বিশ্ব শরণার্থী দিবস
রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত রোহিঙ্গা-স্থানীয় তরুণরা
বিজয়ী রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি তরুণদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়
বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে এক বর্ণাঢ্য রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সহযোগী মানবিক সংস্থাসমূহের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাংলাদেশি তরুণ বিজয়ীদের সম্মাননা ও বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়।
এবারের দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘শরণার্থীদের সাথে সংহতি’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ক্যাম্প-৪-এ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা ছিলেন- ফায়াজুল ইসলাম (ইংরেজি বিভাগে প্রথম স্থান); শোয়াইব বিন হাসান (বাংলা বিভাগে প্রথম স্থান); সারোয়ার শাহ (প্রথম রানার-আপ); মোহাম্মদ আরস (দ্বিতীয় রানার-আপ)
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা ছিলেন: আহমেদ রাফসান (প্রথম পুরস্কার); ফিওনা নুসাইবা জুহা (প্রথম রানার-আপ); মোহাম্মদ শাহাদ (দ্বিতীয় রানার-আপ)।
প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর প্রধান, অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মানবিক সংস্থাসমূহ ও অংশীদারদের সহযোগিতায় স্থানীয় বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থী তরুণদের সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ‘আমার প্রতিবেশী, আমার বন্ধু’ শিরোনামে এই প্রতিযোগিতাটি গত ২ জুন শুরু হয় এবং শেষ হয় ১৪ জুন। এতে ৮ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশু এবং ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণরা অংশ নেয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মনে রাখতে হবে-আপনারা একা নন। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও স্থানীয় জনগোষ্ঠী আপনাদের পাশে রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা ন্যায় ও সমতার বিশ্বাসী। এটাই আমাদের মূলনীতি, এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও তা অব্যাহত থাকবে।
ইউএনএইচসিআরর সাব অফিস প্রধান ইয়োকো আকাসাকা বলেন, শরণার্থীদের প্রতি সংহতি মানে তাদের কথা শোনা, তাদের কণ্ঠস্বরের জন্য জায়গা করে দেওয়া এবং শুধু নিরাপত্তা নয়—অধিকার, উদ্দেশ্য ও আশার পথ খুঁজে পেতে তাদের পাশে থাকা। আমাদের বার্তা স্পষ্ট: তোমাদের ভুলে যেতে দেওয়া যাবে না; আমরা তোমাদের পাশে আছি।
আইওএম এর চিফ অব মিশন ল্যান্স বনো বলেন, সংহতির উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীরা শরণার্থীদের জীবন, তাদের সহনশীলতা ও স্বপ্নকে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একদিন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্মানের সঙ্গে তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারবে। এখন পর্যন্ত তাদের পাশে থেকে স্বাগতিক জনগোষ্ঠী ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে।
আইএসসিজির প্রধান সমন্বয়কারী ডেভিড বাগডেন বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের উদার সংহতি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এ দেশে আশ্রয় নিতে সক্ষম করেছে। সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদাররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। আমরা সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের সহানুভূতি ও সচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসটি পালন করা হয়।
জেএইচ/এএসএম