নতজানু হবেন না, নিরপেক্ষ ও শক্ত ভূমিকা নিন: ইসিকে ৬ দল
নির্বাচনে অনিয়ম ও অদৃশ্য শক্তির কাছে নতজানু না হতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ৬টি রাজনৈতিক দল/ছবি: জাগো নিউজ
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ‘নতজানু না হয়ে নিরপেক্ষ ও শক্ত ভূমিকা নিতে’ নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি রাজনৈতিক দল।
দলগুলো বলছে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। কোনোভাবেই অনিয়ম ও অদৃশ্য শক্তির কাছে নতজানু হওয়া যাবে না।
রোববার (১৬ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে দ্বিতীয় দিনের সংলাপের প্রথম পর্বে অংশ নিয়ে ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ইসির প্রতি এ আহ্বান জানান।
এসময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররা জানান, আইন ও বিধি প্রয়োগে তারা কঠোর থাকবেন। এক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার। ইসি কোনো চাপের কাছে নতজানু হবে না।
পোস্টাল ব্যালটের গোপনীয়তা ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে সবার সহযোগিতা চেয়েছে ইসি।
এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রথম ধাপের সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো—গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি–বিএসপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি। অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত দলের মধ্যে বৃহস্পতিবার ও রোববার মিলিয়ে ২৪টি দলের সঙ্গে সংলাপ করলো ইসি।
সংলাপে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অতীতের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অনেক আশা-ভরসা ছিল, ইসির ওপর সারা জাতির আস্থা থাকে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, অতীতে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা দক্ষ ছিলেন হয়তো, কিন্তু তাদের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা পাইনি। তাদের সঙ্গে অদৃশ্য শক্তি ছিল।
তিনি বলেন, অতীতে নির্বাচনকে কলুষিত করা যায় সেরকম নানান ব্যবস্থা ছিল। স্বাধীনতার ৫৪ বছরের ইতিহাস ঘেঁটে লাভ নেই। দু-একটি নির্বাচন হয়তো ভালো হয়েছে।
‘আপনাদের মেয়াদে সংসদ হোক কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন—আপনারা নিরপেক্ষতা যেন ধরে রাখেন। সেটা যেন জনগণের কাছে দৃশ্যমান হয়। এখনো আপনাদের প্রতি আস্থা রাখছি। ফেব্রুয়ারিতে একটা নির্বাচন হবে, গণভোটও হবে’- ইসির উদ্দেশে বলেন তিনি।
গণভোট প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান প্যাকেজে হ্যাঁ/না ভোট হলে সেটি অকার্যকর হয়ে যাবে। গণভোটের ব্যালটে দুটিতে ‘হ্যাঁ’, দুটিতে ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। এই গণভোট শেষ পর্যন্ত যেন হাস্যরসে পরিণত না হয়। এ ব্যাপারে ইসিকে শক্ত থাকতে হবে।
ভালো ভোটের বিষয়ে দলগুলোর ভূমিকার কথা তুলে ধরেন গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বলেন, আমরা যেন আচরণবিধি মেনে চলি। নির্বাচনকেন্দ্রিক আমরা যে অপমানিত বোধ করি, সেখান থেকে বের হতে হবে। বর্তমান ইসিকে ভালো নির্বাচন করতে হবে।
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য ইসির সক্ষমতা সুনিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে গণফ্রন্টের মহাসচিব আহমদ আলী শেখ বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা ইসির অবিচারের শিকার হয়েছি। অবিচারগ্রস্ত ইসির অধীনে আমাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।
দলটির আরেক প্রতিনিধি বলেন, ইসি শক্তিশালী না হলে নিয়ন্ত্রণমূলক স্বৈরাচারী শক্তি মাথাচাড়া দেবে। সময় এসেছে, গণতান্ত্রিক আস্থা পুনরুদ্ধার করার।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ এন এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচন ভালো করার জন্য ইসির আন্তরিকতা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিভাগভিত্তিক ভোট নেওয়া, জামানত কমানো ও ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখার সুপারিশ করেন তিনি।
জোট করলেও স্ব স্ব দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান চালু করায় দলটির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় ইসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা শঙ্কিত যে, ইসি জারি করা বিধিমালা রাখতে পারবে কি না। আশা করি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা কারও কাছে নতজানু হবেন না। ইসির ঘাড়ে জাতির দায়িত্ব, কারও চাপে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে উত্তম পথ আছে, সে পথ নেবেন। কিন্তু নতজানু হবেন না।
ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী সংলাপে ৯টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, গত ১৫ বছরে যে তিনটি নির্বাচন হয়, সবগুলোই ছিল বিতর্কিত। ভোট নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা সংকটাপন্ন।
তিনি নির্বাচনকালীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও সারাদেশে একই দিনে নির্বাচন না করে চার ধাপে ভোট আয়োজনের প্রস্তাব রাখেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার রোধে ইসিকে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এদিন ইসলামী ঐক্যজোটের দুটি পক্ষ ইসির সংলাপের অংশ নিতে হাজির হলে পরে একাংশকে বের করে দেওয়া হয়। এসময় কিছুটা হট্টগোল তৈরি হয়। পরে ইসি সচিব যাদের কাছে সংলাপে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণের চিঠি নেই তাদের সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।
সম্মেলন কক্ষ থেকে বের হয়ে দলটির একাংশের নেতা মইনুদ্দিন রুহি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের চিঠি ব্ল্যাকমেইল করে অন্য অংশ সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
ইসি সচিব বলেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত, অসামঞ্জস্যতা দিয়ে শুরু করার জন্য।
ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিবাদের এই দোসররা কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করে স্বার্থ হাসিল করেছে। ৫ আগস্টের পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর আমরা ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে নতুন দল পুনর্গঠন করি।
তিনি বলেন, আমরা সংবিধান সংস্কার থেকে ঐকমত্যে কমিশনের সব বৈঠকে ছিলাম। ইসিতেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ করছি। জুলাই সনদে আমি সই করেছি।
এমওএস/এমকেআর/এমএস