ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

এনসিপির প্রতীক নিশ্চিত করবে ইসি, বাছাইয়ে ৭ দল বাদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতীক নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিশ্চিত করবে বলে জানিয়েছেন ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ২২ দলের সরেজমিনে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের শর্ত পূরণ করায় এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া তিন দলের বিষয়ে আরও বিস্তারিত পর্যালোচনা প্রয়োজন। ৯ দলের তথ্য অধিকতর যাচাই করা হবে। বাকি সাত দল বাদ পড়েছে এবং একটি দল আদালতের আদেশে নিবন্ধন পাবে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

আখতার আহমেদ বলেন, আজ রাতেই নিবন্ধনযোগ্য এসব দলের বিষয়ে কারও কোনো আপত্তি আছে কি না জানতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে ইসি। তবে এনসিপির প্রতীক এখনো নিশ্চিত হয়নি। কারণ তারা শাপলা প্রতীক পেতে চায়। এজন্য এনসিপির প্রতীক ইসি নিশ্চিত করে দেবে। ১১৫টি প্রতীকের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ইসি। কিন্তু সেখানে শাপলা নেই।

অন্যদিকে, ইসিতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় লীগের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম। দলটির ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাসা ১/১, রোড-৩, ব্লক এ, টানপাড়া আঁটি, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা, ১৩১২। তবে দলটির চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।

নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, ‘এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগ প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন শর্ত পূরণ করেছে। এখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এননিপির চাওয়া শাপলা প্রতীক তালিকায় না থাকায় দলটি তা পাবে না বলে জানানো হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি থাকতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণও থাকতে হয়। নিবন্ধন পেলে এসব দল ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

যে তিন দলের বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনা
বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (শাহজাহান সিরাজ)।

অধিকতর যাচাই করা হবে যে ৯ দলের তথ্য
আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল মার্কসবাদী, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ভাষানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, জনতার দল, মৌলিক বাংলা, জনতা পার্টি বাংলাদেশ।

বাদ পড়লো যে সাত দল
ফরওয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ, বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি।

আদালতের আদেশে নিবন্ধন পাবে যে দল
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি আদালতের আদেশে নিবন্ধন পাবে।

প্রাথমিক বাছাইয়ের পর যে ২২ দলের সরেজমিন তদন্ত
ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলিউশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

দলকে ভোটে অংশ নিতে ইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।

নিবন্ধন যাত্রার ১৭ বছর
>> এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি নবম সংসদ নির্বাচনের সময় ৩৯টি দল নিবন্ধন দেয়। ২০০৮ সালে শর্তসাপেক্ষে নিবন্ধন পেলেও স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় নবম সংসদ নির্বাচনের ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল হয়।

>> কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন ইসি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দল নিবন্ধন দেয়। এদিকে, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

>> কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নিবন্ধনযোগ্য কোনো দল পায়নি। তবে আদালতের আদেশে কয়েকটি দল পরে যুক্ত হয়।

>> কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন ইসি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দুটি দলের নিবন্ধন দেয়।

>> একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইসির প্রকাশিত গেজেটে বলা হয়, আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় আরপিও অনুযায়ী দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে এ বছর নিবন্ধন পুনর্বহাল হলো।

>> ২০১৭ সালে নিবন্ধিত দলগুলোর কমিটি ও অফিসের খোঁজে মাঠে নামে ইসি। শর্ত পালনে ব্যর্থ দলগুলোর নিবন্ধন বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়; এ ধারাবাহিকতায় পিডিপি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও জাগপার নিবন্ধন বাদ যায়।

দীর্ঘ একযুগ পর সবশেষ জুনে নিবন্ধন পুনর্বহাল হয় জামায়াতের। এর আগে মে মাসে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পর নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে। দেশের এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫১টি।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবি পার্টি, নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর আদালতের আদেশে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির পর বিএমজেপি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি নিবন্ধন পেল।

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধন হাতে নেয় ইসি। ১৪৩টি দল আবেদন করলেও প্রাথমিক বাছাইয়ে ঝরে পড়ে ১২১টি। এরপর ২২ দলের তদন্ত করা হয়। এরপর মঙ্গল দুটি নিবন্ধন পেল।

সরেজমিন তদন্ত শেষে নিবন্ধনযোগ্য ২ দলের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হওয়ার আপত্তি থাকলে তা শুনানি শেষে নিবন্ধিত দলের নাম চূড়ান্ত করে গেজেট করা হবে এবং দলটিকে প্রতীকসহ নিবন্ধন সনদ দেওয়া হবে।

এমওএস/এমএএইচ/এএসএম