রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় ৩ হাজার টন সূর্যমুখী তেল হস্তান্তর
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে তিন হাজার মেট্রিক টন সূর্যমুখী তেল হস্তান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, ইউক্রেন ও সুইডেনের দূতাবাস এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যৌথভাবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। ইউক্রেনের ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’ কর্মসূচির আওতায় এ তেল সরবরাহ করা হয়েছে। সহায়তাটি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সরকারের নেতৃত্বে ডব্লিউএফপি ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার কাজে ব্যবহার হবে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর ) এ তথ্য জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। সংস্থাটি জানায়, ২০২২ সালে ইউক্রেন সরকারের চালু করা মানবিক খাদ্য উদ্যোগের একটি ‘গ্রেইন ফ্রম ইউক্রেন’। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ইউক্রেনের খাদ্যপণ্য সংকটাপন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া এ উদ্যোগের লক্ষ্য। রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া সূর্যমুখী ইউক্রেনে উৎপাদিত। এর ক্রয় ও পরিবহন খরচ ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। আর এ অর্থ দিয়েছে সুইডেন সরকার।
কক্সবাজারের উখিয়ার মধুরছড়া লজিস্টিক হাবে সহায়তা হস্তান্তরের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মোস্তফিজুর রহমান, রোহিঙ্গা ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন কায়েস, ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. ওলেক্সান্দ্র পলিশচুক, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমোন পার্চমেন্ট এবং ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জঁ-মার্ক সেরে-শারলে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফিজুর রহমান বলেন, ‘এ সাহায্য রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা জোরদার করবে। এ উদ্যোগ মানবতা, সহমর্মিতা ও বৈশ্বিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।’
রোহিঙ্গা ত্রাণ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই উদ্যোগ মানবিকতার এক যৌথ বিশ্বাসকে তুলে ধরে— যা ইউক্রেন, সুইডেন, ফ্রান্স, ডব্লিউএফপি ও বাংলাদেশ সরকারকে একত্র করেছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহিউদ্দিন কায়েস বলেন, ‘এ সহায়তা শুধু মানবিক উদ্যোগ নয়, এটি রোহিঙ্গাদের প্রতি বন্ধুত্ব ও সংহতির প্রকাশ।’
ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ড. পলিশচুক বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। ডব্লিউএফপি ও মানবিক সংস্থাগুলোর কাজ সত্যিই উদাহরণযোগ্য।’
সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বকে সচেতন রাখতে হবে। এই উদ্যোগ সংহতি ও মানবতার জন্য একটি বাস্তব পদক্ষেপ।’
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা ডব্লিউএফপির খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গারা এ কেন্দ্র থেকে ই-ভাউচার ব্যবস্থার মাধ্যমে সূর্যমুখী তেলসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করেন। প্রতি ব্যক্তি মাসে ১২ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ খাদ্য কিনতে পারেন। ১৯টি ই-ভাউচার আউটলেটে তারা চাল, ডালসহ মৌলিক খাদ্য ছাড়াও স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা তাজা শাকসবজি, মাছ ও মুরগি নিতে পারেন। এসব পণ্য সরবরাহে স্থানীয় ক্ষুদ্র কৃষকরাও যুক্ত রয়েছেন।
রোহিঙ্গা সংকট এখন নবম বছরে। তহবিল সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। ২০২৬ সালে প্রায় ১২ লাখ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে ডব্লিউএফপির ১৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘাটতি রয়েছে। নতুন অর্থায়ন না হলে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে খাদ্য সহায়তায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটবে।
ইএইচটি/এমএএইচ/এমএস