সন্তানকে পিকনিকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন যে কারণে

পিকনিক শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে অফুরন্ত উচ্ছ্বাস, ভ্রমণের উত্তেজনা আর উৎসবের অনুভূতি। বাংলায় আমরা একে বনভোজন বা চড়ুইভাতি নামেও ডাকি। প্রতি বছর আজকের দিনে (১৮ জুন) বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক পিকনিক দিবস পালিত হলেও বাংলাদেশে এর আবেদন যেন একটু আলাদা।
কারণ পিকনিকের ধারণাটি কিন্তু আমাদের ধার করা। পিকনিকের ধারণার জন্ম ১৭শ শতকের ফ্রান্সে, ‘পিক-নিক’ নামে, যেখানে অভিজাতরা একত্রে খাবার ভাগ করে খেতেন। ব্রিটিশরা এটিকে বাগান পার্টি হিসেবে গ্রহণ করে এবং ভারতে নিয়ে আসে ঔপনিবেশিক আমলে। কলকাতা, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মিশনারি স্কুলগুলো প্রথমে এটিকে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ করে তোলে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তারপর ১৯৪৭ এর পরে স্কুল-কলেজের বার্ষিক পিকনিক একটি প্রথায় পরিণত হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে এটি এখন শুধু বিনোদন নয়, বরং সামাজিক বন্ধন ও শিক্ষার মাধ্যম। সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এই বার্ষিক পিকনিকের আয়োজন করে। কিন্তু বাবা-মায়েরা বরাবরই সন্তানকে এভাবে চোখের আড়াল করতে ভয় পান, তাই অনেক শিক্ষার্থীই এই বনভোজনে যাওয়ার অনুমতি পান না। অথচ পিকনিক শুধু আনন্দের জন্য নয়, আপনার সন্তান বাস্তব জীবনের অনেক পাঠ পাবে এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা থেকে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
জেনে নিন কোন কোন কারণে আপনার সন্তানকে পিকনিকে যেতে উৎসাহিত করবেন
১. দলগত কাজ ও নেতৃত্বের দক্ষতা
পিকনিকের প্রস্তুতি ও আয়োজনে শিক্ষার্থীরা টিমওয়ার্ক বা দলবদ্ধভাবে কাজ করতে শেখে। কে কী দায়িত্ব নেবে, কীভাবে সমস্যা সমাধান করা যায়– নিজেরা এ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে তাদের মধ্যে বাস্তব জীবনের দক্ষতা তৈরি হয়। সেই সঙ্গে যাদের মধ্যে ন্যাচারাল লিডারশিপ বা প্রকৃতি প্রদত্ত নেতৃত্বের গুণ আছে, তারা নিজেকে বুঝতে শেখে। অন্যরাও নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার শিক্ষা পায়।
বিজ্ঞাপন
২. আর্থিক ব্যবস্থাপনা
পিকনিকের জন্য টাকা জমানো, খরচের হিসাব রাখা ও বেঁচে যাওয়া টাকার ব্যবস্থাপনা করার মাধ্যমে সততা ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
৩. প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা
পিকনিকের মাধ্যমে তারা প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব বুঝতে পারে। সেই সঙ্গে কোন সময়ে কেমন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া উচিত, এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা, আবহাওয়া ইত্যাদির বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে।
বিজ্ঞাপন
৪. সামাজিক শিষ্টাচার
একসঙ্গে খাবার ভাগ করে খাওয়া, বড়দের সম্মান করা, সহপাঠীদের সহযোগিতা করার মতো আচরণগুলো স্বতস্ফূর্তভাবে শেখায় পিকনিক।
৫. জীবনকে গুছিয়ে নেওয়ার পাঠ
সময় ব্যবস্থাপনা, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ও সৃজনশীলতা শেখায় পিকনিক। পিকনিকের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া প্ল্যানিং স্কিল বাড়ায়। বই-খাতা থেকে দূরে প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটালে মানসিক চাপ কমে।
আবার খোলা পরিবেশে নতুন আইডিয়া আসে, যা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়।
বিজ্ঞাপন
পিকনিক শুধু আনন্দ নয়, জীবনবোধের শিক্ষা। পিকনিক আমাদের একসঙ্গে বাঁচতে, প্রকৃতিকে ভালোবাসাতে এবং জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে শেখায়। স্কুল-কলেজের পিকনিকের স্মৃতি আজীবন মনে থেকে যায়। তাই সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আপনার সন্তানকে অপূর্ব স্মৃতি তৈরি করার সুযোগ করে দিন।
এএমপি/এএসএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন