কেরানীগঞ্জে শীতবস্ত্র বিক্রিতে ভাটা, হতাশ ব্যবসায়ীরা
ক্রেতা না থাকায় দোকানে অলস সময় কাটাচ্ছেন এক ব্যবসায়ী
ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজধানী ঢাকায় যখন প্রচণ্ড শীত, তখন কেরানীগঞ্জের কাপড়ের মার্কেটে শীতের পোশাকের বেচাকেনায় বিরাজ করছে চরম মন্দা। শীত বাড়লেও বাজারে ক্রেতার দেখা নেই। দোকান খুলে বসে থাকা ব্যবসায়ীদের সময় কাটছে আড্ডা আর মোবাইল ফোনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ডলারের দাম বৃদ্ধি, ব্যাংক খাতের সংকট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ না থাকা সব মিলিয়ে এ বছর শীতের বাজার কার্যত স্থবির।
কেরানীগঞ্জের রুপালী গার্মেন্টসের ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা এ বছরের বাজার বাস্তবতার কঠিন দিকটি তুলে ধরে। তিনি জানান, আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর শীত বেশি হলেও বিক্রি একেবারেই নেই।
তার ভাষায়, বাজারে দীর্ঘদিন বেচাকেনা না থাকায় তিনি নিজস্ব দোকান টিকিয়ে রাখতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত দোকান ছেড়ে দিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করতে হয়েছে। তার মতে, এই পরিস্থিতি শুধু তার একার নয় এ ধরনের সংকটে পড়েছেন আরও অনেক ছোট ব্যবসায়ী।
ফেয়ার স্টাইলের ম্যানেজার মফিজুর রহমান বলেন, এ বছরের মন্দার পেছনে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি জানান, কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যার মূল কারণ ডলারের মূল্যবৃদ্ধি। আগে যেখানে ডলার ৮০-৮৫ টাকার মধ্যে ছিল, এখন তা ১২০-১২৫ টাকায় পৌঁছেছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পোশাকের দাম বাড়াতে হয়েছে। ফলস্বরূপ, খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের মতো পণ্য তুলছেন না। তার হিসাব অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত মোটামুটি ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে, যা মৌসুমের তুলনায় অনেক কম।
এম জে ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটর মিজানুর রহমান মনে করেন, এ বছরের বাজার মন্দার পেছনে ব্যাংক খাতের সংকট বড় ভূমিকা রাখছে।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সাধারণত শীতের মৌসুমে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করে পণ্য তোলেন। কিন্তু এ বছর ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ না পাওয়ায় তারা বাজারে আসতেই পারেননি। এর প্রভাব সরাসরি পাইকারি বাজারে পড়েছে। তার ভাষায়, বাজারে এখন মানুষের চেয়ে আড্ডা বেশি। দোকানে বসে ব্যবসায়ীরা মোবাইল দেখে সময় কাটাচ্ছেন।
মৃধা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর রহমত উল্লাহ বলেন, এ বছর শীত দেরিতে আসায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বড় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলের ছোট ব্যবসায়ীরা সাধারণত শীত পুরোপুরি শুরু হওয়ার পর পণ্য তোলেন। কিন্তু শীত দেরিতে আসায় তারা শেষ মুহূর্তেও ঝুঁকি নিতে পারছেন না। এতে পাইকারি বাজারে প্রত্যাশিত চাহিদা তৈরি হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ দিকে কেরানীগঞ্জ কাপড় মার্কেটে পা ফেলার জায়গা থাকে না। কিন্তু এ বছর শীত বাড়লেও সেই চিত্র নেই। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া, ডলার সংকট, ব্যাংক ঋণের সীমাবদ্ধতা এবং সার্বিক অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে শীতের পোশাকের বাজার এক ধরনের দীর্ঘস্থায়ী মন্দার মধ্যে পড়েছে।
টিএইচকিউ/এএমএ/এমএস