মো. রবিন ইসলামের কবিতা
বর্ষার নিমগ্ন বেলা এবং অন্যান্য

বর্ষার নিমগ্ন বেলা
বৃষ্টি নামে ধীরে ধীরে, ভেজে পল্লীঘাট,
নীরব পাখি গুছিয়ে নেয় ক্লান্ত দুটি পাখ।
মাটির গন্ধে মিশে থাকে, পুরোনো কোনো চিঠি,
পলকে পলকে বাজে বুকে শ্রাবণের এক স্মৃতি।
তুমি কি জানো? এই বর্ষা আমার পিছুটান—
তোমার আঁচলে লেগে থাকা শিশিরভেজা গান।
তোমার চোখের কোমল জল, অকারণ এক হাসি,
আজও ছুঁয়ে যায় নিঃশব্দে, মনভরা আকাশি।
জলে ধুয়ে যায় শহরজুড়ে ক্লান্ত ধুলো-রেখা,
তবু এক ফোঁটা বৃষ্টিতেও খুঁজি তোমার দেখা।
চায়ের কাপে বাসি চুম্বন, ভেজা পাতায় কবিতা—
এসব যেন তোমারই ছায়া, প্রেমের অভিনবিতা।
বর্ষা মানে কেবল বৃষ্টি—তা তো নয় কভু,
এ এক অনন্ত প্রণয়ের নরম নীল আবহ।
তোমার স্পর্শহীন ছোঁয়ায়, অদেখা সে ছায়ায়,
জেগে ওঠে হঠাৎ করেই হৃদয়ের পূর্ণিমা-পায়।
****
কৃষ্ণচূড়ার প্রতিমা
রক্তিম প্রতাপ হানে দিগন্তবিস্তৃত কৃষ্ণচূড়া,
মেঘজর্জর অন্তঃপটে জ্বলে এক পুষ্পিক জ্যোৎস্না।
সে কি শুধু ফুল? না, অগ্নিতুল্য নৈঃশব্দ্যের সমাহার,
যেখানে অনন্তের করুণ সুর বেজে ওঠে গোধূলিলগ্নে।
তার শাখায় শাখায় শুষ্কতা নয় বরং এক প্রজ্ঞা—
যা ঝরে পড়ে সময়ের করোটিতে, নিঃসঙ্গ এক প্রতীক্ষায়।
পাতাহীন বৃক্ষদেহে জেগে থাকে ধ্বংসের দীপ্তি,
যেমন কোনো এক মহাপ্রয়াণের আগে উদিত রক্তপুষ্প।
কৃষ্ণচূড়া—তুমি কি বসন্তের নন্দন? নাকি অন্তিম চৈত্রের শোকগাথা?
তোমার শোভাবাহুল্য কি নিছক বাহার, নাকি নিরন্তর ক্ষয়বোধের প্রতীক?
হে অগ্নিস্নাত দ্যুতি, তুমি তো নিসর্গের আত্মার সংলাপ—
যেখানে প্রকৃতি নিজেই রচে আপন অন্তর্জাত অনুরণন।
তোমার অঙ্কুরে জেগে ওঠে প্রাচীন কোনো বৈদিক বিষাদ,
যেন ঋগ্বেদের স্তবের ন্যায়, তুমি উচ্চারণ করো মৌন ব্যাকুলতা।
আহা কৃষ্ণচূড়া, তুমি তো শুধু নয়নজয়ী ফুল নও,
তুমি এক লাল প্রতিবাদ, ধ্বংস আর সৃষ্টির মধ্যকার সংলগ্ন সংবেদ।
এসইউ/