মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালীর তিনটি কবিতা

ভাঙনের নিচে দাফন হওয়া শব্দবীজ
যাদের মুখ ছিল
ওরা এখন মুখোশের নিচে বাস করে
শ্বাস ফেলে রেশমি গন্ধ
অথচ ভিতরে
সুড়ঙ্গ কাটে শব্দহীন বিস্ফোরণে
বিষদাঁতের গল্পে উত্তেজনা নেই আর
শিকড়ের নিচে পচে যাওয়া বর্ণমালা থেকে
জেগে ওঠে এক পরিত্যক্ত স্তবক
যেখানে ‘মা’ শব্দটির নিচে চাপা পড়ে
একটি ভাঙা লাঙল
সুন্দরবনের ঘুমন্ত বাঘেরা রাতে
বদলায় শরীর
হয়ে ওঠে মানুষের মুখে হাঁসফাঁস করা শ্বাস
পশুর নদ এখন মৃত কৃষকের বুকের ওপর
জোয়ার আনে কেবল স্বপ্নে
ম্যাসাজ পার্লারের পাশে জন্ম নিচ্ছে
অশ্রুত উচ্চারণ—
সতেরোটি মৌন শরীর
নদীর জলে গর্ভপাত ঘটায়
অপ্রকাশ্য আত্মজীবনী
চাষি বলে না কিছু
জিহ্বা হৃৎপিণ্ডের পাশে ঝুলে থাকে
নির্জন মাঠে বুনে যায়
বাঁশতলার পুরোনো ব্যথার বীজ
যেগুলো বৃক্ষ হবে না
তবু কান্না দেবে
শিকারিরা আর গর্জে না
এরা আসে ভোরের দাওয়াতে
জ্যোৎস্নার মাংস টেনে নেয় ধীরে
আর আয়নার ভিতর
এক বালিকা কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে:
‘আমি এখনো ফুল হইনি
তবু কেন ঝরে গেলাম?’
****
চাষির জিহ্বায় জোৎস্নার আঁশ
জিহ্বা তুলে রাখে চন্দনের থালায়
আগুন ছিল না
তবু পুড়েছে প্রার্থনার ফসল
দাঁড় টানে না বহুদিন চাষি
কাঁধে উঠেছে ধান নয়
সরকারি মৌচাকের ফাঁপা ঘর
ঘুমন্ত ছেলের বুক থেকে উঠে আসে
পরিত্যক্ত ফসলী গান
যা বাঁধে না আর কারো মুঠো
তবু রাত হলে
হেঁটে যায় জলচাপা মাঠে
চোখের কিনারে টলমল করে
একফালি জোৎস্নার আঁশ
আর চাষ হয় না হৃদয়ের জমিন...
****
ঘুমিয়ে পড়া বাঘের দিনলিপি
আমি জানি
বাঘেরা রাতে ঘুমায় না
শুয়ে থাকে গাছের পাতায়
একেকটি ক্লান্ত প্রতিশ্রুতি হয়ে
যে নদী ছিল বন্যদের
সে এখন হজম করে
নৌকা ও বস্ত্র
তার তলদেশে মিশে গেছে
মাছরাঙার ঘ্রাণ
আমার ঘুমে প্রতিদিন দেখি
এক বাঘ—লাফিয়ে লাফিয়ে
আকাশ থেকে পড়ে গিয়ে
পৃথিবীর মানচিত্র চিবিয়ে খায়
তার দাঁতের ফাঁকে
কৃষকের হাত
মেয়ের চুল
এক ফালি আকাশ
তবু কেউ চিৎকার করে না...
এসইউ/এমএস