ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

অধরা মাধুরী পরমা | প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১৫ জুন ২০২৫

একজন পুরুষ যখন কন্যা-সন্তানের বাবা হন, তখন তার জীবন ও চিন্তার জগৎ যেন বদলে যায়। সন্তানের বাবা-মা হওয়া নিঃসন্দেহে যে কোনো দম্পতির জন্য বিশেষ ঘটনা। তবে কন্যা-সন্তানের বাবা হওয়াকে বিশেষায়িত করা হচ্ছে কেন? আলাদা কী আছে এই সম্পর্কে?

একজন পুরুষের জীবনের প্রথম ও সবচেয়ে কাছের নারীমূর্তি তার মা, কারো কারো ক্ষেত্রে বোন, তারপর স্ত্রী। প্রতিটি সম্পর্কেরই রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। ওই পুরুষটি যখন একজন কন্যা-সন্তানের বাবা হয়ে ওঠেন, তখন তার জীবনের সবচেয়ে কাছের নারীদের সঙ্গে গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলোর একটি সমন্বয় ঘটে। কন্যার মাঝে থাকে তার স্ত্রীর ছায়া, বোনের মতো বন্ধুত্বের টান, আর মায়ের মতো স্নেহ আর শাসনের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। কন্যার জন্ম থেকে একজন বাবা মেয়েটির আজীবনের নিরাপত্তা ও ভালো থাকার দায়িত্ব নিয়ে নেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বয়সের সঙ্গে বাবা-মেয়ের সম্পর্কের রূপ বদলাতে থাকে। কন্যা প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও বাবার কাছে যেন সে থেকে যায় ছোট্ট এক পুতুলের মতোই। এমন অনেক আবদার-আহ্লাদ আছে, যা কন্যারা শুধু তার বাবার কাছেই করে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নিজেকে ‘বাবার রাজকুমারী’ বা ‘পাপাস্ প্রিন্সেস’ পরিচয় দিতে ভালোবাসেন। এ নিয়ে নারীদের অনেক উপহাসের শিকার হতে হয়। অন্যদিকে ‘পাপাস্ প্রিন্সেস’-এর অনুভূতিটা একবার ভাবুন! যে কেউ উপলব্ধি করবেন যে, কতটা নির্ভরতার জায়গা থেকে সেই মেয়েটি নিজেকে ‘বাবার রাজকুমারী’ পরিচয় দেয়! আসলে প্রতিটি বাবার কাছেই তার মেয়ে এক একজন রাজকুমারী।

বাবা-মেয়ের এই সম্পর্ক নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন দেশ-বিদেশের মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা। চলুন জেনে নিই কেন বাবা-মেয়ের সম্পর্ক বিশেষ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

১. সম্পর্কের ভিত্তি
মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ড. লিন্ডা নিলসন তার ‘পিতা-কন্যার সম্পর্ক: সমকালীন গবেষণা ও প্রসঙ্গ’ (২০১২) প্রবন্ধে বলেছেন যে – পিতার সঙ্গে কন্যার সম্পর্ক সন্তানের জীবনের প্রথম পুরুষ-নারী সম্পর্ক, যা ভবিষ্যতের আন্তঃলিঙ্গ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। অর্থাৎ পিতার সঙ্গে একটি মেয়েশিশুর সম্পর্কের ভিত্তিতে সে জগতে নারী-পুরুষের বিভিন্ন সম্পর্ক দেখতে ও বুঝতে শেখে। এই সম্পর্ক থেকে সে শেখে যে, মানুষের কাছে কেমন ব্যবহার আশা করতে হবে, সে কতটা সম্মানের যোগ্য, কীভাবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, অন্য পুরুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
অনেক সংস্কৃতিতে মেয়েদের জীবনের প্রথম রোল মডেল হয়ে থাকেন তার বাবা। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে মেয়েরা বাবার সমর্থন পায়, তারা কর্মক্ষেত্রে বেশি আত্মবিশ্বাসী হন। অর্থাৎ কন্যাসন্তানের আত্মবিশ্বাস তৈরির পেছনে বাবার শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে।

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

বিজ্ঞাপন

৩. মনস্তাত্ত্বিক গঠন
অ্যাটাচমেন্ট থিওরি বলছে, শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে যে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তা ভবিষ্যতের সব সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। মনোবিজ্ঞানী জন বোল্বি বলেন, যদি বাবার সঙ্গে মেয়েশিশুর নিরাপদ ও বিশ্বস্ত সম্পর্ক থাকে, তবে তারা বড় হয়ে সুস্থ প্রেম-বন্ধুত্ব গড়তে পারে। কারণ, বাবার সঙ্গে ভালো যোগাযোগ তাদের আত্মবিশ্বাস, নিরাপত্তাবোধ ও বিশ্বাস শেখায়। এটি তাদের ভবিষ্যতে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক এড়াতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, ছোটবেলায় বাবার সঠিক সাপোর্ট নারীদের জন্য ইমোশনাল বেসিক তৈরি করে দেয়।

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

৪. পুরুষের সংবেদনশীলতা
‘ফাদার-ডটার ইমোশনাল এক্সপ্রেশন থিসিস’ অনুযায়ী, বাবারা সাধারণত মেয়েদের সামনে ছেলেদের তুলনায় আবেগ বেশি প্রকাশ করেন। গবেষণা বলে, বাবারা মেয়েদের সঙ্গে নরম আচরণ, স্নেহ ও সংবেদনশীল কথাবার্তা বলেন বেশি – যা ছেলেসন্তানদের ক্ষেত্রে কম দেখা যায়। এর একটি কারণ হতে পারে, মেয়েরা সাধারণত আবেগ বোঝা ও প্রকাশে দক্ষ, তাই বাবাও সাড়া দেন। আবার মেয়েদের কাছে আবেগ প্রকাশ করাকে সমাজ বেশি গ্রহণ করে।

বিজ্ঞাপন

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক কেন আলাদা

৫. প্রাকৃতিক কারণ
গবেষণা বলে, বাবারা যখন মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান, তাদের শরীরে প্রোল্যাক্টিন (যত্নের হরমোন) বৃদ্ধি পায়। এটি তাদের স্নেহশীল ও সংবেদনশীল করে তোলে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সঙ্গে এই হরমোনের প্রতিক্রিয়া বেশি দেখা যায়, সম্ভবত মেয়েরা আবেগ প্রকাশে উৎসাহ দেয় বলে। এটা প্রাকৃতিকভাবে বাবাকে মেয়ের শারীরিক-মানসিক চাহিদা বুঝতে সাহায্য করে।

৬. আধুনিক পরিবর্তন
আধুনিক পিতৃত্বের ধারণা বদলেছে। বাবারা এখন শুধু সংসারের আর্থিক দিকটিই দেখেন না, বরং তাদের মেয়েদের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও সাফল্যেরও অংশীদার হন। গবেষণা বলে, যে বাবারা মেয়েদের সঙ্গে খোলামেলা সম্পর্ক রাখেন, তারা তাদের আত্মবিশ্বাস ও লক্ষ্য অর্জনে বেশি সফল। এটি লিঙ্গসমতা ও সুস্থ পারিবারিক সম্পর্কের একটি লক্ষণ।

বিজ্ঞাপন

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক এমন মধুর হলেও সব কন্যা পৃথিবীতে ভালো বাবা পায় না। অনেক সন্তান বাবার কাছেও শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হন, বৈষম্যের শিকার হন। কারণ জন্মদাতা হওয়া ও বাবা হয়ে ওঠা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি প্রক্রিয়া। প্রকৃতির সাধারণ নিয়মে জন্মদাতা হওয়া যায়, কিন্তু বাবা হয়ে উঠতে প্রয়োজন মানবিক মন ও অসাধারণ দায়িত্ববোধ। আজ (১৫ জুন) বাবা দিবসে সেই বাবাদের আত্মত্যাগ ও ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এএমপি/আরএমডি/জেআইএম

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন