‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়’

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পদক্ষেপ বাস্তবায়নে যে বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন, বাৎসরিক বাজেটে তার কোনো প্রতিফলনই নেই, বাজেট তো বাড়েইনি উল্টো হ্রাস পেয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মন্ত্রণালয়সমূহের বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪১ লাখ ২ হাজার ৮শত ৯৭ দশমিক কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০.০৭ শতাংশ এবং জিডিপির ০.৬৭শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে মোট জিডিপির ০.৭৫ শতাংশ ছিল।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এই জলবায়ু বরাদ্দ সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য, অপর্যাপ্ত এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে।
বুধবার (৪ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে ইক্যুইটিবিডি, বিডিসিএসও-প্রসেস, কোস্ট ফাউন্ডেশন, ইয়ুথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক, ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন সুরক্ষা আন্দোলন, এসডিআই, উদয়ন এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট-২০২৫-২৬; জলবায়ু বরাদ্দ এবং নাগরিক সমাজের প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এম রেজাউল করিম চৌধুরী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা ও তীব্রতা উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার ওপর সরাসরি প্রভাবের বিষয়ে উল্লেখ করে জলবায়ু বাজেট বরাদ্দ পুনর্বিবেচনা করার দাবি করেন। তিনি বলেন, উপকূলের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েনি, উপকূলের মানুষের সুরক্ষায় পাথরের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে, সুপেয় পানির সংকট দূরীকরণে অগ্রাধিকার বরাদ্দ দিতে হবে। তিনি বলেন বাজেট হতে হবে জনমুখী এবং যুগোপযোগী।
ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বর্তমান সংকট, ভবিষ্যতের নয়। তিনি জলবায়ু এবং মাটি ব্যবস্থাপনা, বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত নদী শাসন এবং মেগা প্রকল্পগুলোর পরিবেশগত পুনর্মূল্যায়ন সম্পর্কে আরও গভীর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের পানিপথ কনভেনশন অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জানান, যা পূর্বে উপেক্ষিত ছিল। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতার জন্য বিশ্বব্যাপী পানি শাসন কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞাপন
বাগেরহাট, খুলনা এবং সাতক্ষীরায় ৯৬১ কোটি টাকার পানি সংরক্ষণ উদ্যোগসহ গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় এলাকার অনেক প্রকল্প স্থগিত হয়ে আছে, এগুলো চালু করার আহ্বান জানান। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে জেলাভিত্তিক বাজেট বরাদ্দেরও আহ্বান জানান। মোন্তাহার আরাফাত যুবসমাজের অংশগ্রহণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন এবং স্থানীয় দুর্বলতা এবং চাহিদা বিবেচনা করে বরাদ্দ করার আহ্বান জানান।
ইক্যুইটিবিডির সদস্য ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, রাজস্ব উৎসের প্রায় ৮০ শতাংশ পরোক্ষ করের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই ধরনের কর কাঠামো বৈষম্য, মুদ্রাস্ফীতি এবং দারিদ্র্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে দেখা গেছে যে পরোক্ষ করের ১ শতাংশ বৃদ্ধি দারিদ্র্যকে ০.৪২ শতাংশ বাড়িয়ে দিতে পারে। তিনি স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ ছাড়াই প্রণীত এনবিআর সংস্কার প্রক্রিয়ারও সমালোচনা করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের জলবায়ু পরিবর্তন বিভাগের প্রধান এম. এ. হাসান তার মূল বক্তব্যে বলেন, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য টেকসই অর্থনীতির প্রতিফলন হতে পারে না। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জলবায়ু-সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়গুলোর বরাদ্দ জিডিপির ০.৬৭ শতাংশ, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি জলবায়ু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বার্ষিক ১৯ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে এই বরাদ্দ অগ্রহণযোগ্য এবং অপর্যাপ্ত। তিনি জাতীয় বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য জিডিপির ন্যূনতম ৩ শতাংশ বরাদ্দ পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
এসময় আরও বক্তব্য দেন বিডিসিএসও প্রসেসের সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল আকন্দ, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর ডেভেলপমেন্টের সভাপতি মোস্তাহের আরাফাত।
আরএএস/এসএনআর/এএসএম
বিজ্ঞাপন