ভূমিকম্প-অগ্নিদুর্যোগে প্রস্তুতি বাড়ানোর সুপারিশ বিশেষজ্ঞদের
ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে করণীয় বিষয়ে স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সেমিনারে অতিথিরা/ছবি: সংগৃহীত
ভূমিকম্প, অগ্নিদুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর গঠিত ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’এর সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সেমিনারে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশলী, স্থপতি, দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষক ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার জানান, সেমিনারটি উদ্বোধন করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল। উদ্বোধনের পর বিষয়ভিত্তিক কি-নোট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। পরে মহাপরিচালক সেমিনার সঞ্চালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান সক্ষমতা এবং ভূমিকম্প মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এশিয়ার উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ও অপ্রতুল জনবলের বিষয়টি উল্লেখ করেন। গ্যাপ এরিয়া ও অঞ্চলভিত্তিক ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন তারা। ওয়াসার সব পাম্প স্টেশনে ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তোলা এবং শহরমুখী ফায়ার স্টেশন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জায়গা সংকট হলে সরকারি ভবনের নিচের দুই তলা ফায়ার স্টেশন হিসেবে ব্যবহারের বিকল্প প্রস্তাব করা হয়।
সভায় ভলান্টিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি, তাদের নিয়মিত রিফ্রেশার কোর্স চালু রাখা, সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক মক এক্সারসাইজ আয়োজন, ফায়ার একাডেমি নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্যোগ বিষয়ে প্রচারণা জোরদার করা এবং আবাসিক এলাকা থেকে দ্রুত রাসায়নিক গুদাম সরানোর সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সেমিনারে বক্তব্য দেন খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদ হেলালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. জিল্লুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু নাঈম মো. শাহিদউল্লাহ (অব.), সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিব, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান, একুশে টিভির নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মেহেদী আনসারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অজৈব এবং বিশ্লেষণাত্মক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর (অব.) একেএম শাকিল নেওয়াজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোছা. ফুয়ারা খাতুন, ফায়ার সার্ভিসের সাবেক উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা, সাবেক উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম, স্থপতি ইশতিয়াক জহির, সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন আহম্মেদ, ইসাবের প্রতিনিধি প্রকৌশলী মো. মঞ্জুর আলম প্রমুখ।
সেমিনারে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং বিভাগীয় উপ-পরিচালক ও জেলা কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, দেশের সামগ্রিক জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘স্থায়ী বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ ভবিষ্যতে নিয়মিতভাবে পরামর্শ, গবেষণা ও নীতিমালা প্রণয়ন করবে।
মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বিশেষজ্ঞদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই প্যানেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, তথ্যভিত্তিক ও বৈজ্ঞানিক পর্যায়ে উন্নীত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টিটি/এমএমকে/জেআইএম