ফ্রেড্রিক নিৎসে ও তাঁর গোঁফ-দর্শন

নিশ্চয়ই মনে আছে ‘গোঁফ চুরি’র কথা। সুকুমার রায়ের গোঁফের আলেখ্য সাংঘাতিক এক সত্যকে উন্মোচন করেছে, যা কবিতার শেষ লাইন পড়লে বোঝা যায়—‘গোঁফকে বলে তোমার আমার–গোঁফ কি কারো কেনা?/ গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা’। হেড অফিসের বড়বাবুর গোঁফ চুরির লম্বা ফিরিস্তি রেখে আপাতত বলতে পারি গোঁফ দিয়ে মানুষকে চেনা যায়। কারণ গোঁফ মানুষের চিন্তার আয়না। গোঁফের ভেতর উঁকি দেয় মানুষের ব্যক্তিত্বের নিখুঁত নিশানা। স্প্যানিশ সুরেরিয়েলিস্ট সালভাদর দালি তাঁর নিজের গোঁফ নিয়ে একবার খুব উত্তেজনাকর মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার গোঁফ... খুবই তীক্ষ্ণ, খুবই আক্রমণাত্মক’। দালির চোখালো গোঁফের তীব্রতা প্রমাণ করেছে তিনি কতটা ক্রিয়েটিভ!
আমরা হরেকরকম গোঁফের সাথে পরিচিত। তবে যে গোঁফ নিয়ে আজকের আলোচনা তা সম্পূর্ণ আলাদা, এক্কেবারে ভিন্ন। বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক ফ্রেড্রিক নিৎসের গোঁফ। সিন্দুঘোটকের মতো গালের দুইদিকে ঝুলে থাকা একগুচ্ছ ঝোঁপের মতো এই গোঁফকে ইংরেজিতে বলা হয় উয়ালরুস-হ্যান্ডেলবেয়ার। উয়ালরুস-হ্যান্ডেলবেয়ার হচ্ছে বিড়ালের মতো দুই দিকে লম্বা অথচ পাখির বাসার মতো ঘন এক স্তূপকৃত গোঁফ। অনেকটা সামরিক বাহিনীর উর্দি পরা কঠোর মানুষের একরোখা ভঙ্গিমার মতন। তবে এটা ঠিক বিশ্ব-ইতিহাসে এ ধরনের উয়ালরুস গোঁফ ছিল অনেকেরই, যেমন জার্মানির অটো ভন বিসমার্ক, কাইজার উইলহেল্ম-২, আমেরিকার রুজভেল্ট, মার্ক টোয়েন, অস্ট্রিয়ান সম্রাট ফ্রাঞ্জ জোসেফ, সোভিয়েত ইউনিয়নের জোসেফ স্টালিনসহ অনেকেরই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্যারিস্টার আশুতোষ মুখার্জির গোঁফের কথা কে না জানে! অনেকে নাকি বলতেন, গোঁফ রাখলে আশুতোষের মতো রাখো। তবে এঁদের মধ্যে নিৎসের গোঁফের ধরনটা ছিল আলাদা। আলাদা হওয়ার কারণ তাঁর চিন্তার সাথে গোঁফের আছে আশ্চর্য মিল। নিৎসের গোঁফ যেন গোঁফ নয়; ব্যক্তিত্বের তীব্র অনুবাদ, যার বিচ্ছুরণের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে একবিংশ শতকের বহুমুখী দর্শনের গুচ্ছায়িত স্রোতধারা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন নিৎসে। যাকে উনিশ শতকের সমাজভাঙা বিপ্লবী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সাথে সাথে আখ্যায়িত করা হয় উত্তর-আধুনিক চিন্তার সূত্রমুখ হিসেবে। জীবনের বহুবিধ প্রসঙ্গ-কাঠামোর এক নান্দনিক অনুবৃত্তির প্রকাশ ঘটেছে নিৎসের চিন্তার মধ্যে। জীবনের এক সীমাহীন প্রসঙ্গ কাঠামোর মধ্যে তিনি একদিকে দুঃখ-বেদনা অন্যদিকে সেই দুঃখ-বেদনার ভেতর দিয়ে জীবনের মানে খোঁজ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর নিজের কথায়, “To live is to suffer, to survive is to find some meaning in the suffering”। বাঁচতে গেলে দুঃখ ভোগ অনিবার্য তাই দুঃখের ভেতর বাঁচতে হলে দরকার এরই মধ্যে জীবনের একটা মানে খুঁজে নেওয়া। বহুত্ববাদী চিন্তার সাথে কঠোর ব্যক্তিত্বের অদ্ভুত মিথস্ক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় নিৎসের লেখনীর মধ্যে। হাল আমলে আমরা যে উত্তর-আধুনিক চিন্তার সাথে পরিচিত হয়েছি তার শেকড় কিন্তু নিৎসের এই প্যাঁচানো গোঁফের কুণ্ডলী। আধুনিকতার কাঠামোর ভেতর যেমন সরলরৈখিক গ্রান্ড-নেরেশন থাকে নিৎসের গোঁফে তা নেই; আছে বহুধা বিভক্ত চিন্তা ও বহুমাত্রিক ভাবনার এক বিবিধ আয়োজন, যা দিয়ে বোঝা যায় নিৎসে মানুষের প্রচলিত বোধ-বুদ্ধির ওপর দারুণ এক জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিয়েছেন। মানুষের সরলরৈখিক ভাবনার একমুখী ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে জীবনের বিপুল ও বিচিত্র আয়োজনকে সঙ্গী করেছেন। প্রতিটি মানুষ একা, তার চিন্তা ও নিঃসঙ্গতা থেকে বেড়ে ওঠে জীবনের গল্প। সামগ্রিক মানুষের মধ্যে তার ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যতা একেকটা দীর্ঘ জীবনের গল্প শোনায়। আমেরিকান কবি এমিলি ডিকেন্সনের কবিতা থেকে কয়টা লাইন না বললেই নয়, “Each life converges to some centre/ Expressed or still;/ Exists in every human nature/ A goal…”। খুব হলফ করে বলা যায়, নিৎসের শূন্যবাদি চিন্তা জীবন সম্পর্কে অমলিন গভীর বোধের প্রতিশ্রুতি। তাঁর গোঁফের তরঙ্গায়িত উত্তাল ভঙ্গিমা সেই সত্যকেই প্রকাশ করেছে কুণ্ঠাহীনভাবে।
নিজেকে তিনি সেটিয়ার হিসেবে উল্লেখ করেন। সেটিয়ার হচ্ছে গ্রিক পুরাণে উল্লেখিত অদ্ভুত ধরনের প্রাণী, যা অনেকটা অর্ধ-মানব, অর্ধ-ছাগল। সেটিয়ার অনেকটা শয়তানের মতো, যা কি না দেবতা থেকে আলাদা এবং ভিন্ন চরিত্রের। এ ছাড়া নিৎসে স্বীকার করেছেন, তিনি ছিলেন স্টোয়িক দার্শনিক ডায়োনিসাসের অনুসারী। ডায়োনিসাস মানুষের জীবনের আদিম, অকৃত্রিম ও প্রবৃত্তিগত জীবনীশক্তির ওপর জোর দিয়েছিলেন, যা ছিল সেসময়ের এপলোনিয়ান নীতি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। নিৎসের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল প্রকৃত প্রজ্ঞা এবং গতিময় সংস্কৃতি গড়ে ওঠে ডায়ানসিয়ান ও এপলোনিয়ান শক্তির মধ্যে নিরন্তর আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে। আমরা হাল আমলে যে আধুনিকতা ও উত্তর-আধুনিকতার মধ্যে বিভাজন রেখা তুলে ধরি এপলোনিয়ান ও ডায়ানসিয়ানের মধ্যে বিরোধটা সেখানেই। দর্শন, শিল্পকলা, সমাজ এবং ইতিহাসের ব্যাখ্যায় এ দুটো চিন্তার বিরোধ সর্বজনবিদিত। এপলোনিয়ান চিন্তা যেখানে ব্যক্তি পরিচয়ের সুনির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে নির্দেশিত; সেখানে ডায়ানসিয়ান ভেঙে ফেলেছে সেই তথাকথিত বেড়া। মানুষের সংস্কৃতি ও শিল্পবোধ তাই এ দুই ধরনের চরমভাবাপন্ন অবস্থানের এক সময়পযোগী সমঝোতা। নিৎসে মনে করেন, গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিডিস তাঁর বিয়োগাত্মক নাটকের পরিসমাপ্তি টেনেছেন শুধু এপলোনিয়ান ভাবনার ভেতর দিয়ে। যার ফলে নাটকগুলো শেষ হয়েছে একপাক্ষিক চিন্তার পক্ষপাতিত্বে। ইউরিপিডিসের বিখ্যাত নাটকগুলোর মধ্যে মেডিয়া, দ্য ট্রজান উইম্যান, দ্যা ব্যাচিই অন্যতম। তবে এটা ঠিক ইউরিপিডিসের নাটকগুলোর মধ্যে ঈশ্বরকে অধিকাংশ জায়গায় দাঁড় করিয়েছেন মানুষের সীমাহীন কষ্ট বেদনার বিপরীতে নিরুত্তাপ দর্শক হিসেবে। সন্দেহ নেই ইউরিপিডিসও ছিলেন বিপ্লবী।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ফ্রেড্রিক নিৎসকে আমরা বিভিন্নভাবে পরিচিত করে তুলি—অস্তিত্ববাদী, উত্তর-আধুনিক চিন্তার জনক, নৈরাজ্যবাদী, বিশৃঙ্খলাবাদী, হিটলার-গুরু, চরম ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী, বিপ্লবী, আইকনোক্লাস্টিক, পারস্পেক্টিভিস্ট ইত্যাদি। কোনো সন্দেহ নেই ওপরের প্রত্যেকটি বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—তাঁর এ গোঁফের সাথে ব্যক্তিত্বের ধরনগুলোর সম্পর্ক কী? এ উত্তর তল্লাস করার আগে নিৎসের গোঁফ নিয়ে আমেরিকান কবি জে. স্কট লুইসের ‘নিৎসের গোঁফ’ কবিতার কয়েকটা লাইন পড়তে চাই:
Bushy black, unkempt
wet with snot and spittle
sneezing at German sensibility
hair strand arguments
concealing thin lips.
……
What wonders it conceals as it
casts shadows affirming life!
It is a source of power. It is
a source of prudence. It is...
it is. (Nietzsche’s Mustache)
বোঝা যাচ্ছে এ কবিতা নিৎসের সমস্ত ব্যক্তিত্বের এক অপূর্ব বয়ান। কারণ নিৎসের গোঁফের ভেতর লুকিয়ে আছে তাঁর ব্যক্তিত্বের এক অদম্য শক্তি, গালের দুপাশ দিয়ে বেয়ে পড়েছে বহু অবিন্যস্ত সূচালো গোঁফের ধারা। বহুমুখী এ গোঁফের সন্নিবেশ থেকে বোঝা যায়, তিনি সরলরৈখিক একমুখী চিন্তা থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছেন বহুত্ববাদের অবধারিত এক ডেরায়। Clayton Koelb-এর সম্পাদনায় ‘Nietzsche as Postmodernist: Essays Pro and Contra’ বইয়ে নিৎসেকে উত্তর-আধুনিক চিন্তার সূতিকাগার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা ছাড়া নিৎসের সমস্ত চিন্তাকে একটা সুতোয় গাঁথলে তাঁকে উত্তর-আধুনিক চিন্তার মানুষ না বলে উপায় নেই। এ পর্বে আলোচনায় প্রবেশের আগে আমি একটু দেখে নিই নিৎসের শুরুটা।
নিৎসের পুরো নাম ফ্রেড্রিক উইলহেল্ম নিৎসে, জন্মগ্রহণ করেন ১৮৪৪ সালের ১৫ অক্টোবর। জার্মানির লিপজিগের কাছাকাছি রোকেন শহরে জন্ম। বর্তমানে এটা লুটজেন শহরের সন্নিকটে। রাজা ফ্রেড্রিক উইলহেল্ম অব প্রুশিয়ার নামে তাঁর নাম রাখা হয়, পরবর্তীতে উইলহেল্ম শব্দটা নিৎসে নিজের নাম থেকে বাদ দেন। প্রপিতামহ গটহেল্প এঙ্গেল নিৎসে ছিলেন একজন দার্শনিক এবং পিতামহ ফ্রেড্রিক অগাস্ট লুডভিগ নিৎসে ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। নিৎসের পিতা কার্ল লুডভিগ নিৎসে ছিলেন জার্মান লুথেরান যাজক এবং মন্ত্রী। নিৎসে তাঁর পিতাকে অত্যন্ত চমৎকার একজন মানুষ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ১৮৪৯ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁদের পরিবার নুয়ামবার্গে স্থানান্তরিত হয়। সম্পূর্ণ পারিবারিক আবহে নিৎসে ছোটবেলার দিনগুলো পার করেন। তিনি ছিলেন অসম্ভব মেধাবী মানুষ, মাত্র ২৪ বছর বয়সে বেসিল ইউনিভার্সিটির ক্ল্যাসিক্যাল ফিললজির চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হন। সে সময়ে তাঁর শিক্ষক ফ্রেড্রিক উইলহেলম রিটসেল বলেন, নিৎসে এমন একজন মেধাবী মানুষ, “যিনি ভবিষ্যতে যা করতে চাইবেন তা করার সামর্থ্য তাঁর আছে”। লিপজিগে অবস্থানকালে নিৎসের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রিচার্ড উয়াগনার সাথে এবং ১৯৭০-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত এ বন্ধুত্ব টিকে ছিল। রিচার্ড উয়াগনার ছিলেন বিখ্যাত জার্মান সুরকার, থিয়েটার পরিচালক এবং কন্ডাক্টর; যিনি নিৎসেকে মারাত্মকভাবে উৎসাহ দিয়েছিলেন সংগীত, অপেরা এবং সাহিত্যের নানা বিষয়ে। ফলে নিৎসে জীবনের প্রথম একটি বই লেখেন ‘The Birth of Tragedy Out of the Spirit of Music’ নামে ১৮৭২ সালে।
বিজ্ঞাপন
নিৎসে ছিলেন বিশ শতকের সবচেয়ে আলোচিত দার্শনিক। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ফিরিস্তিও নেহাৎ কম না। পশ্চিমা চিন্তায় নিৎসের অবস্থান তাই মিশ্র প্রকৃতির। তাঁর লেখনীর ধরন ও প্রথাবিরোধী বয়ানের কারণে তাঁকে পড়তে হয়েছে নিদারুণ সমালোচনার মুখে। ইউরোপিয়ান সভ্যতা-সমাজ ও চিন্তার অগ্রগতির অভিন্ন এক বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোর বিরুদ্ধে নিৎসের লেখনি সাংঘাতিক সমস্যা তৈরি করে সেসময়। তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিৎসে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন; যখন দু’দুটো বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষিতে গোটা ইউরোপের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে। নিদারুণ এক সাংস্কৃতিক শূন্যতা যখন গোটা ইউরোপকে তছনছ করে তোলে; তখন মানুষ তাদের প্রবৃত্তিগত আগ্রাসনের মনস্তাত্ত্বিক সীমানা নির্ধারণ করেন অনেকেই। এজন্যই নিৎসে এতো প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয় তাদের কাছে। খ্রিষ্টান ধর্মের কিছু নৈতিক বিষয়ের ওপর তাঁর তীব্র সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি তিরস্কৃত হন। তবে তারচেয়েও বেশি সমালোচিত হন যখন তিনি বীরদর্পে উচ্চারণ করেন, “ঈশ্বর মৃত”। গোটা ইউরোপিয়ান ভাববাদী দর্শনের ওপর এটা একটা আঘাত বটে! প্লেটো থেকে শুরু করে উনিশ শতাব্দী অবধি দর্শনের যে ধারা বয়ে আসছে তার ওপর নিৎসে ভয়ানক একটা জিজ্ঞাসা ছুঁড়ে দিয়েছেন। বিশ শতকজুড়ে নিৎসের চিন্তা ও তাঁর লেখনীর ওপর তীব্র সমালোচনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, অনেকেই মনে করেন জার্মান নাজিবাদ উত্থানের মূল কারণ নিৎসের দর্শন। এডলফ হিটলারের চরম দক্ষিণপন্থা ও উগ্র জাতীয়তাবাদী দর্শনের মূল ভিত্তি নিৎসের এই শূন্যবাদী বা অস্তিত্ববাদী দর্শন। অনেক গবেষক কিন্তু এ ধরনের সমালোচকদের বেশি পাত্তা দেননি। “এমন একসময় ছিল যখন নীচেকে (নিৎসে) জার্মান ফ্যাসিজমের উত্থানের জন্য আংশিকভাবে দায়ী করা হতো। এখন, ঠিক এই সময়ে, তাঁকে উত্তর-আধুনিক চিন্তার উদ্ভাবক হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে, যে চিন্তা একেবারেই ফ্যাসিজমের বিপরীতে” (অমল বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তর-আধুনিক চিন্তা ও কয়েকজন ফরাসী ভাবুক, পৃ- ২০৭)। একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই নিৎসের জীবদ্দশায় তিনি তখনকার নামকরা দার্শনিক যেমন ফ্রেগে, রাসেল, হোয়াইটহেড, বার্গস কিংবা হুসার্ল দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছেন। তবে মৃত্যু-পরবর্তীতে নিৎসে হয়ে উঠেছেন দুর্দমনীয় এবং সমসাময়িক সময়ের জন্য সাংঘাতিকভাবে প্রয়োজনীয়।
নিৎসে কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন?
নিৎসে কোনো বিশেষ দার্শনিক দ্বারা প্রভাবিত না হলেও এটা নিশ্চিত বলা যায়, আর্থার শোপেনহাওয়ার, কান্ট, মিল, স্পিনজা, এমারসন, প্লেটো, হিরাক্লিটাস, জরথ্রুস্ত্র কিংবা ডায়াজন্স, তাঁর সামগ্রিক চিন্তা গঠনে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। এঁদের চিন্তার অনেকটা দিক তাঁর ভাবনার মোড় ঘুরিয়েছে। ১৮৬৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৮৬৭ সালের আগস্টে লিপজেগে পড়ার সময় Die Welt als Wille und Vorstellun নামের জার্মান ভাষার একটা বই একদিন তাঁর নজরে আসে। বইটার ইংরেজি তর্জমা The World as Will and Representation। পুরোনো এক বইয়ের দোকান থেকে কিনে নিয়ে যান বাসায়। লেখক আর্থার শোপেনহাওয়ার। শোপেনহাওয়ার তখনো তাঁর কাছে ততটা পরিচিত নন। জার্মানের বিখ্যাত দার্শনিক শোপেনহাওয়ার ছিলেন তখনকার অতি প্রভাবশালী মানুষ। তবে তাঁর আগে ইমানুয়েল কান্ট জার্মান চিন্তার একটা বড় অংশ দখল করে ছিলেন।
নিৎসে বইটা পড়ার পর এতটাই প্রভাবিত হন, মুহূর্তেই তিনি শোপেনহাওয়ারের শিষ্য বনে যান। তাছাড়া বইটার ছিল একটা বিরাট সম্মোহনী শক্তি। নিৎসে বলেন, “who after they have read the first page of him know with certainty that they will read all his pages, and that they will listen to every word that he has said.”। নিৎসে কেন এত দ্রুত শোপেনহাওয়ারের কব্জায় বন্দি হয়ে পড়েন তার কারণ জানা যায়। আদতে শোপেনহাওয়ারের জগত-ব্যাখ্যা ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বহির্জগত এবং অন্তর্জগতের মাঝে জ্ঞানের যে দ্বৈত ক্রিয়া সেটা কান্টের আগে কেউ স্বীকার করতো না, কান্ট এর বিস্তৃত ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু কান্টের সেই ব্যাখ্যা পাশ কাটিয়ে শোপেনহাওয়ার তাঁর নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেন। প্রথমদিকে শোপেনহাওয়ারের অবস্থান ছিল অনেকটা কান্টেরই মতো। বিশ্বজগতকে আমরা দেখি আমাদের মনের জানালা দিয়ে আর এ জানালা হচ্ছে আমাদের ইচ্ছে। অর্থাৎ মানবমনের গভীর অনুভূতি বিশ্বদর্শনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে, কান্ট যেটাকে থিংক ইন ইটসেল্ফ বা স্বগত সত্তা বলেছেন। জার্মান ভাষায় যার নাম Ding an sich। বিশ্বজগত আমার কাছে যেভাবে প্রতিফলিত হয় তা দেখার ক্ষেত্রে আমার ইচ্ছে একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিফলিত বিশ্বজগত এবং আমার ইচ্ছের মাঝে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা আমার শরীরবৃত্তিয় কিছু প্রক্রিয়া ও আমার মনের একান্ত চাওয়ার কিছু সম্পর্কের সাথে জড়িত। কান্ট যেমন জ্ঞানীয় প্রক্রিয়ায় ১২ রকমের ক্যাটাগরির কথা উল্লেখ করেন; সেখানে শোপেনহাওয়ার মনে করেন আমাদের মনের অন্তর্গত তিনটি অভিজ্ঞতাপূর্ব আকার আছে যার দ্বারা বিশ্বজগতের জ্ঞান আমার কাছে সম্ভব হয়ে ওঠে। এই তিনটি আকার হচ্ছে—স্পেস, টাইম এবং কজালিটি।
বিজ্ঞাপন
সামগ্রিক জ্ঞানের প্রক্রিয়ায় শোপেনহাওয়ারের এ অবস্থান মূলত মানুষের ইচ্ছে ও দৃশ্যমান জগতের সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়া। খুব সংক্ষেপে এমনভাবে বলা যায়, তিনি মানুষের জ্ঞানকে মৌলিকভাবে ইচ্ছাকৃতি হিসাবে দেখেছিলেন; যা একটি অচেতন, সংগ্রামী শক্তি এবং সমস্ত ঘটনাকে অন্তর্নিহিত করে। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি যথেষ্ট কারণের নীতির মাধ্যমে শোধন করা হয়, যা নির্দেশ করে যে সবকিছুর একটি কারণ বা ব্যাখ্যা আছে। এ নীতি, স্থান, সময় এবং কার্যকারণসহ বাস্তবতার প্রকৃত প্রকৃতিকে উপলব্ধি করার পরিবর্তে একটি উপস্থাপনা (ঘটনা) হিসাবে বিশ্ব আমাদের অভিজ্ঞতাকে আকার দেয়, যা তিনি ‘স্বগত সত্তা’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন। Grace Neal Dolson তাঁর প্রবন্ধ The Influence of Schopenhauer Upon Friedrich Nietzsche -এ সম্পর্কে সুবিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। Neal Dolson নিৎসের ওপর শোপেনহাওয়ারের এ প্রভাবকে ধর্মান্তকরণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে নিৎসের এ শোপেনহাওয়ারীয় অবস্থান দিন দিন পাল্টাতে থাকে এবং একসময় গুরু শোপেনহাওয়ার থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব একটা অবস্থান তৈরি করেন। আদতে শোপেনহাওয়ারের চিন্তার মধ্যে যে অতি-প্রাকৃতিক উপাদান ছিল সেগুলো বাদ দেন নিৎসে। Benjamin A. Elman তাঁর প্রবন্ধ Nietzsche and Buddhism-এ দাবি করেন, শোপেনহাওয়ার বৌদ্ধ বৈদান্তিক দর্শন ও এর নৈরাশ্যবাদী ভাবনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
নিৎসের সুপারম্যান
আমরা প্রতিদিন ভাবি, আমাদের সফল মানুষ হতে হবে। একজন আদর্শ মানুষ হতে হবে কিংবা সম্পূর্ণ ভালো মানুষ হওয়া দরকার। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, আমরা সফল মানুষ বলতে কী বুঝি সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই। এমনকি আমরা ভালো মানুষ বলতে ঠিক কী ধরনের মানুষকে আমাদের চোখের সামনে কল্পনা করতে পারি; তার কোনো স্পষ্ট উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে নেই। নেই এই কারণে যে, ঠিক কোন আদর্শকে আমরা ভালো বলতে পারবো তার কোনো একডেমিক মডেল বা স্ট্রাকচার আমাদের সমাজ ঠিক করে দেয়নি। হয়তো বড় জোর একজন মানুষের উদাহরণ সামনে রাখতে পারি যে অনেক ধন-সম্পদ অর্জন করেছে কিংবা অনেক ধন-সম্পদ মানুষের মাঝে বিতরণ করেছে। অথচ তার জীবনের অর্জন বলতে টাকা ছাড়া কিছু নেই। অন্যজন অতি দারিদ্র্যের মাঝে অনেক লেখাপড়া করছে, সামাজিক নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেনি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছে ইত্যাদি। সত্যি কথা বলতে কি, নিৎসের সুপারম্যান বা অতিমানব এ ধরনের তথাকথিত প্রচলিত জীবনের মানুষ নয় অথবা শারীরিক শক্তিতে দানবও নয়। বিশালাকৃতির অতি শক্তিশালী মানুষ হিসেবে আমাদের মনের ভেতর সুপারম্যানের যে ধারণা আছে, তা কিন্তু নিৎসের সুপারম্যান নয়। নিৎসের সুপারম্যান বা অতিমানবের ধারণার সন্ধান মেলে তাঁর Thus Spoke Zarathustra-এ। সুপারম্যানকে জার্মান ভাষায় নিৎসে বলেছেন Übermensch যাকে একজন আদর্শ মানুষের প্রতিকৃতি হিসেবে কল্পনা করা যেতে পারে। প্লেটোর দার্শনিক রাজা যেমন প্রজ্ঞাবান; তেমনই নিৎসের সুপারম্যানও অত্যন্ত উচ্চ মূল্যবোধের অসাধারণ বিপ্লবী। নিৎসে সুপারম্যান বলতে যে ধারণা দিয়েছেন তা হচ্ছে মানুষের সম্পূর্ণ সক্ষমতা এবং পরিপূর্ণ সৃজনশীলতা। যিনি প্রচলিত ও তথাকথিত নৈতিকতার শৃঙ্খলা ভেঙে, আধুনিকতার নামে সামাজিক অনাচারের প্রতি বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে নতুন যুগের সৃষ্টি করেন তিনিই সুপারম্যান। নিৎসের কাছে সুপারম্যান হচ্ছে যুগস্রষ্টা, যিনি জীবনের সকল অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারেন। জীবনের সব কদর্যকে ধুলিস্ম্যাৎ করে নতুন যুগের সৃষ্টি করতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে সম্ভবত এমন একজনকেই চেয়েছিলেন একটা সুস্থ পৃথিবী ফিরিয়ে আনতে—
ওই মহামানব আসে।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক—
এল মহাজন্মের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।
উদয়শিখরে জাগে ‘মাভৈ: মাভৈ:’
নবজীবনের আশ্বাসে।
এ নবজীবনের আশ্বাসটা নিৎসে পেয়েছিলেন এক দার্শনিক বিপ্লবের স্বপ্নের ভেতর। একটা জ্ঞানতাত্ত্বিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তিনি চেয়েছিলেন এমন এক সমাজ যেখানে পুরোনো ঘুণে ধরা পশ্চিমা সমাজকে তিনি এক নতুন বিশ্ববীক্ষায় দীক্ষিত করতে পারেন। হ্যারি ইউম্যান তাঁর প্রবন্ধ Nietzsche: The Superman, the Will to Power and the Eternal Return-এ বলেছেন, বিগত সময়ের অভিজাততন্ত্র ও রাজতন্ত্র পরিপুষ্ট হয়েছিল খ্রিষ্টধর্মীয় বাতাবরণে। কিন্তু শোপেনহাওয়ারে অনুপ্রাণিত হয়ে নিৎসে এ অসম সমাজকে ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন। কিন্তু কীভাবে? এর উত্তরে নিউম্যান দেখাচ্ছেন আধুনিকপূর্ব যুগ ছিল মানুষের লৌকিক বিশ্বাস দ্বারা পরচালিত। এই লৌকিক বিশ্বাস ছিল সহজাতবৃত্তিজাত যার সাথে ব্যক্তির নিজস্ব অভিজ্ঞতার কোনো সংস্পর্শ নেই। এজন্য লৌকিক বিশ্বাসের ওপর ভরসা রাখার বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো কারণও নেই। প্লেটোর পরম সত্তার ধারণার সাথে মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে যে সত্য তৈরি হবে সেটা সেলফ-সাবসিটেন্ট ট্রুথ নয় বরং এক নবতর জীবনবোধজাত সত্য।
বিজ্ঞাপন
জরথুস্ত্রের কথা
জরথুস্ত্র স্পিতামা ছিলেন প্রাচীন পারস্যের একজন ধর্মীয় সংস্কারক। জন্মেছিলেন ৬২৪ বি সি জোরতে। তিনি তখনকার প্রচলিত পারস্য ধর্মের ওপর চ্যালেঞ্জ জানান এবং নিজে এক বিশেষ ধরনের মতবাদ সৃষ্টি করেন পরবর্তীতে এটা জুরথুস্তবাদ নামে পরিচিতি পায়। তিনি সেসময় প্রচার করেন এক ঈশ্বরবাদ এবং আহুরা মাজদা নামে ঈশ্বর এক বিশেষ রূপ। পারস্যের রাজা ডেরিয়াস আহুরা মাজদা উপাসনা করতেন। আহুরা মাজদার অন্য নাম হচ্ছে জ্ঞানী সর্বময় কর্তা। জরথুস্ত্রবাদের মূল গ্রন্থ আভেস্তা থেকে জানা যায়, তিনি ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী পুরুষ যাকে ধর্ম প্রচারক হিসেবে মানুষ শ্রদ্ধা করতেন। পারস্য ইতিহাসে সাসিনিয়ান প্রিয়ডে জরথুস্ত্রবাদের ব্যাপক প্রচার দেখা যায়। আহুরা মাজদাকে তিনি বসাতে চেয়েছেন রাষ্ট্রের মধ্যমণি হিসেবে, নৈতিক ত্রাতা হিসেবে। প্রাচীন পারস্যের চিন্তায় ছিল বহু ঈশ্বর কিন্তু আহুরা মাজদা সেই বিশ্বাসকে পুরোপুরি বাতিল না করে তাকে সংস্কার করতে চেয়েছেন। আভেস্তা থেকে জানা যায়, আহুরা মাজদা স্বর্গ সৃষ্টি করেছেন, করেছেন এই বস্তুজগৎ, আলো, অন্ধকার ইত্যাদি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো নিৎসে কেন জরথুস্ত্রকে তাঁর চিন্তার মাঝখানে স্থান দিলেন? এর কারণ হিসেবে জানা যায়, নিৎসে মনে করেন জরথুস্ত্রই প্রথম ব্যক্তি যিনি আমাদের চিন্তার ভেতর ভালো আর মন্দের বিভাজন করছেন। জরথুস্তই প্রথম ব্যক্তি যিনি মানুষের প্রাচীন ও প্রচলিত কুসংস্কারমুক্ত বিপ্লবী চিন্তা প্রচার করেছেন। প্রাচীন ঘুণে ধরা সমাজ বাস্তবতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। Thus Spoke Zarathustra-তে নিৎসে খ্রিষ্টীয় নৈতিকতার কিছু মৌলিক প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছেন, প্রচার করেছেন শূন্যবাদ বা নিহিলিজম।
নিৎসে নিজে দাবি করেছেন, তিনি ছিলেন প্রগাঢ় একজন জ্ঞানী মানুষ। তাঁর আত্মজীবনী ECCE HOMO-তে তিনি লিখেছেন, তিনি এই জ্ঞান অর্জন করেছেন মানুষের সাথে চিন্তার মিথস্ক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। কারণ তাঁর ছিল অত্যন্ত পরিষ্কার ধারণা এবং বাস্তবতা সম্পর্কে গভীর অনুভূতি। এ বইয়ের অন্য অধ্যায়ে নিজেকে তিনি অত্যন্ত একজন চালাক ব্যক্তি হিসেবে আখ্যা দেন। কারণ অন্যদের থেকে তিনি খুব সহজেই সমস্যাগুলো বুঝতে পারেন। তিনি অহেতুক শক্তি ক্ষয় করেন না অযথা চিন্তা নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
নিৎসের চিন্তায় বহুমাত্রিকতা ছিল, ছিল সমাজ ভাঙার স্বপ্ন। তিনি ছিলেন উচ্চমার্গের একজন কবি এবং গীতিকার। তিনি কেন ব্যতিক্রম ছিলেন তাঁর ছোট্ট একটা কবিতায় ধরা পড়ে—
চিন্তা সে তো আজও
তপ্ত বহমান উৎগিরিত লাভা
কিন্তু সব লাভার স্রোতধারা
চতুর্দিকে গড়ে তোলে ব্যূহ
সব চিন্তায় দিন শেষে
আইনের চোখে অপরাধী।
নিৎসের বিশেষত্ব সম্ভবত এখানেই যে, তিনি খুঁজে পেয়েছেন বহু মত ও পথের সন্ধান। ঊনবিংশ শতকের জার্মানি তথা গোটা বিশ্ব যখন একটা সুতোয় গাঁথার পরিকল্পনা হয়েছিল নিৎসে সেটার বাধা দিয়েছিলেন। এজন্যই তিনি ব্যতিক্রম, এজন্যই তাঁর গোঁফ উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিল, ব্যতিক্রম হওয়ার, জয়ী হওয়ার, বিদ্রোহী হওয়ার। এজন্যই নিৎসে দেড়শ বছর পরেও সমানভাবে বিজয়ীদের উৎসাহ দেন।
এসইউ/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন