গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ
৮ মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন
আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাতপরিচয়ের শহীদদের মরদেহ শনাক্তে কাজ করছে সিআইডি। এরইমধ্যে কবর থেকে তোলা ৮টি মরদেহের ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
এর আগে গত রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মোহাম্মদপুর রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে মরদেহ তোলা শুরু হয়।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, যথারীতি আজকেও সকাল থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আজকে দুইটি লাশ তোলা হয়েছে। পোস্টমর্টেম এবং ডিএনএ সংগ্রহের কাজ চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিন রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুইজনের মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ সংগ্রহ এবং পোস্টমর্টেম সম্পন্ন করা হয়। পরদিন অর্থাৎ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ৪টি এবং আজ মঙ্গলবার (৯ডিসেম্বর) সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ২টি মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ সংগ্রহ ও পোস্টমর্টেম করা হয়েছে।
এর আগে সংবাদ সন্মেলনে সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল মেনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাৎবরণকারী অজ্ঞাতপরিচয়ের শহীদদের লাশ তোলা হবে।
মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির কাছে আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফান্ডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে একই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল, মিনেসোটা প্রোটোকল অনুসরণ করে মরদেহ তোলা, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ স্যাম্পলিংসহ প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হবে। আমরা সিটি করপোরেশন, ঢাকা মেডিকেল, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, ডিএমপি, বিভাগীয় কমিশনারসহ সব স্টেকহোল্ডারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
মরদেহ তোলা থেকে পুনরায় দাফন পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধাপে সব কার্যক্রম করা হবে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, আবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ১১৪টি কবর চিহ্নিত হয়েছে, যা বাস্তবে কমবেশি হতে পারে। মৃতদেহ তোলার পর পোস্টমর্টেম, স্যাম্পল/টিস্যু সংগ্রহ, ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হবে। পরিচয় নিশ্চিত হলে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে আবার পুনরায় দাফন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচয় শনাক্তের পর কেউ যদি লাশ গ্রহণ করতে চান তাহলে গ্রহণ করতে পারবেন।
আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ জন স্বজন আবেদন করেছেন, আরও কেউ থাকলে সিআইডিতে যোগাযোগ করতে পারবেন।
সিআইডি হটলাইনে যোগাযোগ করলে স্বজনদের ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা জানি না কোন কবরে, কে আছেন। তাই সময় কত লাগবে বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় সব শহীদের পরিচয় আমরা বের করতে পারবো।
সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে সিআইডি প্রধান সাংবাদিকদের অনুরোধ করে বলেন, আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুযায়ী, মৃতদেহের কোনো ছবি বা সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। এটি অত্যন্ত সম্মানজনক ও মানবাধিকার-সংশ্লিষ্ট কাজ। আপনাদের আগের মতোই সহযোগিতা চাই।
পরিবারদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা, ভাই–বোন বছর ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন তাদের আপনজনদের পরিচয় জানার জন্য। আমরা চাই, এই জাতীয় বেদনার দায় থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারি।
শেষে তিনি সংশ্লিষ্ট সংস্থা, চিকিৎসক, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, ডিএমপি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় ইউনাইটেড ন্যাশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ইউএনএইচআর) আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সঙ্গে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মানের এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি এই কাজ আন্তর্জাতিক ফরেন্সিক মানদণ্ড ফলো করে করা হবে। আন্তর্জাতিক রুলস ফলো করে আমরা লোকাল সংস্থাকে (সিআইডি) সহায়তা করা হবে।
এসএনআর/জেআইএম