ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বিমানবন্দরে আগুন

১৫ নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেবে কোর কমিটি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:১৮ পিএম, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত কোর কমিটি আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেবে।

রোববার (৫ নভেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা শেষে কমিটির সভাপতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

কোর কমিটির ৫ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি। এজন্য কমিটির মেয়াদ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক)।

আরও পড়ুন
বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সের ভল্ট ভেঙে ৭ অস্ত্র চুরি

ফারুক ই আজম বলেন, গত ১৯ অক্টোবর আমরা যে সভা করেছিলাম সেটার প্রেক্ষাপটে একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা সম্পূর্ণ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত কাজ চলমান আছে, বিদেশ থেকেও তদন্ত কর্মকর্তা আনার চেষ্টা করেছিল সরকার। তুরস্ক থেকে একটি টিম এসেছিলেন, তারা বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ড তদন্ত করেছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কিছু বিষয় (নমুনা) এখান থেকে তারা নিয়ে গেছেন। পরীক্ষা করার পর তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এখন আমাদের কাছে আসেনি। আমরা সেটার জন্য অপেক্ষা করছি।

আজকে তো কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল—এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটা আসেনি।‌ বাইরের ফরেন্সিকে একটা টিম এসেছিল তারা তদন্ত করে গেছেন তাদের কাছ থেকেও রিপোর্টটা পাওয়া যায়নি।

কোর কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি এ মাসের পুরোটাই (৩০ নভেম্বর পর্যন্ত) কাজ করবে।

কমিটির প্রাথমিক তদন্তে কী পাওয়া গেছে? ভিডিও ফুটেজে কি পেয়েছেন—জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, আমরা সবকিছু দেখেছি। কতগুলো জিনিস দেখলে যে উপসংহারে আসা যায় না, সেজন্য আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন হয়, সেই পরীক্ষাগুলো চলছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের সঙ্গে অনেকগুলো টিম ছিল। তাদের কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে পরে যোগ দিয়েছে, বুয়েটের টিমটি আমাদের সঙ্গে পরে যোগ দিয়েছে। ওনারও ক্যাচাপ করছেন, আমরা আশা করছি ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিশাল একটা তদন্ত হয়েছে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। আমরা নিজেরা প্রতিটি জায়গা, প্রতিটি স্থান ঘুরে দেখেছি। ওখানে নানা রকমের সমস্যা আছে। এটার একটা সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করতে গিয়ে আমাদের প্রতিবেদনটা একটুখানি দেরি হচ্ছে। আশা করছি আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে হয়ে যাবে, আমরা সাবমিট করবো।

তদন্তে আপনারা কী পেলেন, এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা—এ বিষয়ে নাসিমুল গনি বলেন, এই কমেন্ট আমি এখন করবো না।

নভেম্বরের মাঝামাঝি পুরো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে জানিয়ে নাসিমুল গনি বলেন, আর কটা দিন অপেক্ষা করেন। ইনশাল্লাহ আশা করছি এর মধ্যে তুরস্কের ফরেন্সিক রিপোর্টটাও চলে আসবে।

‘অনেক কিছু বিচার বিশ্লেষণের বিষয় আছে। আমরা একসঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবো’- বলেন সিনিয়র সচিব।

বিমানবন্দরে অস্ত্র চুরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওখানে কিছু স্যাম্পল ছিল। সেটা প্রচণ্ড তাপে বের হয়ে গিয়েছিল। অনেক সময় স্যাম্পলগুলো তারা রিলিজ করে দেয়। সমস্যাটা এত জটিল যে, ওখানে কি কি মালামাল ছিল আমাদের পুরো তালিকাটা জোগাড় করতে হয়েছে। এরমধ্যে কতটুকু কাস্টমস রিলিজ করেছে এবং এরা বাই নেমে আমাদের কাছে চলে আসতেছে আপনারা সার্টিফিকেট দেন আগুন লেগেছিল। সেটার জন্য তো নির্দিষ্ট অথরিটি আছে।

তিনি বলেন, ফলে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে এই জিনিসগুলো (অস্ত্র চুরি) হয়েছে। সেটা আরেকটু পরে বলা যাবে।

‘অস্ত্র যেগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এর মধ্যে আমরা যেটুকু জানি, অনেক ফার্ম থেকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় যে আমরা পিস্তল কিনবো। বিজ্ঞাপন দিলে অনেক সময় স্যাম্পল নিয়ে আসে, সেই স্যাম্পলকে অনেক সময় ওখানে (বিমান বন্দরে) এসে থাকে। সেগুলো তারা রিলিজ করে না, এর মধ্যে টেন্ডার এর কাজ শেষ হয়ে গেছে। সেগুলো গোডাউনে থেকে যায়। নিয়ম হচ্ছে ২১ দিন হয়ে গেলে তারা সেগুলো রিলিজ করে ফেলবে কাস্টম থেকে। সেগুলো হয়তো কিছু হয়নি। সেই রকম জিনিসগুলো আছে।’

নাসিমুল গনি আরও বলেন, আমি বিস্তারিত বলতে পারবো না। কারণ, সেটা অনেক বড় তালিকা। প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টন মালামাল আসছে। এর মধ্যে অর্ধেক ডিসপোজাল হচ্ছে, আরও বাকি অর্ধেক হচ্ছে না, পড়ে থাকছে। তাই এ বিষয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে এগুলো থাকবে।

এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের অন্যান্য কেপিআইগুলোতে (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা) যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়, সেজন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে এসব কেপিআই রয়েছে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছেন। সেসব জায়গায় যেটুকু নিরাপত্তা ঘাটতি আছে সেগুলো তারা খতিয়ে দেখছেন এবং সে অনুযায়ী উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে সভা করে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি। ওই সভায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্তে কোর কমিটি গঠন করা হয়। ১৬ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনসহ কমিটির সদস্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। আগুনে অগ্নি প্রতিরোধী স্ট্রংরুমের কোনোকিছু পোড়েনি বলে বিমানবন্দর সূত্র জানায়। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ওই স্ট্রংরুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আমদানি করা বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। সেখান থেকে ৭টি অস্ত্র চুরির অভিযোগ এনে গত ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

আরএমএম/এমকেআর/জিকেএস