ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

পরকীয়া ও বিশ্বাসভঙ্গের শিকার আশরাফুল, শেষে ২৬ খণ্ড হয়ে ড্রামে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:১৮ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

রংপুরের ব্যবসায়ী আশরাফুল হক পরকীয়া ও বন্ধুর বিশ্বাসভঙ্গের শিকার হয়েছিলেন। যার পরিণতিতে ঢাকায় এসে ২৬ খণ্ডের মরদেহ হয়ে তার ঠাঁই হয় প্লাস্টিকের ড্রামে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেফতার শামীমা আক্তার ও জরেজুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব ও পুলিশ।

জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতারের পর শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, প্রেমিকাকে দিয়ে বন্ধু আশরাফুলকে ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল জরেজের। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী আশরাফুলকে ঢাকায় আনার কথা র‌্যাবকে জানিয়েছেন শামীমা। কিন্তু টাকা আদায় না করে কেন তাকে খুন করা হলো সেটির স্পষ্ট ধারণা শামীমার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

তখন হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে জরেজের বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিল র‌্যাব, যাকে আগের দিন শুক্রবার রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জরেজকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবিপ্রধান) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এটি আসলে একটি ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল ড্রাম থেকে খণ্ডবিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ২৬ টুকরো মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে জানা যায়, এটি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আশরাফুলের।

এ ঘটনায় শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন নিহতের বোন। এ হত্যাকাণ্ডে নিহতের বন্ধু জরেজ নামে একজনকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে খোঁজার কথা বলেছিল পুলিশ। পরে রাতেই ডিবি পুলিশ জরেজ এবং র‌্যাব জরেজের প্রেমিকা শামীমাকে গ্রেফতারের তথ্য জানায়।

jagonews24
পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হাতে গ্রেফতার জরেজুল ইসলাম/ছবি: সংগৃহীত

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজ মাস দেড়েক আগে দেশে ফেরেন। সেখানে থাকা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুমিল্লার শামীমার সঙ্গে তার পরিচয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। জরেজের দেশে ফেরার দিন শামীমাই তাকে ঢাকার বিমানবন্দরে রিসিভ করেন এবং পরে যে যার বাড়ি চলে যান।

দেশে ফেরার পর দুজনের মধ্যে চলতে থাকা যোগাযোগের বিষয়টি জরেজের স্ত্রী ধরে ফেলেন। আর এ বিষয়ে সহায়তার জন্য তিনি দ্বারস্থ হন জরেজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের। তিনি আশরাফুলকে শামীমার ফোন নম্বর দিয়ে অনুরোধ করেন যেন আশরাফুল ফোন করে শামীমাকে জরেজের জীবন থেকে সরে যেতে বলেন। এর মধ্যে আশরাফুল শামীমাকে ফোন দেন এবং একসময় তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা নিয়মিত কথা বলতেন ও ভিডিও চ্যাটিং করতেন।

আরও পড়ুন
আশরাফুলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা
ড্রামে ভরা ২৬ খণ্ড লাশ: নিহতের বন্ধুকে প্রধান আসামি করে মামলা
জাতীয় ঈদগাহের সামনে ড্রামভর্তি খণ্ডিত মরদেহের পরিচয় মিলেছে

একপর্যায়ে আশরাফুল ও শামীমা পরিকল্পনা করেন যে জরেজকে জাপানে পাঠিয়ে দেবেন। এজন্য তারা দুজনে খরচ হিসেবে সাত লাখ করে ১৪ লাখ টাকা দেবেন। জাপান যাওয়ার প্রক্রিয়া এবং টাকা নেওয়ার জন্য শামীমা দুই বন্ধুকে ঢাকায় আসতে বলেন এবং সে অনুযায়ী দুজন মঙ্গলবার ঢাকায় রওনা দেন। পরদিন বুধবার সকালে তাদের সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে রিসিভ করেন শামীমা। এরপর তারা শনিরআখড়ায় একটি ভাড়া বাসায় উঠেন।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল জানান, ওই বাসায় নিজেরা একান্তে সময় কাটাতে আশরাফুলকে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন জরেজ ও শামীমা, কিন্তু তার ঘুম আসেনি। তিনি বরং বারবার শামীমার সান্নিধ্যে যেতে চেষ্টা করেন। এতে জরেজ বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে জরেজ বাসা থেকে বেরিয়ে যান এবং দেখতে একই রকম হওয়ায় ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে নেন। তিনি বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে নিজের মোবাইল আনতে আবার বাসায় ফেরত যান।

জরেজ বাসায় গেলে শামীমা তাকে ভেতরে যেতে বলেন এবং আশরাফুল ঘুমিয়ে গেছেন বলে জানান। পরে আশরাফুল কেমন ঘুমাচ্ছেন তা যাচাই করতে শামীমা তার গায়ে হাত দিলে তিনি জেগে যান। তখন জরেজ আড়ালে লুকিয়ে পড়েন। এসময় আশরাফুল শামীমাকে ‘বিকৃত যৌনাচারের’ জন্য জোর করতে থাকলে শামীমা প্রলোভন দেখিয়ে দড়ি দিয়ে তার হাত বেঁধে দেন। পরে তিনি চিৎকার দিলে জরেজ বেরিয়ে এসে হাতুড়ি দিয়ে আশরাফুলের হাঁটুতে আঘাত করেন। এতে তিনি চিৎকার করতে থাকলে শামীমা তার মুখে ওড়না গুঁজে দিয়ে স্কচটেপ পেঁচিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় তিনি মারা গেছেন।

দুজনে এ অবস্থায় মরদেহটি নিয়ে রাতে ওই বাসায় থাকেন এবং নানা পরিকল্পনার পর বৃহস্পতিবার সকালে ড্রাম এবং অন্যান্য জিনিসপত্র কিনে আনেন। পরে মরদেহটি ২৬ টুকরা করে দুটি ড্রামে ভরে ওপরে চাল দিয়ে ঢেকে দেন। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে হাইকোর্টের সামনে এসে ড্রামগুলো রেখে তারা সায়েদাবাদ চলে যান। সেখান থেকে শামীমা নিজের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে চলে যায় এবং জরেজ দাউদকান্দিতে পূর্ব পরিচিত একজনের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।

টিটি/একিউএফ/জেআইএম