হাসান হামিদের কবিতা
অনুরোধ
আমি শেষ কবে কেঁদেছি, এবং কার জন্য
এখন আর মনে পড়ে না।
তোমাকেও বলে রাখি বোধ;
এ আমার গোপন অসুখ, কবেকার-
এ আবার, জিজ্ঞেস করো না!
বিরিয়ানি এবং কাকের গল্প
বৃষ্টি হলে নর্দমার জল জমে জমে সমুদ্র হয়,
আমার মাথা নুয়ে পড়ে তোমার পায়ের ব্যালকনিতে;
অচেনা নাবিকের মতো স্বপ্নের দেশে পা রাখি,
ভাবি, একদিন ওদের মতো আমিও আগুনে পুড়বো;
আমার এই চোখ, গলে পড়বে জেলখানার জোছনা
দেখা খুনির মতো; এই আঙুল আর খুঁজবে না কথা,
কিন্তু অহেতুক রাত নেমে আসে সাথে সাথেই!
শহুরে প্রেম লেগে থাকে জানালার গ্রিলে
আর আমি এক কাপ চা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি।
এই শহরে এখন শিষ্টাচার শেখায় ভাড়াটে খুনি,
সব পেছনে ফেলে আমি গুণে রাখি তোমার
ফোন নম্বরের সবগুলো ডিজিট,
সিগন্যালে আটকে থাকা গাড়িতে
তোমার চুলগুলো বেহায়া ভীষণ,
ট্রাফিক পুলিশের চোখ তখন বিলবোর্ডের নায়িকার শরীরে,
সে শরীর আগুন স্নানে বিশুদ্ধ গত যৌবনা কুমারীর;
আর তোমার হাতের তালুতে চকচকে রাত।
আমি বিলবোর্ডে নায়িকার বদলে দেখি কাকের ঝাক।
পোড়া মানুষের গন্ধের চেয়ে বিরিয়ানির সুবাস
এ শহরে বেশি ভাসে,
মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা আর ভালো লাগে না।
ফসল
নীলুফাপা, বাড়ি আসবো এবার।
কতোদিন হলো হাঁটু অব্দি ধুলো মাখি না,
বাড়ির দাওয়ায় পিঁড়ি পেতে বসি না;
ছুঁই না বরইয়ের ডালপালা, আঙিনার পেঁপে গাছ।
উঠোনের কাক তাড়াতে তাড়াতে দেখি না আকাশ,
কতো দিন হলো বাড়ি আসি না, কতো কতো দিন।
নয় মাস, যেদিন ছেড়েছি বাড়ি; মনে পড়ে,
নকশা করা লেপা ঘরদোর, ফুল পাখি পৈঠায়,
লাউয়ের মাচাটি থেকে বের হয়েছিল ডুগার শাসন;
আমি দীর্ঘ দিন ধরে যে দিনের অপেক্ষায় ছিলাম
সেই দিনকে পেয়ে, ভুলে গেছি, কাউকে বলিনি,
একটা ভালোবাসা থাকে মানুষের, সব ভালোবাসা
যার কাছে শুকনো মলিন; তারে আমি কীভাবে বল ছাড়ি?
ফসল তোলার শিরনি এবার মসজিদে কে দেবে আগে?
স্বাধীনতা, এরচে আর বড় কি ফসল হয়?
পদরেখা
অফিসের চায়ের কাপে দামি লিপস্টিকের দাগই
বলে দেয়, তুমি এসেছো; এবং ইচ্ছে করে ছুটে গিয়ে
জিজ্ঞেস করি, কেমন আছো, দেখে মুখস্থ করি
তোমার পদরেখাগুলো। হয়তো তুমি উত্তরে বলবে,
শরীর ভালো থাকলেই কি ভালো আছি বলা যায়?
ছয়-নয় করে একদিন বলেই দিলাম, ‘তোমাকে ভালোবাসি’!
আমার মেদহীন আবেগের অমন অপপ্রকাশ তোমাকে
সেদিন ভাবাতে পারেনি, চঞ্চল করে তুলতে পারেনি;
অথচ আমার ভেতরে তখন গড়ে ওঠার গোপন প্রস্তুতি।
অথচ তারপর থেকে আমি আর ভালো আছি বলি না।
ব্যবধান
তুমি ভেঙ্গেছিলে শক্ত কবাটখানা,
ছিঁড়েছিলে যত্নে প্রচলিত অভিধান;
আমার নিয়ম কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা
অনিয়মে ঠাসা তোমার সকল গান।
প্ররোচনা দিয়ে শক্ত বুনন তোমার,
গতিহীনতার অসৎ গোপন ক্লেদ;
আমি আটকানো অসহায় ক’টি চোখে
স্নায়ুতে সুপ্ত না মানা ভেদাভেদ।
তুমি মানে বিলানো সুতনুকো যৌবন,
ঘুনপোকা বাঁধা মনোরম বসবাস;
আমার হৃদয় পিষ্ট প্রতীক্ষাতেই
ঘুচাবোই তবু অবদমনের ত্রাস।
গোলাপি মাছ
তারপর দেখা হয়ে যাবে;
ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে
বালিকা চুষবে ইগলু আইসক্রিম!
শপিংমলের চলন্ত সিঁড়িতে
হইচই করে ধরবে হাত,
ছুঁয়ে দিবে দুপুরের আঙ্গুল,
তারপর কথাবার্তাও কিছু হবে..
গোলাপি মাছের মতো সে ঘুমিয়ে পড়বে
আমার পুকুরের ঠিক মাঝখানে!
এইচআর/এমকেএইচ