ছোট এক বাটি মাখানার রয়েছে বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা
এক সময় বাঙালির বিকেলের নাস্তায় নিয়মিত থাকত ছোলা ভাজা, চিঁড়া ভাজা কিংবা মুড়ি। সময় বদলেছে, বদলেছে খাদ্যাভ্যাসও। স্বাস্থ্যসচেতনতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন অনেকের বিকেলের সঙ্গী হয়ে উঠেছে মাখানা। বাদাম বা চিঁড়ে ছেড়ে মাখানা বেছে নিচ্ছেন বহু মানুষ। আর তা একেবারেই অকারণে নয়।
মাখানা স্বাস্থ্যের জন্য দ্বিগুণ উপকার বয়ে আনে। এটি প্রোটিনে সমৃদ্ধ, ফলে শরীরের পেশি গঠনে ও শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেল, যা রক্তস্বল্পতা কমাতে, হাড় মজবুত রাখতে এবং হৃদ্যন্ত্রের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ফাইবার থাকায় হজম ভালো হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূত হয়।
ডায়াবেটিস থাকুক বা কোলেস্টেরলের সমস্যা-মাখানা প্রায় সবার জন্যই নিরাপদ ও উপকারী একটি খাবার। এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়ায় না। আবার খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
তাই সব বয়সের মানুষের ডায়েটেই অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে মাখানা। হালকা নাস্তা হিসেবে কিংবা স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস হিসেবে নিয়মিত মাখানা রাখলে শরীর পাবে পুষ্টি।

আসুনজেনে নিন মাখনাতে আর কী কী উপকার পাবেন-
১. হজম ক্ষমতা উন্নত করে
মাখানা হজম ক্ষমতা উন্নত করতে দারুণ কার্যকর। এতে থাকা পর্যাপ্ত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে। ফাইবার প্রোবায়োটিকের মতো কাজ করে, ফলে ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হয় এবং হজম প্রক্রিয়া আরও মসৃণ হয়। নিয়মিত মাখানা খেলে গ্যাস, অম্বল বা পেটের সমস্যার ঝুঁকিও কমে। তাই হজম ভালো রাখতে দৈনন্দিন ডায়েটে মাখানা রাখতে পারেন।
২. হার্টের জন্য উপকারী
হার্টের স্বাস্থ্যের জন্যও মাখানা বেশ উপকারী। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং হাই ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকি কমে। মাখানায় থাকা ফাইবার রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমাতে সহায়ক। পাশাপাশি এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখে। সব মিলিয়ে নিয়মিত মাখানা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর
মাখানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফেনোলিক যৌগ ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ একাধিক দীর্ঘমেয়াদী অসুখের ঝুঁকি কমে। এছাড়া মাখানায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানও থাকে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক এবং শরীরের ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে
মাখানা ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে।এতে ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা মানুষের জন্য এটি আদর্শ খাবার। মাখানার ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে বারবারক্ষু ধা পাওয়ার প্রবণতা কমে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে মাখানা খেলে ধীরে ধীরে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫. হাড় মজবুত করে
মাখানা ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা হাড়কে মজবুত রাখে এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত মাখানা খেলে হাড়ের দুর্বলতা কমে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়। পাশাপাশি এতে থাকা প্রোটিন হাড়ের পেশি ও শক্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
প্রতিদিন কী পরিমাণ মাখানা খাওয়া উচিত
মাখানা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। দিনে প্রায় ৩০ গ্রাম মাখানা খেলেই যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়, যা একটি ছোট বাটির সমান। কেউ এটি স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন, আবার সালাদ বা তরকারিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে বাজারে পাওয়া মসলা মাখানো মাখানা এড়িয়ে চলাই ভালো। চাইলে কাঁচা মাখানা শুকনো ভেজে অল্প লবণ ও গোলমরিচের গুঁড়া ছড়িয়ে খাওয়া যেতে পারে।
সূত্র: হেলথ লাইন, টাইমস অব ইন্ডিয়া
আরও পড়ুন
শরীর হাইড্রেটেড রাখে শিম
রাতের গ্লাসে এলাচ, সকালেই মিলবে ৫ উপকার
এসএকেওয়াই/