রমজানে ইফতার নিয়ে যা বললেন ডা. এবিএম আবদুল্লাহ
রমজান মাসে কী খাবেন আর কী খাবেন না তা নিয়ে রোজাদারদের চিন্তার শেষ নেই। একে তো গরমের দিন, টানা প্রায় ১৬ ঘণ্টা উপোস থেকে রোজা রাখতে হচ্ছে। তাই সেহরি কিংবা ইফতারের সময় খাবারের মেন্যু কী হবে, ইফতারে ছোলা, বড়া, বেগুনি, আলুচপ, জিলাপি খাওয়া যাবে কি-না তা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রীতিমতো আলোচনার ঝড় ওঠে।
যারা সুস্থ রয়েছেন তারা ছাড়াও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা ও হাপানিতে আক্রান্ত তাদের নিয়ে ভাবনা আরো বেশি। তাদের ওষুধ সেবনের মাত্রা সকালে কী হবে বা সন্ধ্যায় কী হবে তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে না কিংবা পরামর্শ চান না এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেছেন, ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার খাওয়াতে কোনো বাধা নেই।
কোনো প্রকার রোগব্যাধি না থাকলে পরিবারের সবাই পিঁয়াজু, আলুচপ, বেগুনি খেতে পারেন। কারণ ঘরের তৈরি ইফতার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভালো তেলে ভেজে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি হয়। ফলে খেতে বাধা নেই। তবে যাদের গ্যাস্ট্রিক ও আলচারের সমস্যা রয়েছে তাদের ইফতারি সামগ্রী কম ঝাল দিয়ে তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, ঘরের তৈরি ইফতার খাওয়াতে বিপত্তি না থাকলেও সুস্থ থাকতে হলে রাস্তাঘাটের তৈরি ইফতারি দেখতে আকর্ষণীয় ইফতার একেবারেই খাওয়া চলবে না। কারণ ওই সব ইফতারি বিভিন্ন ধরনের কেমিকেল ও রঙ মেশানো হয়। এছাড়া মানুষ যে ভাজাপোড়া আইটেমগুলো খেতে পছন্দ করে সেগুলো বহুদিনের পোড়া তেল ও মবিলে ভাজা হয়। যা মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। তিনি ঘরের বাইরের সব ধরনের ইফতার বিশেষ করে রাস্তার পাশে বিক্রিত ইফতার কিনে না খেতে উপদেশ দেন।
এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, এখন দিন বড়; তাই রোজাদারকে রাতের বেলা ও সেহরির আগে বেশি করে পানি খেতে হবে। এছাড়া ইফতারিতে বেশি শরবত খেতে হবে। এছাড়া, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সকালের ওষুধ অথবা ইনসুলিন সন্ধ্যায় এবং রাতের জন্য নির্ধারিত ওষুধ-ইনসুলিন সেহরির সময় নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যাজমায় আক্রান্ত রোগীরা এক বেলা লং অ্যাক্টিং ড্রাগ (এক ডোজ খেলে ২৪ ঘণ্টা কাজ করে) নিয়ে সহজেই রোজা রাখতে পারেন। অ্যাজমার রোগীরা রোজা রেখে ইনহেলারও ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ ইনহেলারের মাধ্যমে বুকের ভিতর বাতাস ঢোকে। তাতে রোজা ভঙ্গ হবে না বলে তিনি জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. বিল্লাল আলম বলেন, ইফতারে তেলে ভাজা ইফতার সামগ্রী না খাওয়াই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো। বিশেষ করে বাইরের তৈরি রঙ মেশানো জিলাপি, বেগুনি, পিঁয়াজুসহ বিভিন্ন আইটেম খেলে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পারে।
তিনি বলেন, ইফতারিতে চিড়া, দই, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া পেপে শশাসহ বিভিন্ন ফলফলাদি বেশি বেশি খাওয়া যেতে পারে। এখন রোজা ১৬ ঘণ্টা। দোকানিরা সকাল বেলা ইফতার তৈরি করে বিকেলে বিক্রি করে। তাই এ সব রঙ মেশানো খাবার খেয়ে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি হতে পরে।
রোজার দু`দিন না যেহেই তার চেম্বারে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছে। এর কারণ তেলে ভাজা ইফতারি খাওয়া। রঙ মিশ্রিত খাবার খাওয়ার কারণে পাকস্থলির ক্যান্সারের রোগী বাড়ছে বলে তিনি জানান।
ডা. বিল্লাল বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিক রোগীদের ওষুধ ও ইনসুলিন নিতে হবে। এক্ষেত্রে যারা ইনসুলিন নেন তাদের তিন ভাগের দুই ভাগ ইনসুলিন সন্ধ্যায় ও এক ভাগ সেহরির সময় নিতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদেরকে প্রধান খাবার সেহরিতে খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধের ডোজ কত হবে তা জেনে নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/বিএ/আরআই