তথ্য ওভারলোড কি মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমানে আমাদের সবধরণের যোগাযোগের ‘ওয়ান স্টপ সলিউশন’-এ পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে অফিসের কাজ, আবার সংবাদ মাধ্যমে চোখ রাখা - সব কিছুই আমরা করছি ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামে।
তবে শুধুই কি কাজ? একবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকলে আমরা নানান রকমের পোস্টের ফাঁদে পড়ে যাই। একটার পর একটা কনটেন্ট দেখতে দেখতে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যায়, খেয়ালেই থাকেনা। কিন্তু প্রতিটা সেকেন্ডে এত এত তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে ঢুকে, যা স্বাভাবিক নয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘ মেয়াদে মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে ব্যাপক হারে। মাথায় প্রচুর তথ্যের এই ভিড় তৈরি করে তথ্যের ওভারলোড। মানুষের মস্তিষ্ক একটি অসাধারণ যন্ত্র, কিন্তু সব যন্ত্রের মতোই এরও একটি ধারণক্ষতা আছে। ধারণক্ষমতার বেশি তথ্য যখন আপনি নিতে থাকেন, তখন এই সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ করে যখন আপনার আশেপাশে এমন কিছু ঘটছে যা আপনাকে মানসিকভাবে গ্রাস করে রাখে। এমন কোনো পরিস্থিতিতে না বিষয়টি থেকে দূরে থাকা যায়, না এত তথ্যের ভার নেওয়া যায়।
এমন সময় নিজেকে এলোমেলো মনে হয়। অন্য বিষয়ে মনোযোগ কমে যায়। সেই সঙ্গে কোনো দুর্ঘটনা বা ট্র্যাজেডির তথ্য আপনাকে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড্ করে তুলতে পারে। তাই বলে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে কি আপনি নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখবেন?
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

না, বিষয়টি পরিস্থিতিকে অবহেলা করা নয়। বরং একজন সচেতন মানুষ হওয়ার পাশাপাশি নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার। তাই আজ (২২ জুলাই) বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবসে জেনে নিন মস্তিষ্কে তথ্য ওভারলোড বিষয়ে।
বিজ্ঞাপন
কীভাবে ইনফরমেশন ওভারলোড মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. ড্যানিয়েল লেভিটিন বলেন, `প্রতিদিন একজন মানুষ প্রায় ৩৪ গিগাবাইট তথ্য গ্রহণ করছে।’ এত তথ্য একসঙ্গে ঢুকে মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ভুল বেশি হয়, এবং আমরা সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছি।
এই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে প্রতি মুহূর্তে ব্রেকিং নিউজ, রিল, ট্র্যাজেডি আর হালকা বিনোদন একসঙ্গে ঢুকছে আমাদের মাথায়। এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো - ডিজিটাল ট্রমা - যেখানে আপনি ছিলেন না, তবু আপনি কষ্ট পাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা এখন ‘সেকেন্ডারি ট্রমা’র শিকার হচ্ছি। অর্থাৎ, আপনি কোনো জাতীয় দুর্ঘটনায় ছিলেন না, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এত ছবি, ভিডিও, সাক্ষাৎকার দেখেছেন যে মনে হচ্ছে আপনি সেখানেই ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এমন ট্রমা দুঃস্বপ্ন, উদ্বেগ, ঘুমের ব্যাঘাত এমনকি বিষণ্নতা পর্যন্ত তৈরি করতে পারে। শিশু-কিশোররা এতে আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
গতকাল (২১ জুলাই) মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পর থেকে কম বেশি সবাই এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ওই স্কুলে পড়েনা, এমন স্কুলগামী শিশুদের বাবা-মায়েরাও বিষয়টিতে ট্রমার শিকার। তাহলে কী করবেন এমন অবস্থায়-
১. 'ডিজিটাল ডায়েট' মেনে চলুন
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মোবাইল স্ক্রিনের বাইরে থাকুন। সকাল ও রাতে ঘুমের আগে-পরে ফোন গাতে নেওয়ার আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি রাখুন। কাজ ছাড়া খবর দেখা বা ভিডিও দেখা কমিয়ে আনুন।
বিজ্ঞাপন

২. ফোকাস বাড়াতে 'সিঙ্গেল টাস্কিং' করুন
একসঙ্গে অনেক কিছু করার অভ্যাস মনোযোগ কমায়। একবারে এক কাজ করুন, ধীরে ধীরে মনোযোগ ফিরবে।
৩. দিনে অন্তত একবার নিরবতা চর্চা করুন
শব্দবহুল জীবনে পাঁচ মিনিট চুপ করে বসাও মানসিক বিশ্রাম দিতে পারে। ধ্যান, নিঃশ্বাস অনুশীলন, বা শান্তভাবে হাঁটাহাঁটি করে মস্তিষ্ককে শান্ত হওয়ার সুযোগ দিন।
বিজ্ঞাপন
৪. মন খারাপ হলে স্ক্রিন নয়, মানুষ বেছে নিন
খারাপ খবর দেখে কষ্ট লাগলে সেটি পরিবার বা বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নিন। আবেগ চেপে রাখলে তা মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
তথ্য দরকার, জানার ইচ্ছে থাকা ভালো। কিন্তু অতিরিক্ত তথ্য, বিশেষ করে নেতিবাচক কনটেন্ট, আমাদের মস্তিষ্কে চাপ তৈরি করে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল জগতে থেকেও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারি।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, দ্য অর্গানাইজড্ মাইন্ড, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ্
বিজ্ঞাপন
এএমপি/এমএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
