ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

গবেষণা

উপকূলে দুর্যোগের শিকার পরিবারগুলোর মাত্র ১৮ শতাংশ সহায়তা পান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৫

খুলনার কয়রায় পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে, গত পাঁচ বছরে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৯৯ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনো জলবায়ুজনিত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবারের মধ্যে যে কোনো ধরনের সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেয়েছে মাত্র ১৮ শতাংশ।

গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে ‘জলবায়ু অভিবাসীদের টেকসই অভিযোজন ও সহনশীলতা তৈরিতে অধিকারভিত্তিক মডেল প্রকল্প)’ এর আওতায়। অংশগ্রহণমূলক গবেষণায় কয়রা উপজেলার ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে ছিল থানা জরিপ, ফোকাস গ্রুপ আলোচনা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সাক্ষাৎকার ও কমিউনিটি প্রোফাইলিং।

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) আয়োজিত ‘উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির টেকসই ভূমিকা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা ও গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম ওকাপের রিসার্চ ম্যানেজার ঊর্মী জাহান তন্নি প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, দুর্যোগের প্রভাব স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে দুর্বল করে ফেলেছে। কয়রার ৭৯ শতাংশ পরিবার এখনো কাঁচা ঘরে বাস করে, ৭০ শতাংশ পরিবার কাঁচা টয়লেট ব্যবহার করে এবং ৪২ শতাংশ পরিবার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের বোঝায় জর্জরিত। অনেক পরিবার এক ঋণ শোধ করতে আরেক ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

জীবিকা হারানো, কৃষি ও মৎস্যভিত্তিক আয় বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ঋণের চাপের কারণে কয়রার ৭ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য অন্য জেলা কিংবা বিদেশে অভিবাসনে বাধ্য হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর বিষয়ে সচেতনতা থাকলেও বাস্তবে এসব সুবিধা প্রাপ্তির হার অনেক কম। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ বয়স্ক ভাতা সম্পর্কে জানলেও মাত্র ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ এই ভাতা পেয়েছে। বিধবা ভাতা সম্পর্কে জানেন ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ নারী, কিন্তু পেয়েছেন মাত্র ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। বিশেষ করে প্রতিবন্ধী এবং জলবায়ুর কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো যাচাই-বাছাই, নথিপত্র এবং ডিজিটাল প্রক্রিয়ার কারণে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি বঞ্চিত হচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ঊর্মী জাহান তন্নি বলেন, গবেষণায় দেখেছি, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা রয়েছে। এর মধ্যে উপযুক্ত পরিবার চিহ্নিত করতে না পারা, আবেদন প্রক্রিয়ার জটিলতা, দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার অভাব, ডিজিটাল অবকাঠামোর দুর্বলতা, এবং সার্ভার ডাউনসহ নানা প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই বাস্তবতা থেকে উত্তরণের জন্য গবেষণায় বেশ কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চাহিদাভিত্তিক অভিযোজিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যেখানে দুর্যোগ তথ্য ও গৃহস্থালী প্রোফাইল ব্যবহার করে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে উপকারভোগী নির্বাচন করা সম্ভব হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্যোগ আসার আগেই পূর্বাভাসের ভিত্তিতে নগদ সহায়তা চালু করলে অনেক পরিবার জীবিকা হারানোর আগেই টিকে থাকার সুযোগ পাবে। একই সঙ্গে নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধীদের জন্য বাড়তি সুবিধা ও বিশেষ অ্যাকসেস চ্যানেল চালুর কথাও বলা হয়েছে। মোবাইল পেমেন্ট এবং এসএমএস-ভিত্তিক সেবার মাধ্যমে এসব সুবিধা সহজে পৌঁছানো, দুর্নীতি কমানো এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বিত ডেটাবেস গড়ে তোলার সুপারিশও করা হয়েছে, যাতে দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে দ্রুত সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয়।

খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে আসা ভুক্তভোগী মাসুমা আক্তার বলেন, আমি আইলার ভুক্তভোগী। উপকূলীয় এলাকায় কর্মসংস্থানের বড় অভাব। তরমুজ চাষ শুরু করছিলাম, কিন্ত আমরা সময়মতো বৃষ্টি পাই না। ধান চাষ করব, কিন্ত সেখানে আবার প্রচুর বৃষ্টি, ধানও চাষ করতে পারিনি। লবণাক্ততার কারণে আমরা আসলে কিছুই করতে পারি না। এদিকে নদীভাঙ্গন তো আছেই। আমাদের অনুরোধ অন্তত নদীভাঙ্গনটা রোধ করা, প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। যাতে করে আমাদের অভিবাসনটা যেন না হয়।

এ সময়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আব্দুল ওয়াদুদ, ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার (জলবায়ু ও পরিবেশ) মোস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার আশফাকুর রহমানসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

আরএএস/এএমএ/জেআইএম