ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সরকার-ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আস্থার সংকট আছে

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১৬ জুলাই ২০২৫

আগামী রোজা বা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

দীর্ঘদিন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন থেকে দূরে বাংলাদেশ। আগামী নির্বাচন ঘিরে সব শ্রেণির মানুষের প্রত্যাশা একটু বেশি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন ও প্রশাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ রানা

জাগো নিউজ: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে সরকারের করণীয় কী?

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আবদুল আউয়াল মজুমদার: অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মূলত নির্ভর করবে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার ওপর। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করেছি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলেই তখন একটা মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা তৈরি হতো যে, না এরা কোনো পক্ষে যাবে না। এরা কাউকে ছাড় দেবে না। নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে। বর্তমান সরকার নিয়ে মানুষের এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে আমার মনে হয় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

জনগণ যেন বুঝতে পারে এ সরকার কোনো পক্ষ নেবে না, কোনো ছাড় দেবে না, নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে। জনগণের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করা হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মহৌষধ

সাহাবুদ্দীন সাহেবের (অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ) সরকার, হাবিবুর রহমান সাহেবের (অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান) সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন মানুষের মনে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছিল, এ সরকারের ক্ষেত্রে আমার মনে হয় এ বিষয়ে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জাগো নিউজ: সরকারের কোন কর্মকাণ্ডের কারণে এ ঘাটতির বিষয়টি মনে হয়েছে?

আবদুল আউয়াল মজুমদার: এ সরকার কখনো এদিকে কখনো ওদিকে ছিল। উপদেষ্টাদের নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। যারা বিপ্লব করেছে সরকার তাদের ঘনিষ্ঠ- নানান ধরনের কথা রয়েছে। তাই নানান কারণে তাদের আস্থার জায়গায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে এটা আমার বোঝার ভুল হতে পারে। তবে সরকারকে এ ঘাটতিটা দূর করতে হবে।

তবে গত ৯ জুলাই সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক যে কথাগুলো বলেছে, সেগুলো ভালো বলেছে। জনগণ যেন বুঝতে পারে এ সরকার কোনো পক্ষ নেবে না, কোনো ছাড় দেবে না, নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে। জনগণের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি করা হলো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য মহৌষধ।

বিজ্ঞাপন

প্রশাসনের শীর্ষে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের মাঠে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই। এছাড়া তারা দীর্ঘদিন প্রশাসন থেকে দূরে ছিলেন। তাদের সেই দুর্বলতা দূর করতে হবে

জাগো নিউজ: নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তির বিষয়ে কী বলবেন?

আবদুল আউয়াল মজুমদার: নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হতে হলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা, নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের আস্থা থাকা আবশ্যক। নির্বাচন কমিশন যদিও বেশি কিছু করে না। নির্বাচন কমিশন মূলত নির্বাচনে মধ্যস্থতাকারী বা রেফারি হিসেবে কাজ করে। তারপরও তাদের একটা আস্থার বিষয় আছে। এ নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও জনগণের আস্থার সংকট আছে বলে আমি মনে করি। একেক রাজনৈতিক দল একেক কথা বলছে তাদের নিয়ে। এছাড়া যাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তারা খুব একটা পরিচিত নন। সেটাও কিন্তু একটা বিষয়। এখানে একটা দুর্বলতা আছে।

জাগো নিউজ: এ ঘাটতি পূরণে নির্বাচন কমিশনের করণীয় কী?

বিজ্ঞাপন

আবদুল আউয়াল মজুমদার: রউফ সাহেব (বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ) যখন সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) হয়েছেন, উনি তখন মাঠ পর্যায়ে গিয়েছেন। আমরা তখন ইউএনও, আমাদের অ্যাড্রেস করেছেন। তিনি কড়া বার্তা দিয়েছেন। বর্তমান কমিশনও এমন কিছু করতে পারে, তাদের ঘাটতিটা দূর করতে হবে।

ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসির কোনো প্রার্থী বা দলের প্রতি যদি কথাবার্তা নমনীয় বা খাতির ভাব দেখা যায়, এটা ক্ষতির কারণ হবে। সব প্রার্থীর প্রতি তাদের আচরণ সমান হতে হবে, এটা দৃশ্যমান হতে হবে

বর্তমান সিইসি গতকাল একটা কথা বলেছেন, এটি আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি বলেছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের তো ইমেজ অনেক নষ্ট হয়েছে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সেটা রিগেইন করার সুযোগ নিতে পারে। এ কথাটা আমার ভালো লেগেছে।

জাগো নিউজ: ভালো নির্বাচন উপহার দিতে মাঠ প্রশাসন কতটা প্রস্তুত বলে মনে করেন?

বিজ্ঞাপন

আবদুল আউয়াল মজুমদার: প্রশাসনের শীর্ষে থাকা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের মাঠে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব একটা নেই। এছাড়া তারা দীর্ঘদিন প্রশাসন থেকে দূরে ছিলেন। তাদের সেই দুর্বলতা দূর করতে হবে। এজন্য তাদের মাঠে-ঘাটে মানুষের কাছে যেতে হবে। কথা বলতে হবে।

নির্বাচনের ক্ষেত্রে ডিসি (জেলা প্রশাসক) ও ইউএনওদের (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। ভোটের মূল কাজটা তারাই করেন। তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর পুলিশের অবস্থান নির্ভর করে। পুলিশ মূলত ডিসি-ইউএনওদের দিকে তাকিয়ে থাকে যে, তারা কী করছেন। ডিসি-ইউএনও যদি শক্ত অবস্থানে থাকে, তবে পুলিশেরও মোটামুটি অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে না।

এছাড়া প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগ যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে করা যায়, কারণ ইউএনওরা তো মোটামুটি লোকজন চেনেন। তারা যদি নিরপেক্ষ লোক, ভালো ইমেজ আছে এমন লোক নিয়োগ করেন এবং এদের যদি যেখানে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সেখানে দেন, তবে ভোট ভালো হবে।

বিজ্ঞাপন

এখন ডিসি ও ইউএনওরা যদি দরদ দিয়ে সাহস এবং আন্তরিকতার সঙ্গে এ কাজগুলো করেন। তারা যদি মনে করেন কারা ক্ষমতায় আসবে না আসবে সেটা পরের কথা, তবে এখন নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য যা কিছু করা দরকার আমি করবো। তাহলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে।

জাগো নিউজ: নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা কতটা জরুরি?

আবদুল আউয়াল মজুমদার: ডিসি, ইউএনও, এসপি, ওসির কোনো প্রার্থী বা দলের প্রতি যদি কথাবার্তা নমনীয় বা খাতির ভাব দেখা যায়, এটা ক্ষতির কারণ হবে। সব প্রার্থীর প্রতি তাদের আচরণ সমান হতে হবে, এটা দৃশ্যমান হতে হবে।

সরকার বলেছে, ভোটের আগে ডিসি-ইউএনও, এসপি-ওসিদের সরিয়ে দেওয়া হবে। সেটা ভালো হবে। যদিও ভোটের আগে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যেটা করে, এবার সেই অবস্থা নেই।

জাগো নিউজ: ভোট সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও কতটা আন্তরিকতা দেখছেন?

আবদুল আউয়াল মজুমদার: ভোট সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও সহযোগিতা দরকার। আমাদের দেশের মতো দেশে সেটা পাওয়া কঠিন। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সেই শেপের মধ্যে আসেনি, তারা সুযোগ পেলেই দুষ্টামি করার চেষ্টা করবে। নিজেদের অবস্থা ভালো করার চেষ্টা করবে। তারা যদি মনে করে হারি-জিতি কিন্তু, আমরা নির্বাচনটা স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু চাই- তবে সরকারের পক্ষে কাজটা করা সহজ হয়ে যাবে।

আরএমএম/এএসএ/এমএফএ/এএসএম

বিজ্ঞাপন