ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বোমাই কাল হলো বোমারু বাপ্পির

প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৫

রাজধানীতে বোমারু বাপ্পি হিসেবে পরিচিত। থানায় একাধিক বিস্ফোরক মামলা থাকায় পুলিশের চোখেও ‘বোমা বাপ্পি’ নামে পরিচিত। চার বিস্ফোরক মামলার ফেরারি আসামী তিনি। শেষ অবধি বোমাই কাল হলো তার। বোমা বানাতে গিয়ে নিজের কব্জি হারালেন মাহবুবুর রহমান বাপ্পী (২৭)।

রাজধানীর লালবাগে ঢাকেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন রাস্তার পাশে ৩১/২ নং বাসায় পাঁচ তলার একটি ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফ্লাটে বোন-দুলাভাই ও ভাগ্নির সাথে থাকতেন বাপ্পি। বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিস্ফোরণে নিজের কব্জি হারান মাহবুবুর রহমান বাপ্পী। একই সাথে আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী মোসাম্মৎ হ্যাপি আক্তার (১৩), ওই বাসায় বেড়াতে আসা ভাগ্নে মো. রিপন ওরফে রিমন (৬) শরীরে বিভিন্ন অংশসহ মুখ ঝলসে যায়। পরে সবাইকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অপরাধ শনাক্তকারী দল ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। এরপর পুলিশ দাবি করেছে, বোমা বানাতে গিয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

এ ব্যাপারে ডিবি পুলিশের বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়কারী ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরক, পেন ড্রাইভ ও সিম উদ্ধার করা হয়েছে। আলামত অনুযায়ী আমরা নিশ্চিত হয়েছি বোমা বানাতে গিয়েই এ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

লালবাগ থানা পুলিশ ও নিউমার্কেট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পি নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তার নামে নিউমার্কেট থানায় ৫টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে ৪ মামলার চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামী তিনি।

হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর সেখানে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে বাপ্পীর বোন ঝুমুর সাংবাদিকদের জানান, রুমে বৈদ্যুতিক হিটার চলছিল। সঙ্গে চার্জ লাইটও চার্জের লাইনে লাগানো ছিল। আড়াইটার দিকে বিস্ফোরিত হয়ে বাপ্পীর হাতে এসে পড়ে। এ সময় ওই দুই শিশু সেখানে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। এসময় বাপ্পির হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ঝুমুর আরও জানান, ভাড়া করা বাসাটিতে স্বামীর ও মেয়ের সাথে তার ভাই বাপ্পিও থাকতেন। হ্যাপি ঝুমুরের মেয়ে আর রিপন আরেক বোনের ছেলে।

তবে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মফিজউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বাপ্পী ‘বোমা বাপ্পী’ হিসেবে পরিচিত। তার কাজ হলো ককটেল ও বোমা বানানো। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নাশকতার কাজে সে সব বানানো বোমা ও ককটেল সরবরাহ করতেন তিনি।

লালবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, ঘটনার পর ঝুমুরের স্বামী পালিয়েছেন। পুলিশ ওই বাড়ির মালিক আবুল কাশেম, হাসপাতালে আসা হ্যাপির বাবা আবদুল হাকিমের দুই বন্ধু মো. শামীম ও গাজী ফারুকসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।

নিউমার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসির আরাফাত জাগো নিউজকে বলেন, বাপ্পি নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে তিনি ৪টি চার্জশিটভুক্ত মামলার পলাতক আসামী। একটি মামলা আদালতের চূড়ান্ত রায়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

তবে নিউমার্কেট থানা ছাত্রদলের দাবি করেছে, বাপ্পী নিউমার্কেট থানা ছাত্রদরের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাসা মালিক আবুল কাশেমের স্ত্রী (৫৫) সুফিয়া বেগম জানান, ঘটনার পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে নিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এক মাস আগে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন তারা। ঝুমুর নামে ভাড়াটিয়ার স্ত্রীর সাথে পরিচয় থাকলেও অন্য কারো সাথে পরিচয় ছিল না। বাসা ভাড়া সম্পর্কিত সব কাজ তার স্বামীই করতেন।

তিনি আরো বলেন, বুধবার সকালে আমি অসুস্থতাজনিত কারণে ডাক্তারের কাছে যাবার সময় ঝুমুরের সাথে একটি অপরিচিত ছেলেকেও বাসায় ঢুকতে দেখেছি। ফিরে আসার পরপরেই বিস্ফোণের শব্দে দরজা খোলেন তিনি। দেখেন চারদিকে ধোয়া আর সবার আর্তনাদ। পরে পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালের পাঠানো হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল জানান, বাপ্পীর চোখের অবস্থা খারাপ। আগামীকাল জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে হ্যাপির ১৯ শতাংশ ও রিপনের ১০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে।

জেইউ/আরএস