সামাজিক নিরাপত্তায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার নেই: টিআইবি
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন/ছবি: সংগৃহীত
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা জাতীয় দারিদ্র্যের তুলনায় অনেক দারিদ্র্যের মধ্যে থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাদের জন্য পর্যাপ্ত অগ্রাধিকার নেই। আইন ও নীতিমালায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীবান্ধব দিকনির্দেশনার ঘাটতি, আবেদন ও প্রমাণপত্রের জটিলতা, নীতি-প্রণয়ন ও বাজেট প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অনুপস্থিতি, তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং অভিযোগ ব্যবস্থায় অনীহা—সব মিলিয়েই তাদের অন্তর্ভুক্তি কম।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) কার্যালয়ে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষক রাজিয়া সুলতানা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচটি প্রধান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যোগ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে জনসংখ্যার তুলনায় আবেদনকারী ও নির্বাচিতদের গড় হার মাত্র ১৯.৭ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন যোগ্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যের মধ্যে মাত্র একজন তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাঁচটি কর্মসূচির মধ্যে বয়স্কভাতায় আবেদনকারী ৫২.১% হলেও নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ২১.২%। বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতায় আবেদন ৩৩.৩%, নির্বাচিত ১২%। প্রতিবন্ধী ভাতা/উপবৃত্তিতে আবেদন ৫৭.৫% এবং নির্বাচিত ৩১.৬%। মা–শিশু সহায়তা ভাতায় আবেদন ৩০.৫% ও নির্বাচিত ২১.৫%। আর ভিডব্লিউবি কার্ডের ক্ষেত্রে আবেদন ২৫.১% ও নির্বাচিত মাত্র ১২.৪%।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তার প্রচারণা সীমিত, জনপ্রতিনিধিত্ব দুর্বল এবং শিক্ষা-প্রযুক্তিগত সক্ষমতার ঘাটতি বড় বাধা। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে আলাদা কর্মসূচির অভাব, ভৌগোলিক দূরত্ব, ভাষাগত সমস্যা, তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার ঘাটতি অন্তর্ভুক্তি আরও কমিয়েছে। টিআইবি বলছে, দরিদ্র ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের অগ্রাধিকার না দেওয়া—সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্তির সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যেকোনো অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম শর্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে এনে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সেখানে ন্যায্যতা অর্জন সম্ভব হয়নি সেটা পরিষ্কার। ফলে সেখানে অস্থিতিশীলতা, অসন্তোষ বজায় থাকাটাই বাস্তব।
এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের কোনো সরকারের হাতে না, পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবি কাঠি; আমি মনে করি আমাদের সেনাবাহিনীর হাতে। তারাই পারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।
সারা বিশ্বের ৬৯টি দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠা কার্যক্রমে সেনাবাহিনী ভূমিকা রেখেছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রত্যেকটা নাগরিক সেনাবাহিনী নিয়ে গর্ব করে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ১০টি দেশে সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্মরত আছে। সরকারের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী নিজেদের উদ্যোগে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে বলেও জানান তিনি। স্বদিচ্ছা থাকলে পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রতিটি ধারা বাস্তবায়ন সম্ভব বলেও মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।
এসএম/এমএমকে/জেআইএম