ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

মানবাধিকার শুধু আইন দিয়ে হবে না: আসিফ নজরুল

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | প্রকাশিত: ০৩:৪১ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২৫

মানবাধিকার একটা সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, এটা শুধু আইন দিয়ে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, সবার রিয়েলাইজেশন (উপলব্ধি) লাগবে, আত্মশুদ্ধি লাগবে। আমাদের প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বচ্ছতা লাগবে। আমাদের আত্মসমালোচনা করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে। এগুলোর সঙ্গে যখন আমরা আইনগত পরিবর্তন করবো, প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন করবো, তখন একটা সত্যিকার অর্থে পরিবর্তন আসতে পারে।

শনিবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি আয়োজিত ‘১১তম মানবাধিকার সম্মেলন-২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সবচেয়ে আগে ফিক্সড (নির্ধারণ) করা দরকার রাষ্ট্রের প্রধান তিনটা অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ। আগে এই তিনটা অঙ্গের প্রব্লেম সলভ (সমস্যা সমাধান) করতে হবে। এখানে প্রব্লেম রেখে তথ্য কমিশন করে, হিউম্যান রাইটস কমিশন করে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে আসলে কোনো লাভ হবে না। আসল জায়গায় হাত দিতে হয়।

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকে মনে করে, মানবাধিকার বাস্তবায়ন ইউরোপে হয়েছে, আমেরিকায় হয়েছে। তারা নিজের দেশের ভেতরে করেছে। কিন্তু তারা সারা পৃথিবীতে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করার কাজে নিয়োজিত আছে।

‘এটা আপনারা ভালো করেই জানেন। কীভাবে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেয়, অস্ত্র বিক্রি করে। অত্যাচারী শাসকদের সাপোর্ট করে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। এখনো এটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জের মতো রয়ে গেছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার ভয়টা চলে গেলে তখন কী দানবে পরিণত হয় সেটা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট আমল থেকে আমরা বুঝতে পারি। যেটার কারণে আমাদের এক হাজারেরও বেশি ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে চিরস্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে হয়েছে। কত কঠিন ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের, তা উপলব্ধির করে সার্বিকভাবে চিন্তা-চেতনার প্রয়োজন আছে। আমরা আশাবাদী থাকবো। কিন্তু আমরা যেন ইউটোপিয়ান হয়ে না যাই।

সেমিনারে ঢাবির আইন অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ একরামুল হক বলেন, কাগজে অনেক কথা লেখা থাকে। আমরা চাই প্রোপার ইমপ্লিমেন্টেশন (বাস্তবায়ন)। মানবাধিকার যদি লঙ্ঘন হয় তাহলে বিচার হবে আদালতে। কিন্তু আদালতকে যদি আমি ফ্যাসিজমের (স্বৈরাচারের) একটা অংশ করে ফেলি তাহলে আমি সংবিধানে যতই ভালো কথা লিখি, সেটি কোনো দিন হবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস এনফোর্সমেন্টের (মানবাধিকার প্রয়োগ) জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা বিশাল রোল (ভূমিকা) আছে। তাদের বলতে হবে যে আমি কোনো দলের দাস হিসেবে কাজ করবো না, আমি আইন অনুযায়ী চলবো।

ড. মুহম্মদ একরামুল হক আরও বলেন, ২০২৪ সালে অথরিটারিয়ান রেজিম (কর্তৃত্ববাদী শাসনে) পতনের পর দেশের সামনে বিরল এক মোমেন্টাম এসেছে। এখন সময় দেশের বাস্তবতা অনুযায়ী গভর্নেন্সে (সরকারে) জবাবদিহি ও সংস্কার আনার। এসবের মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

সেমিনারে আওয়ামী শাসনামলে গুম হওয়া আহমেদ বিন কাশেম ও মাইকেল চাকমা, জুলাই অভ্যুত্থানে আহত দুই জুলাইযোদ্ধা এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ নাইমা সুলতানার এবং শাহরিয়ায় খানের মা বক্তব্য প্রদান করেন।

শহীদ শাহরিয়ার খানের মা সানজিদা খান বলেন, আমরা এমন রাষ্ট্রে বাস করি যেখানে প্রতিটা ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। আমার ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি আমার সন্তানের বুকে বিদ্ধ হয়েছে, আমার দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী আমার সন্তানের ঘাতক। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তানেরা রাজপথে নেমেছিল, সেখানেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ হয়তো নেই যে দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী ওই দেশের সাধারণ মানুষের ঘাতক।

মাইকেল চাকমা বলেন, আমাকে তুলে নেওয়ার পর আমার পরিবার, মানবাধিকারকর্মীসহ অনেকে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেছেন। একপর্যায়ে আমার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। আমার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে মারা যান। তারা (পরিবার) একসময় আমারও শেষকৃত্য করে নেয়। একটা পরিবার কতটুকু আশাহীন হলে শেষকৃত্য করে নেয়!

তিনি বলেন, আমরা সেই অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ছি। কিন্তু এখনো প্রশ্ন রয়ে যায় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কেমন হবে। এই বাংলাদেশে নানা জাতির বর্ণের মানুষ বাস করি, আমরা যেন এক হয়ে বাস করতে পারি। আমি আশাবাদী, আমি আমার ন্যায্য অধিকার আদায়ের যে লড়াই, সেই লড়াই এখনো চালু রেখেছি।

এ সময় আগত অতিথিরা মানবাধিকার অলিম্পিয়াডে জয়ী ১০ জন বিজয়ীকে ব্যাগ, সম্মাননা স্মারক, সনদ ও সম্মাননা অর্থ তুলে দেন।

এফএআর/ইএ/এমএস