শেষ কর্মদিবসেও ঢাকার সড়কে যানজটে চরম ভোগান্তি
ব্যস্ততম নগরী ঢাকায় যানজটে মানুষের চলাচলে ধীরগতি বাড়ছেই। ছবি: বিপ্লব দিক্ষিত
রমজানে সবকিছুতেই একটু সহনীয় পরিবেশ চায় মানুষ। বিশেষত, ঢাকার মতো অতি যানজটপ্রবণ নগরীতেও রমজানে সড়কে জ্যাম কিছুটা কম থাকুক, রোজাদাররা চলাচলের ক্ষেত্রে একটু স্বস্তি পাক, এমন প্রত্যাশা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু বাস্তব চিত্র পুরোপুরিই ভিন্ন। ঢাকার পথে পথে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট যেন আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের দীর্ঘ জট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম মাড়িয়ে গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষের চোখেমুখে ছিল বিরক্তি আর ক্লান্তির ছাপ। যাত্রীদের অনেকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজট। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস শেষে ঘরে ফেরা মানুষেরা। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে প্রতিদিনই তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বের হন। কিন্তু যানজটের কারণে অনেক সময় ঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারেন না।

গণপরিবহনে চলাচলকারী যাত্রীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, কারও হয়তো গন্তব্যে যেতে আধাঘণ্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু এক ঘণ্টা আগে রওনা হয়েও তিনি সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিন সড়কের এক অবস্থা। এ নিয়ে তাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই।
আরও পড়ুন
- অসহনীয় যানজট, ইফতারের আগে বাসায় ফেরা নিয়ে সংশয়
- ইফতারের আগে অসহনীয় যানজটে বিপাকে নগরবাসী
- এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ‘মানসিক চাপে’ ঢাকাবাসী
রমজান ঘিরে অনেক অফিস-কর্মস্থলই বিকেল ৩টার পর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এসময়টাতে রাস্তায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ও গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ করে যানজটে রাজধানীর স্থবির চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্য ভবন, মিন্টু রোড, কাকরাইল, বাংলামোটর, শ্যামলী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, নতুন বাজার এলাকায় দুপুরের পর থেকেই ছিল তীব্র যানজট। এসময়ে অধিকাংশ সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

রাজধানীর বিভিন্ন বাস স্টপেজেও গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকা মানুষের জটলা দেখা গেছে। মগবাজার মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা রাহুল হোসেন। চাকরি করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে।
কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাসায় যেতে হয়। প্রতিদিনই ইফতার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়। তবে মিরপুর এলাকায় বাসা হওয়ার কারণে যেখান থেকে জ্যাম পাই সেখান থেকে মেট্রোরেলে উঠে চলে যাই। আবার যেদিন দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠতে পারি না সেদিন হেঁটে কারওয়ান বাজার গিয়ে মেট্রোরেলে উঠি।
আরও পড়ুন
- প্রিয়জনের সঙ্গে ইফতার করতে সড়কে যুদ্ধ নগরবাসীর
- রমজানে যানজট কমাতে মাঠে থাকবে শিক্ষার্থীরা
- ঢাকার যানজটে বাড়ছে শারীরিক-মানসিক ভোগান্তি
বাংলামোটর মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা মুজাহিদ ইসলামের গন্তব্য গুলশান। তিনি বলেন, অফিস শেষ করে বের হয়েছি। গুলশানে যাবো। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে আছি। গাড়ির সংখ্যা একেবারে কম। দু-একটা গাড়ি পেলেও যাত্রীদের চাপে ওঠার মতো পরিস্থিতি নেই। সবাই ধাক্কাধাক্কি করে গাড়িতে উঠতে চাইছেন। এই রুটে গাড়ি কম থাকায় নিয়মিতই ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বাংলামোটর থেকে আমিনবাজার যাবেন আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, রাস্তায় জ্যামে বসে থাকার চেয়ে হেঁটে চলে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু যাবো তো সেই আমিনবাজার, এতদূর তো হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়েই যানজটের মধ্যে গাড়িতে বসে আছি। যানজটের যে অবস্থা, আজও পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারবো কি না জানি না।
লিটন হোসেন নামের এক যাত্রী গাড়ি না পেয়ে হেঁটে শাহবাগের দিকে যাচ্ছিলেন। গন্তব্য আজিমপুর। কথা হলে তিনি বলেন, বাংলামোটর থেকে নিউমার্কেট-আজিমপুরের গাড়ি খুব কম। রাস্তার যে অবস্থা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠতে না পারলে ইফতার ধরতে পারবো না। শাহবাগ থেকে ওই রুটে অনেক গাড়ি আছে, তাই শাহবাগ যাচ্ছি। শাহবাগে গিয়েও যদি গাড়ি না পাই তবে বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে যেতে হবে।
কেআর/এমকেআর/জেআইএম