককে সুস্থ ও মসৃণ রাখে।
৩. রোদে পোড়া ও ত্বকের জ্বালা প্রশমনে সাহায্য করে
দইয়ের প্রাকৃতিক শীতলীকরণ ও প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে, যা রোদে পোড়া ত্বক, চুলকানি বা ত্বকের জ্বালাভাব দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা জিঙ্ক ও প্রোবায়োটিক ত্বককে প্রশমিত করে, লালচে ভাব কমায় এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
বিজ্ঞাপন
ঠান্ডা দই সরাসরি রোদে পোড়া জায়গায় লাগালে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়।
৪. ব্রণ ও পিম্পল কমাতে সাহায্য করে
দইয়ের প্রোবায়োটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা জিঙ্ক প্রদাহ হ্রাস করে এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখে, যাতে নতুন ব্রণ না হয়।
নিয়মিত দই ব্যবহার করলে ব্রণের প্রবণতা কমে যায় এবং ত্বক হয় পরিষ্কার ও প্রাণবন্ত।
বিজ্ঞাপন
৫. দাগ ও রঙের তারতম্য হ্রাস করে
রোদে পোড়া ত্বক, ব্রণের দাগ বা বয়সজনিত কালো দাগ দইয়ের প্রাকৃতিক ব্লিচিং গুণে ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যায়। এতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের রঙের তারতম্য কমিয়ে সমান স্কিন টোন তৈরি করতে সাহায্য করে।
হলুদ, মধু বা লেবুর রসের সঙ্গে দই মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করলে এই দাগ দূর করার ক্ষমতা আরও বাড়ে।
৬. বয়সের ছাপ কমায়
দইয়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ত্বকের কোষে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেল দূর করে এবং বয়সের ছাপ পড়া কমায়। এটি কোলাজেন উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে, যা ত্বককে টানটান রাখে।
বিজ্ঞাপন
নিয়মিত দই ব্যবহার করলে বলিরেখা কমে, ত্বক হয় সতেজ ও প্রাণবন্ত।
৭. ত্বকের সংক্রমণ ও চর্মরোগ নিরাময়ে সহায়ক
দইয়ের অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ত্বকের সংক্রমণ, ফাংগাল ইনফেকশন বা চর্মরোগে উপকারী। প্রোবায়োটিকস ত্বকের প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
যদিও গুরুতর ত্বক সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, তবুও দই একটি প্রাকৃতিক সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে কার্যকর।
বিজ্ঞাপন
যেভাবে দই ব্যবহার করবেন
ত্বকের যত্নে দই ব্যবহার করা খুবই সহজ। জেনে নিন কয়েকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি-
দই ফেসপ্যাক: মুখ পরিষ্কার করে শুধুমাত্র দই মুখে লাগিয়ে ১৫–২০ মিনিট রাখুন, এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
দই ও মধুর মাস্ক: ১ চামচ দইয়ের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে লাগান। এটি ত্বকে উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা আনে।
দই ও হলুদ: এক চিমটি হলুদের সঙ্গে দই মিশিয়ে ব্রণ ও দাগের জন্য ব্যবহার করুন।
দই ও ওটমিল স্ক্রাব: দইয়ের সঙ্গে ওটমিল মিশিয়ে মৃদু এক্সফোলিয়েটিং মাস্ক তৈরি করা যায়।
তবে অবশ্যই চিনি বা স্বাদযুক্ত দই ব্যবহার করবেন না। সবসময় সাধারণ, ফ্যাটযুক্ত টকদই ব্যবহার করুন।
যদিও দই সাধারণত নিরাপদ, তবুও প্রথমবার ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করা উচিত, বিশেষ করে আপনার ত্বক যদি অতিসংবেদনশীল হয়। ত্বকে ক্ষত থাকলে ব্যবহার না করাই ভালো।
ত্বকের যত্নে দই একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও প্রাকৃতিক সমাধান। এটি ত্বককে করে উজ্জ্বল, কোমল এবং স্বাস্থ্যকর। বাজারের কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্টের বদলে দইয়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদান বেছে নেওয়া নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদে উপকারী। আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে চান, তবে দই আপনার রূপচর্চার নিয়মিত অংশ হওয়া উচিত।
তথ্যসূত্র: হেলথ লাইন ডট কম
এএমপি/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন