ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

স্পাইডার প্ল্যান্টের সহজ যত্ন

লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৫৩ পিএম, ১২ জুলাই ২০২৫

বর্তমানে ইনডোর প্লান্টের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এর মধ্যে বিশেষ স্থান দখল করেছে স্পাইডার প্ল্যান্ট। সবুজ পাতার সৌন্দর্য, সহজ পরিচর্যা এবং বাতাস পরিশোধনের ক্ষমতার জন্য এ গাছটি বাসা কিংবা অফিসের জন্য আদর্শ। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্পাইডার প্ল্যান্টের বৈশিষ্ট্য ও পরিচর্যা বিষয়ে-

যেমন দেখতে স্পাইডার প্ল্যান্ট

মাকড়সার মতো পাতার গঠন হওয়ায় একে স্পাইডার প্ল্যান্ট বলা হয়। এটি স্পাইডার আইভি বা রিবন প্ল্যান্ট নামেও পরিচিত। দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আদি নিবাস, বৈজ্ঞানিক নাম ক্লোরোফাইটাম কমোসাম।

স্পাইডার প্ল্যান্ট আকর্ষণীয় পাতার জন্য বেশ পরিচিত। বারান্দা, ডেস্ক বা পড়ার টেবিলের কোণায় রাখার উপযোগী হওয়ায় এটি অনেকের প্রিয়। যা বাতাসকে পরিশোধন করতেও সাহায্য করে। গাছটির সুদৃশ্য চিকন সবুজ পাতা ভ্যারাইটি ভেদে প্রায় বারো থেকে আঠারো ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। বসন্তে ছোট্ট সাদা ফুল ফোটে।

স্পাইডার প্ল্যান্টের সহজ যত্ন

উপযুক্ত পরিচর্যায় এই গাছ বছরের পর বছর টিকে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত স্পাইডার প্লান্টের ২০০ এর মতো ভ্যারাইটি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাত্র কয়েকটি ইনডোর বা ঘর রাখার গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

স্পাইডার প্ল্যান্টের প্রয়োজন উপযুক্ত স্থান

স্পাইডার প্ল্যান্ট হালকা রোদে ভালো থাকে। কড়া দুপুরের রোদে পাতা পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই সকাল বা বিকালের রোদ পেলে ভালো। খুব কম আলোতেও বাঁচে, কিন্তু এতে পাতা ঝুলে পড়ে ও সতেজতা কমে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত এক-দুই দিন আলোকিত স্থানে গাছটি রাখা উচিত। গাছটিকে বিভিন্ন সাইজের ঝুলন্ত টবে বেশ মানানসই দেখায়। তবে সমতল জায়গায় রাখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পাতাগুলো নষ্ট না হয়।

স্পাইডার প্ল্যান্টের মাটি

স্পাইডার প্ল্যান্টের জন্য ঝুরঝুরে মাটি উপযোগী। যা যেটা দিয়ে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারে। তাই দোআঁশ, মোটা লাল বালু এবং ভার্মি কম্পোস্ট দিয়ে মাটি প্রস্তুত করতে পারেন।

স্পাইডার প্ল্যান্টের সার

স্পাইডার প্ল্যান্টে সার দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। গাছের বেড়ে উঠার মৌসুম, অর্থাৎ বসন্ত ও গ্রীষ্মে প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর মাটিতে সামান্য ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে দিতে পারেন। অন্যান্য মাসগুলোতে মাসে একবার সার দিলেই হবে। এছাড়া প্রতি পনেরো দিনে একবার দুই লিটার পানিতে এক চা চামচ ইপসম সল্ট মিশিয়ে স্প্রে করলে করতে পারেন, যা পাতার জন্য বেশ উপকারী হয়। একইসঙ্গে এই পানি মাটিতে দিলে তা শেকড়ের বৃদ্ধিতে অনেক সহায়তা করে। তবে রাসায়নিক সার না দেওয়াই ভালো কারণ মাত্রা বেশি হয়ে গেলে গাছ মরে যেতে পারে।

স্পাইডার প্ল্যান্টের সহজ যত্ন

স্পাইডার প্ল্যান্টের পরিচর্যা

স্পাইডার প্ল্যান্ট খুবই কম যত্নে বেড়ে উঠতে পারে। আলো, পানি ও সারের সঠিক প্রয়োগে গাছ ঝলমলিয়ে ওঠে এবং অসংখ্য ছোট চারার জন্ম দেয়। স্পাইডার প্ল্যান্টের মাটি সবসময় হালকা ভেজা রাখতে হয়। বিশেষ করে গাছের বৃদ্ধির মাসগুলোতে। মাটি যেন সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে। এতে গাছে পচন ধরে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সব সময়ে পানি না দিয়ে সকালে বা বিকেলে একবার ভালোভাবে দিন। টবের নিচ দিয়ে যেন পানি বের হয়ে যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই বিশুদ্ধ ও কেমিক্যাল মুক্ত পানি দিতে হবে। যা গাছের জন্য উপকারী। এ ছাড়া প্রতিদিন অন্তত একবার গাছে পানি স্প্রে করে দিলে পাতাগুলো বেশ সজীব থাকে।

শীতকালে স্পাইডার প্লান্ট ডরম্যান্সি বা শীত ঘুমে চলে যায়। তখন নতুন পাতা গজায় না এবং কিছু শুকনো পাতা দেখা দিতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে গাছ মারা গেছে। শীত চলে গেলে আবার নতুন পাতা জন্মাবে।

স্পাইডার প্ল্যান্টের বংশবিস্তার

স্পাইডার প্ল্যান্টের শাখা-প্রশাখায় ছোট চারা জন্মায়, যেগুলো বেবি প্ল্যান্ট বা প্ল্যান্টলেট নামে পরিচিত। শিকড় বের হলে মূল গাছ থেকে আলাদা করে নতুন টবে রোপণ করা যায়।

স্পাইডার প্ল্যান্টের সহজ যত্ন

রোগবালাই

স্পাইডার প্ল্যান্ট সাধারণত রোগবালাইমুক্ত একটি গাছ। আলো, পানি ও সার সঠিক পরিমাণে দিলে গাছ সুস্থ থাকে এবং ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে কিছু সমস্যার দিকে নজর রাখা জরুরি। পাতা বাদামি হওয়া শুরু করলে তা কেটে দিলেই হবে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পাতার ক্ষতি হতে শুরু করে। তাই এ সময় গাছকে ছায়ার মধ্যে রাখতে হবে।

অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পঁচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ থেকে বাঁচতে অবশ্যই ভালো ড্রেনেজযুক্ত ঝুরঝুরে মাটি ব্যবহার করতে হবে এবং মাটির ওপরের ১ ইঞ্চি শুকনো হয়ে যাওয়ার পরেই পানি দেওয়া উচিত। কিছুদিন পরপর টবের উপরিভাগের কয়েক ইঞ্চি মাটি হালকাভাবে খুঁচিয়ে দেওয়া ভালো। এতে একদিকে শেকড় বৃদ্ধি বাড়ে, অন্যদিকে পোকামাকড় থাকলে সেটাও ধরা পড়ে।

যদি পাতার গায়ে সূক্ষ্ম মাকড়সার জাল দেখা যায় এবং পাতা নষ্ট হতে শুরু করে, তাহলে দ্রুত গতির পানি দিয়ে গাছটি ধুয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, সপ্তাহে একবার গাছে পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রয়োজনীয় মাত্রায় কীটনাশক স্প্রে করাও কার্যকর।

স্পাইডার প্ল্যান্টের সহজ যত্ন

স্পাইডার প্ল্যান্টের আরও দুই বিপদের নাম মিলিবাগ ও রুট মিলি। মিলিবাগ পাতার রস শুষে নিয়ে গাছ প্রাণহীন করে তোলে ও রুট মিলি একইভাবে শেকড়ের শক্তি কমিয়ে দেয়। পাতার গায়ে সাদা মিলিবাগ দেখলে যতদ্রুত সম্ভব সাবান পানি স্প্রে করতে হবে। সপ্তাহে কয়েকদিন স্প্রে করলেই হবে।

টবের মাটি খুঁচিয়ে দিয়ে সাদা কিছু দেখা গেলে বুঝতে হবে রুট মিলি হয়েছে। এ সমস্যা প্রতিকারে প্রয়োজনীয় মাত্রার কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে একবার করে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

মোহাম্মদ সোহেল রানা/এএমপি/এমএস

আরও পড়ুন