স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তফসিলের আগে লটারির মাধ্যমে এসপি-ওসিদের পদায়ন
সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সভায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা/ ছবি: জাগো নিউজ
আগামী নির্বাচনের তফসিলের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) ও ওসিদের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) পদায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (৬ আগস্ট) সচিবালয়ে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে আয়োজিত সভা শেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আগামী নির্বাচনে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন এবং তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গতকাল জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। সেটারই ধারাবাহিকতায় আজ আমাদের এই মিটিং ছিল। মিটিংয়ে মূলত নির্বাচনের সময় যে লজিস্টিকগুলো লাগে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা চেষ্টা করব একটা জিনিস যেটা নিয়ে সব সময় আপনাদের প্রশ্ন থাকে যে, ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি- এরা নির্বাচনে একটা ভাইটাল রোল প্লে (মূল ভূমিকা পালন) করে। আপনাদের একটা সন্দেহ থাকে...বিভিন্ন প্রার্থীরা চায় যে তার পরিচিত কোন ডিসি, এসপি, ইউএনও বা ওসি (নিজের নির্বাচনী এলাকায়) নিতে পারে কি না। এবার আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এটা প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা থেকে। সিদ্ধান্তটা হলো- আমরা বিশেষ করে পুলিশ বিভাগের এসপি এবং ওসিদের সবার সামনে লটারির মাধ্যমে পোস্টিংটা (পদায়ন) আমরা করে দেব। এখন যারা যেখানে আছে, তাদেরই আমরা বিভিন্ন জায়গায় পদায়ন করবো। সেটা আমরা লটারির মাধ্যমে করে দেব। যেন কারো কোনো ধরনের সন্দেহ না থাকে যে, সে অমুকের সাপোর্টার।
আরও পড়ুন
এসপিদের লটারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই হবে। ওসিদের বিভাগভিত্তিক পোস্টিং করে লটারি হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কিছুদিন আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসিদের পদায়ন করা হবে।
আপনারা জানেন শিডিউল ঘোষণা করার পর বদলি-পদায়নের বিষয়গুলো চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। এজন্য আমরা আমাদের কাজটা করে দেবো। তারপরও যদি নির্বাচন কমিশন চায় তারা পরিবর্তন করবে, সেটাও তারা করতে পারবে।
উপদেষ্টা বলেন, তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (ডিসিদের পদায়ন) কীভাবে করবে সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আশা করি তারাও এটা করবে। তাদের ক্ষেত্রে তো আমি পুরোটা বলতে পারব না।
প্রতি কেন্দ্রে দেওয়া হবে একটি বডি ক্যামেরা
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আর একটা বিষয় হলো, নির্বাচনে কি সংখ্যক ফোর্সের দরকার হবে ভালোভাবে ইলেকশনটা পরিচালনা করার জন্য। আমরা সেখানে একটা বডি ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করব। সেটা কীভাবে কিনতে হবে এবং কার কাছে থাকবে- এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বডি ক্যামেরাটা কারা পাবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ৪৭ হাজার ভোট কেন্দ্রের প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে বডি ক্যামেরা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ বডি ক্যামেরা থাকবে সেখানে পুলিশের যে সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ তার কাছে।
নির্বাচনে থাকবে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য সময় যেমন আপনারা জানেন প্রিজাইডিং অফিসাররা অন্যের বাসায় থাকে, এবার যেন তারা কেন্দ্রেই থাকতে পারে সেটার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের সঙ্গে আনসার, পুলিশ সবাই থাকবে।
এছাড়া সব বাহিনীগুলোকে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। নির্বাচন কমিশনকে আমরা অনুরোধ করেছি, তারা যাতে পোলিং এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। প্রশিক্ষণের পর আমাদের বাহিনীর সদস্যগুলোকে নিয়ে আমরা একটা মহড়াও দিব। নির্বাচনটা যাতে ভালোভাবে হতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংখ্যা মোট আট লাখের মতো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাহিনীগুলো তাদের নিজেদের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেবে। যার যার ভেন্যুতে প্রশিক্ষণ হবে।
ভোটের সময় পুলিশের বিরুদ্ধে যদি কারচুপির অভিযোগ ওঠে সেজন্য আগে থেকেই কি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেবেন? এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব। আপনাদের সহযোগিতা পেলে আমার মনে হয় কোন ধরনের কোন সমস্যা হবে না। আল্লাহ দিলে নির্বাচন খুব ভালোভাবে হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামে একজন এসপি রাজনৈতিক নেতাদের মতো বক্তব্য দিয়েছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমি জিনিসটা জানি না, তাই এ বিষয়ে কি বলবো।
আগামী নির্বাচনে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে এবং তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।
আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস