রাশিয়ার ‘যুদ্ধফাঁদে’ কেউ নিহত কেউ নিখোঁজ
ছবি-জাগো নিউজ
চট্টগ্রামের অমিত বড়ুয়া (২৯) রাশিয়ায় সিনোপেক নামে একটি কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে যোগ দেন ২০২৪ সালের অক্টোবরে। স্বপ্নবাজ এ তরুণের আশা ছিল, তার উপার্জনে পরিবারের কষ্টের দিন ঘুচবে। চাকরিতে যোগ দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় বাবা মারা গেলে দেশে ফিরতে চেয়েও পরে বাস্তবতা মেনে কাজে মন দেন। ভিডিও কলে স্বজনদের জানাতেন, কয়েকজন রাশিয়ান তাকে ভাষা শেখাচ্ছেন, কাজও চলছে ঠিকঠাক।
অমিতের সঙ্গে তার স্ত্রীর শেষবার কথা হয় এ বছরের ২৯ এপ্রিল। কিন্তু এর মাত্র পাঁচদিন পর ৪ মে এক বাংলাদেশি সহকর্মী ফোন করে তার বড় ভাই সুমিত বড়ুয়াকে জানান, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় অমিত নিহত হয়েছেন। তারপর থেকে তার বিষয়ে আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার।
আমার ভাই বেঁচে আছে না মারা গেছে, এমনকি মরদেহ কোথায়, কিছুই জানি না। যে তরুণ আমার ভাইয়ের সঙ্গে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ছিল তারও আর খোঁজ পাচ্ছি না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, এমনকি রিক্রুটিং এজেন্সি বন্যা বিজয়ে গিয়েছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি।- নিহত অমিত বড়ুয়ার বড় ভাই সুমিত বড়ুয়া
জাগো নিউজকে সুমিত জানান, রাশিয়ায় থাকা অমিতের সহকর্মীদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে জানতে পারেন, সিনোপেক কোম্পানির মাধ্যমে নেওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে অনেককেই জোর করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। এরপর তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়। যেখানে মাইন বিস্ফোরণে অমিতের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুমিত বলেন, ‘আমার ভাই বেঁচে আছে না মারা গেছে, এমনকি মরদেহ কোথায়, কিছুই জানি না। যে তরুণ আমার ভাইয়ের সঙ্গে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে ছিল তারও আর খোঁজ পাচ্ছি না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, এমনকি রিক্রুটিং এজেন্সি বন্যা বিজয়ে গিয়েছি। কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। আরও অনেক পরিবারকে দেখেছি, যাদের ছেলেরা যুদ্ধে গিয়ে আর ফেরেনি।’
আমাদের এখান থেকে যাওয়ার পর দুজন প্রলোভনে পড়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর তারা যুদ্ধ না কি কিসে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের পরিবারও অর্থের লোভে সাই দিচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।-বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক শওকত আলী
কোম্পানির কাজে যাওয়া
রাশিয়ায় যুদ্ধরত অবস্থায় নিখোঁজ ও নিহত এমন অন্তত ১৫ জনের পরিবারের প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনের ১০টি কপি জাগো নিউজ সংগ্রহ করেছে। পরিবারগুলো জানিয়েছে, কোম্পানিতে কাজ দেওয়ার নাম করেই তাদের স্বজনদের রাশিয়া নেওয়া হয়েছে। তারপর তাদের দেশটির সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। অনেকে যুদ্ধে মারা যাওয়ার পর পরিবার জানতে পেরেছে যে তিনি রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন।
গত ৭ জুন রাশিয়ার এক যুদ্ধের ময়দানে ইউক্রেন বাহিনীর ড্রোন হামলায় নিহত হন সাভারের আশিকুর রহমান (৩০)। তার বাবা বাদশা মিয়া ছেলের মরদেহ দেশে ফেরানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এখনো এগুলোর লাইসেন্স চালু আছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।- প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এ জেড এম নুরুল হক
একই যুদ্ধের ফাঁদে আটকে গেছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার নাজির আহমেদ। তিনি গত বছরের জুলাই মাসে রাশিয়ার আমুর গ্যাস কেমিক্যাল কোম্পানিতে কাজের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। কিন্তু পরে কম বেতন ও অতিরিক্ত কাজের চাপে হতাশ হয়ে পড়েন। সেই সুযোগে এক রুশ নাগরিকের প্রলোভনে পড়ে অজান্তেই সই করে ফেলেন সেনা চুক্তিপত্রে।
আরও পড়ুন
১০ বাংলাদেশিকে রাশিয়ায় পাচার, জোর করে নামানো হয়েছে যুদ্ধে
রাশিয়ার নাগরিকত্ব ও দুই বিলিয়ন টাকার জন্য যুদ্ধে অংশ নেন আকরাম
তরুণদের রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোয় এজেন্সির নিবন্ধন বাতিল
কিছুদিন পর নাজিরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় আভদিভকা রণাঙ্গণে। সেখান থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘ছয় মাস ধরে আমাকে জোর করে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আমি অসুস্থ, জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমি শুধু দেশে ফিরতে চাই। আমি দোনেৎস্ক প্রদেশের আভদিভকা শহরের তিন নম্বর আর্মি ইউনিটে আছি। শরীর খুব খারাপ। চার মাস পর আজ প্রথম গোসল করলাম, চুল-দাড়ি কাটলাম।’
রাশিয়ায় যুদ্ধরত ফয়সাল নামে আরেক বাংলাদেশির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। তবে দেশে তার পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তার ভাই বলেন, ‘অনেক কথা বলেছি। মন্ত্রণালয়ে হেঁটেছি। কিন্তু আমাদের ভাইকে উদ্ধার করতে পারিনি। তাই এখন সবকিছু ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের যুবক আকরাম মিয়ার স্বজনদের আহাজারি। তিনি গত এপ্রিলে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে নিহত হন/ছবি: জাগো নিউজ
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের মহাসিন আহমেদকে ঝালাই মিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে রাশিয়ায় নিয়ে জোরপূর্বক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। সেখানে তার ব্যাচ নম্বর এবি-৯৩৭৫৪৩। তার ভাই মাহফুজ মিয়া বলেন, ‘আমার ভাই যুদ্ধে আছে। যে কোনো মুহূর্তে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে। এমন অবস্থা থেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে দেশে আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
রাজবাড়ির আরমান মণ্ডলকে সৌদি আরব হয়ে রাশিয়ায় নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর তাকে সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ যুদ্ধ থেকে ভাগ্যবান কেউ কেউ বেঁচে ফিরতে পেরেছেন। এমন তিনজনের কথা জানতে পেরেছে জাগো নিউজ। তাদের একজন নরসিংদীর আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনজন সিনোপেক কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতে রাশিয়া যাই। পরে জানানো হয় সেনাবাহিনীতে ইলেকট্রিক কাজের লোক লাগবে। যোগ দেওয়ার পর বুঝলাম আমাদের সৈনিক বানিয়ে যুদ্ধে পাঠানো হচ্ছে।’ তারা পরে ছুটি নিয়ে দেশে ফেরেন।
আমিরুলের অভিযোগ, তিনি মানবপাচারের শিকার হয়েছিলেন। এখন দায়ী রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে এজেন্সি তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।
রাশিয়ায় পাচারের পর যুদ্ধে গিয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির নিহত ও তার ভগ্নিপতি রহমত আলী নিখোঁজ হন/ছবি: সংগৃহীত
বিদেশি যোদ্ধা
ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বিদেশি রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, যার অর্ধেকই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার। তাদের মধ্যে ভারতীয়দের পরই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি।
চলতি বছরের এপ্রিলে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, অন্তত ১২টি পরিবার অভিযোগ করেছে যে তাদের সন্তানদের প্রতারণার মাধ্যমে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে পাঠানো হয়েছে। পরিবারগুলো দূতাবাসের কাছে প্রিয়জনদের ফিরিয়ে আনার অনুরোধ জানিয়েছে।
বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা এ হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। সম্ভবত কয়েকশ বাংলাদেশি এভাবে রাশিয়ায় পাচার হয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত হয়েছেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২৪ সালের ২ জুলাই একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যাতে বিদেশিরা শুধু জরুরি অবস্থা বা সামরিক আইন নয়, বরং সেনা সমাবেশের সময়ও দেশটির সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে পারবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ সিদ্ধান্তের পর বিদেশিদের টানতে নতুন করে সক্রিয় হয় দালাল ও রিক্রুটিং চক্র।
ইউক্রেন ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচারকারীরা ৪৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে দক্ষিণ এশীয় নাগরিকদের রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে বিক্রি করছেন। তবে এখন পর্যন্ত রাশিয়া বা ইউক্রেন- কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তাদের সেনাবাহিনীতে কতজন বিদেশি কাজ করছেন বা কতজন যুদ্ধবন্দি অবস্থায় আছেন।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামে বাকরুদ্ধ স্বজনেরা/ছবি: জাগো নিউজ
সিনোপেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইউক্রেনের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থা (এনএসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, চীনের তিন বৃহৎ তেল কোম্পানি- সিনোপেক, সিএনওওসি ও সিএনসিপিকে তারা যুদ্ধের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। কারণ কোম্পানিগুলো রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটির কৌশলগত শিল্পে উল্লেখযোগ্য কর ও রাজস্ব দিচ্ছে, যা সরাসরি যুদ্ধকে অর্থায়ন করছে।
বন্যা বিজয় ওভারসিজ
রাশিয়ার সিনোপেক কোম্পানিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সামনে এসেছে বন্যা বিজয় ওভারসিজ নামে একটি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম। এর আগে গত সরকারের সময়ে মিথ্যা প্রতিশ্রুতিতে আলজেরিয়ায় অভিবাসনের নামে মানবপাচারের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। তারপরও বর্তমান সরকারের সময় রাশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে বিতর্কিত এ এজেন্সিটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু আলজেরিয়ায় মানবপাচারের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জেই মামলা হয় ৯টি। এর মধ্যে একটি থানায় এবং বাকি আটটি মামলা হয় জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। পুলিশ বন্যা বিজয়ের মালিক বরুণ দেবনাথকে গ্রেফতার করলেও পরে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।
আরও পড়ুন
নিহত নজরুল: ‘এখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না, আল্লাহ তোমাকে দেখে রাখবে’
রাশিয়ায় পড়তে গিয়ে যেভাবে যুদ্ধের ময়দানে পৌঁছালেন সাহিল
রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
বন্যা বিজয় ছাড়াও রাশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে ফ্রেন্ডশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন রিক্রুটমেন্ট লিমিটেড এবং ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে দুটি এজেন্সির বিরুদ্ধে।
সরকারিভাবে কর্মী পাঠানো
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) রাশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে।
বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক শওকত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে যাওয়ার পর দুজন প্রলোভনে পড়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর তারা যুদ্ধ না কি কীসে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের পরিবারও অর্থের লোভে সায় দিচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ায় আমাদের দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছি, কোম্পানিগুলো যেন আমাদের কর্মীদের ছাড়পত্র না দেয়। কর্মীদের সচেতন করছি। গত বছর আমাদের ৪০০-এর মতো লোক গেছে রাশিয়ায়। আরও ২০০ লোক যাবে। দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটবে। এটা স্বাভাবিক।’
এ বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাশিয়ায় মূলত বাংলাদেশ থেকে ভালো চাকরি, ভালো বেতন এসব কথা বলে নিয়ে যায়। আমরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন এরকম অনেক আবেদন পেয়েছি, যারা সিনোপেক কোম্পানিতে গেছেন। ওখানে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া, যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া কিংবা মৃতদের স্বজনরা ব্র্যাক মাইগ্রেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা এ সংক্রান্ত অনেকগুলো রিপোর্ট পেয়েছি। যারাই বিপদে পড়েছেন, পরিবারগুলো আমাদের কাছে সাহায্য চেয়েছে। আমরা তাদের আবেদনগুলো পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।’
রাশিয়ায় যুদ্ধের ময়দানে সঙ্গীদের সঙ্গে বাংলাদেশি যুবক সোহেল সরদার নীরব (অস্ত্র হাতে)/ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
শরিফুল হাসান জানান, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় মানবপাচার হয় কয়েক ধাপে। প্রথমে স্থানীয় দালাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোক বাছাই করে। চাকরির নাম হিসেবে কখনো বড় নির্মাণ কোম্পানি কিংবা সিনোপেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের নাম বলা হয়। পরে ভিসা ও ট্রানজিট সম্পর্কিত কাগজপত্র তৈরি করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরপর রাশিয়া পৌঁছানোর পর দু-এক মাসের মধ্যেই যুদ্ধে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে চক্রটি। ২৫ থেকে ৩০ লাখের বিনিময়ে এ কাজ করা হয়। শেষ পর্যায়ে যুদ্ধে পাঠানো হয়।
এ সমস্যা মোকাবিলায় প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনকে কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করতে হবে। বিগত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যারা আটক রয়েছেন বা তাদের পরিবারের অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখে কর্মীদের ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এসব প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’
যোগাযোগ করা হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট অনুবিভাগ) এ জেড এম নুরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এখনো এগুলোর লাইসেন্স চালু আছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরএএস/জেপিআই/একিউএফ/এএসএ/জিকেএস