ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার ২

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৫৩ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখায় একটি চক্র। পরে তারা সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। সংঘবদ্ধ ওই চক্রের মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীক (২৫) ও তার সহযোগী মো. সাগর আহমেদ (২৪)।

সিআইডি জানিয়েছে, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য তারা অভিনব কৌশল ব্যবহার করতেন। ফারদিন আহমেদ বিভিন্ন গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এক মাসের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে নগদ অর্থ তুলে নিতেন। এই পদ্ধতিতে প্রতারণার টাকা 'ক্যাশ আউট' করা হতো।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্ব বিভাগের একটি আভিযানিক দল এলআইসি ইউনিটের প্রযুক্তিগত সহায়তায় গত ৬ নভেম্বর ভোরে পঞ্চগড় জেলার সদর থানার ধাক্কামারা এলাকা থেকে চক্রের মূলহোতা ফারদিন আহমেদ ওরফে প্রতীককে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে ফারদিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল থেকে চক্রের সহযোগী মো. সাগর আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়।

প্রতারক চক্রটি টেলিগ্রামে ‘বিদেশি বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম’ নামে ভুয়া গ্রুপ খুলে অল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিনিয়োগে প্ররোচিত করতো। ভুক্তভোগীরা যখন গ্রুপে যুক্ত হতেন তখন গ্রুপে কিছু সদস্য এখানে বিনিয়োগ করে কীভাবে লাভবান হয়েছেন তা জানিয়ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ পোস্ট দিতেন। প্রকৃতপক্ষে এসব ইতিবাচক সব পোস্টই ছিল প্রতারণারর ফাঁদ।

এভাবে ভুক্তভোগীরা প্রলুব্ধ হয়ে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতেন এবং চক্রের ফাঁদে পড়তেন। এরপর তৃতীয় কোনো ব্যক্তির নামে খোলা ব্যাংক ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করে আত্মসাৎ করা হতো। প্রতারণার শিকার বহু বিনিয়োগকারী এসব ভুয়া গ্রুপে অর্থ বিনিয়োগ করে এরই মধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছেন।

আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে ঢাকায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার ৩১
চট্টগ্রামে ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার হত্যায় মামলা, গ্রেফতার ২

এমনকি, যেসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করা হতো, সেগুলোর মালিকরা অনেক সময়ই বিষয়টি না জেনে নিজেরাই অভিযুক্ত হয়ে পড়েন। এমন ঘটনায় পল্টন থানায় দুইটি পৃথক মামলা হয়। মামলা দুটির তদন্তভার সিআইডির ওপর ন্যস্ত হলে দ্রুততম সময়ে সিআইডি এই চক্রকে শনাক্ত করে এবং চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান আরও জানান, মূলহোতা ফারদিন আহমেদ টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে সক্রিয় থেকে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ৩০টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্ট এবং সিমকার্ড নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করতেন।

অন্যদিকে, তার সহযোগী সাগর আহমেদ ‘আরআইও’ নামে একটি ফেইক টেলিগ্রাম আইডি ব্যবহার করে ‘অ্যালেক্সা রিক’ নামের গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ৭ জন। তারা অনলাইন বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।

সিআইডির তদন্তে আরও জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ নগদে রূপান্তরের জন্য তারা অভিনব কৌশল ব্যবহার করতেন। ফারদিন আহমেদ বিভিন্ন গাড়ির শোরুম থেকে ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে গাড়ি কিনে এক মাসের মধ্যে কম দামে বিক্রি করে কাগজে লোকসান দেখিয়ে নগদ অর্থ তুলে নিতেন। এই পদ্ধতিতেই প্রতারণার টাকা ‘ক্যাশ আউট’ করা হতো।

গ্রেফতার ফারদিন আহমেদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার নিয়ন্ত্রণাধীন অ্যাকাউন্টগুলোর মাধ্যমে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লেনদেন হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম, অ্যাকাউন্ট তথ্য ও অর্থের গন্তব্য উদঘাটনের জন্য আটক দুই আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

টিটি/কেএসআর/এএসএম