ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের কথা ভাবতেই বুক কাঁপে জাপানপ্রবাসী মাসুমের

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | জাপান থেকে ফিরে | প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ০৮ জুন ২০২৫

এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ জাপান। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বাংলাদেশের অনেকেরই সে দেশে যাওয়ার সুপ্ত বাসনা রয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে রয়েছেন ৩৫ হাজার বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই জাপানে বসবাস করছেন।

একটি নির্দিষ্ট সময় পর অনেকের জাপানের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ আসে। কেউ সে সুযোগ নেন আবার কেউ নেন না।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি সেদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ পেয়েও শুধু দেশের টানে তা গ্রহণ করেননি এমন একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন জাগো নিউজের পরিকল্পনা সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।

ওই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ জাকির হোসেন মাসুম ওরফে মাসুম জাকির। গাড়ি ব্যবসায়ী মাসুম জাকির সহধর্মিণী ও দুই মেয়েকে নিয়ে সুদীর্ঘ ২৩ বছর ধরে জাপানের টোকিওতে বসবাস করছেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করলেও তিনি জাপানের নাগরিকত্ব নেননি। নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন তা করেননি জানতে চাইলে তিনি জানান, জাপানি নাগরিকত্ব না নেওয়ার মূল কারণ হলো তিনি মনেপ্রাণে একজন বাংলাদেশি এবং তার পরিচয় তিনি বাংলাদেশি। জাপানি নাগরিকত্ব না থাকলেও তার পার্মানেন্ট রেসিডেন্টশিপ রয়েছে। এটা দিয়ে তার সব কাজই চলছে বলে জানান তিনি।

মাসুম জাকির বলেন, জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হলে এখানে নিজের দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা বাধ্যতামূলক। যে কেউ এ দেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে এই মর্মে অঙ্গীকারনামায় সই করতে হয় যে, তিনি সজ্ঞানে ও সুস্থ মস্তিষ্কে তার নিজ দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে জাপানি নাগরিকত্ব নেবেন। এটা লেখার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির অনুকূলে জাপানের নাগরিকত্বের কাগজপত্রে অনুমোদন দিয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

এই ব্যক্তি আরও বলেন, নিজ দেশের নাগরিকত্ব বাতিলে অঙ্গীকারনামায় সই করতে হবে- এমন কথা মনে হলে তার বুকটা কেঁপে ওঠে। যা তিনি কখনো পারবেন না। তিনি তার নিজ দেশকে ভালোবাসেন, তিনি একজন খাঁটি বাঙালি। বাংলাদেশি হিসেবেই তিনি বেঁচে থাকতে চান। তার দুই মেয়ে টোকিওতে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করলেও সম্পূর্ণ বাংলাদেশি পরিবেশে বড় হচ্ছে। সন্তানরা যেন প্রাত্যাহিক জীবনযাপনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে সে চেষ্টাও করে যাচ্ছেন তিনি।

মাসুম জাকির বলেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে জাপানের মতো একটা দেশে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকতে হয়। কারণ এখানে হাত বাড়ালেই সব পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক কিছুই ইসলাম ধর্মে নিষেধ রয়েছে। সেজন্য তিনি দ্বিতীয় প্রজন্মকে সুন্দর করে বাংলাদেশি হিসেবে জীবনযাপনে অভ্যস্ত থেকে যেন সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নিজের মেয়েকে গাড়িতে করে নিজেই স্কুলে পৌঁছে দেন জাকির। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাপানে প্রতিদিন সকালে ট্রেনে খুবই ভিড় থাকে। যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি বা অন্য কোনো উপায়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগ নেই তারা অনেকটা নিরুপায় হয়েই ট্রেনের ভিড় ঠেলে সন্তানদের স্কুলে পাঠান। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে এত ভিড়ের মাঝে যাতায়াত করা বিব্রতকর মনে হয়। এক্ষেত্রে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যর সময় ম্যানেজ করে সকালে নিজেই ড্রাইভ করে মেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দেই। বিকেলবেলা আমার সহধর্মিণী তাদের স্কুল থেকে নিয়ে আসেন।

বিজ্ঞাপন

টোকিওতে প্রতিদিন ভীষণ ব্যস্ততায় কাটলেও মাঝে মাঝে দেশ, দেশের মানুষ, শৈশব-কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে মনটা বিষণ্ন হয়ে যায় বলে জানান মাসুম জাকির।

এমইউ/এএমএ/এমএস

বিজ্ঞাপন