অল্প সময়ে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে পেঁয়াজ
ছবি: সংগৃহীত
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ, ডায়েট আর নিয়মিত ব্যায়ামের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অবাক করার মতো সত্য হলো, রান্নাঘরের খুব সাধারণ একটি উপাদান ‘পেঁয়াজ’, অল্প সময়ের মধ্যেই রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজে থাকা বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার যৌগ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে। তাই প্রতিদিনের খাবারে এই সহজ উপাদানটি যোগ করলেই শরীর পেতে পারে অতিরিক্ত সুরক্ষা।
কাঁচা পেঁয়াজে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ফলেট, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খেলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনও জানিয়েছে পেঁয়াজের কিছু উপাদান ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজের ৫টি উপকার
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে: কাঁচা পেঁয়াজে কুয়ের্সেটিন নামে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে—বিশেষত লাল পেঁয়াজে এর পরিমাণ বেশি। এই উপাদান ছোট অন্ত্র, অগ্ন্যাশয়, লিভার ও মাংসপেশির কোষে কাজ করে গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করে। ফলে রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।
ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়: পেঁয়াজের সালফার যৌগ ইনসুলিনের প্রতি কোষের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে শরীর রক্ত থেকে দ্রুত গ্লুকোজ শোষণ করতে পারে। টাইপ–২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হজমশক্তি ও অন্ত্রের যত্ন নেয়: পেঁয়াজের ইনসুলিন ও ফ্রুকটানস নামের প্রিবায়োটিক উপাদান ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায়। পাশাপাশি খাদ্যআঁশ শর্করার শোষণ ধীর করে, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ উত্থান কমে।
হৃদ্যন্ত্র রক্ষা করে: ডায়াবেটিসে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। কাঁচা পেঁয়াজের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে হার্টের ওপর চাপ কম পড়ে।
প্রদাহ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ দেখা যায়। পেঁয়াজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রদাহ কমায় এবং প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী করে।

কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার সঠিক উপায়
কাঁচা পেঁয়াজ খেলে এর গুণাগুণ সবচেয়ে ভালোভাবে পাওয়া যায়। রান্নার তাপে সালফারের উপকারী যৌগ ও কুয়ের্সেটিন কমে যায়। তাই নিম্নলিখিতভাবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁচা পেঁয়াজ যুক্ত করা যেতে পারে—
- সালাদে পাতলা স্লাইস করা পেঁয়াজ
- শসার সঙ্গে পেঁয়াজের মিক্স
- রায়তায় কুচি পেঁয়াজ
- স্যান্ডউইচ বা র্যাপে পেঁয়াজ
- ডালের সঙ্গে লেবু–পেঁয়াজ–লঙ্কার সাইড মিক্স

কাঁচা পেঁয়াজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য প্রাকৃতিকভাবে উপকারী একটি খাদ্য যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্রোগ প্রতিরোধ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে এটি কোনওভাবেই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ বা নির্দিষ্ট ডায়াবেটিস পরিকল্পনার বিকল্প নয়। তাই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় যুক্ত করার আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি
জেএস/