ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সংকটময় পরিস্থিতি উত্তোরণে সংলাপই একমাত্র পথ

প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৫

সংলাপকে যারা না বলছে তারা সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লে: জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সরকার সংলাপকে না বলে পক্ষান্তরে সহিংসতাকেই বুকে টেনে নিতে চাইছে। শনিবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে “বিবাদমান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি কার্যকরি সংলাপ ছাড়া কি চলতি রাজনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে?” দর্শকের করা এক প্রশ্নের জবাবে প্যানেল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

শনিবার ঢাকার বিয়াম অডিটোরিয়ামে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১০১ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্যানেল সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান, বেসরকারি সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্ট(ব্লাস্ট)’র নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন।

এ প্রসঙ্গে ব্লাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, আমি মনে করি না এখন যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সময় থাকতে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে আলোচনা শুরুর পাশাপাশি ও মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে।

মন্ত্রী শাহাজান খানকে প্রশ্ন করে সারা হোসেন বলেন, আমাদের ইতিহাসের কোথাও বলা নেই, যে দমননীতিতে গেলে সমাধান আসবে। আদর্শের বিপক্ষের শক্তির সাথে সংলাপ না করতে চাইলেও, যারা নির্বাচনের পক্ষে আছে তাদের সাথে সংলাপ করতে বাধা কোথায়?

এব্যাপারে মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, সংলাপ করবো কার সাথে? স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সাথে সংলাপ হতে পারে না। এটা আদর্শের লড়াই। স্বাধীনতার পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির মধ্যেকার লড়াই। জয় পরাজয়ের বিষয়।

এ প্রসঙ্গে শাহীন আনাম বলেন, সংলাপের বিকল্প নেই। তবে সংলাপের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডও বন্ধ করতে হবে।

এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আকবর হোসেন আগত দর্শকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনারা যারা দর্শক সাড়িতে রয়েছেন তাদের মধ্যে কারা কারা সংলাপের পক্ষে হাত উচিয়ে দেখান, এ সময় ৬ জন বাদে অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শকবৃন্দ সবাই হাত তুলে জানান দেন তারা সবাই (৯৯%) রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের পক্ষে।

“বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য জাতীয় সংসদে দাবী তুলেছেন আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতারা। খালেদা জিয়াকে যদি সত্যিই গ্রেফতার করা হয়, তাহলে পরিস্থিতি কোন দিকে যেতে পারে?” দর্শকের করা এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা একটা কঠিন এবং হঠকারি সিদ্ধান্ত হবে। এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলে দেশকে কঠিন খাদের শেষ প্রান্তে ঠেলে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যেসব সহিসংতার দায় বিএনপিকে দেয়া হচ্ছে, এসব বিএনপি করছে না।

সারা হোসেন বলেন, এটা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সহিসংতার সাথে কারা দায়ী সেটা খুঁজে বের করতে হবে। তদন্তটা খুবই জরুরী। রাজনীতিকরণ করা হলে আস্থাটা চলে যায়।

শাহীন আনাম বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের ক্ষেত্র তৈরী করে কতটুকু লাভ হবে তা জানি না। তবে বিভিন্ন সহিংসতার সাথে কারা দায়ী তা ভালো করে তদন্ত করে দেখতে হবে।

শাজাহান খান বলেন, বিরোধী দল জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করে এমন কখনো দেখিনি। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে রানা প্লাজার মতো দেশ ধ্বসে পড়বে না। এগুলো দিয়ে ওনাকে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে যেন উনি এগুলো আর না করে।

রফিকুল ইসলাম নামে এক দর্শক প্রশ্ন করেন, সহিংসতাকে উস্কে দেয় এমন খবর প্রচার না করার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে সরকার যে পরামর্শ দিয়েছে তাকে কি গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখার সুযোগ আছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে প্যানেল আলোচক শাহীন আনাম বলেন, অবশ্যই হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। মিডিয়াকে কি ধরণের নিউজ পরিবেশন করতে হবে না হবে সেজন্য সরকারের বুদ্ধি পরামর্শ অগণতান্ত্রিক চর্চার শামিল।

তবে তিনি বলেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে টকশোতে এসে অনেকেই যে যা খুশী বলে। এমনটা বন্ধ করা উচিত। তবে চ্যানেলগুলোর বক্তব্য কোনভাবেই উসকানীমূলক মনে হয়নি।

সারা হোসেন বলেন, আমি মনে করি এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। কারণ এখন নিউজ সেন্সর করা হচ্ছে। মিডিয়া হাউজ গুলোর ভিতরে এমন ভীতি ঢুকেছে যে, কোন কোন ক্যাটাগরির নিউজ পরিবেশন করলে সরকারের ভাব ক্ষুণ্ন হবে না তা বুঝে ফেলেছে। অর্থাৎ মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণে সরকারের এটা একটা পরোক্ষ কঠোরতা প্রদর্শন বলা যায়।

একজন দর্শক প্রশ্ন করেন, কিছু মিডিয়া সরকারকে বিপদে ফেলতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সংবাদ পরিবেশন করছে। অপর এক দর্শক বলেন, মিডিয়াকে কি করতে হবে না হবে তা সরকার বলবে কেন? সরকার ঠান্ডা মাথায় ডেকে এনে টিভি ও পত্রিকা মালিকদের হমকি দিয়েছে।

এব্যাপারে প্যানেল আলোচনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, কোন ভাবেই গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরা হয়নি। ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো নিউজ যাতে মিডিয়া পরিবেশন না করে সেজন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে মাত্র। তবে কঠোরতা বা হুমকির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ প্রসঙ্গে লে: জেনারেল (অব:) মাহবুবুর রহমান বলেন, অবশ্যই গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার মতো গণমাধ্যমকেও হত্যা করা হচ্ছে। বর্তমানে মিডিয়ায় ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে সরকার। সরকার চায় শুধু তাদের বক্তব্যগুলোকে মিডিয়া প্রচার করুক। সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন সংবাদ বন্ধ করতে সরকারে উঠে পড়ে লেগেছে।

রাজনৈতিক সংকট নিরসণে আগে সুশীল সমাজের ভূমিকা দেখা গেলেও চলমান সংকট সমাধানে তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহিন আনাম বলেন, আমি যদি রাস্তায় বের হয়ে প্রতিবাদ করে বলি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক বা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মানুষ হত্যা বন্ধ করা হোক তাহলে রাজনৈতিক কোনো দলের হয়ে কথা বলছি বলে আমাকে লেভেল প্লেয়িং করা হবে।

এ প্রসঙ্গে লে: জেনারেল(অব:) মাহবুবুর রহমান বলেন, সংকটময় মূহুর্তে সুশীল সমাজ সব সময়ই জোড়ালো ভূমিকা পালন করেছে, কিন্তু এবার তারা পিছিয়ে রয়েছে।

সুশীল সমাজকে রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত না হয়ে সংকট নিরসণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

সারা হোসেন বলেন, কোনো সমালোচনাকর কাজের সমালোচনা করলেই, টক শো’তে আলোচনায় বসে কথা বললেই পচিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তারা আতলামি করছে। বিএনপি সরকারের সময় দেখেছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বপক্ষে যে সব সংগঠন কথা বলে তাদের বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা কখনোই ঠিক না।

মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিএনপি ও জামায়াত আন্দোলনের নামে পাগলামি করছে। তাদের এ পাগলামি সুশীল সমাজকে আকর্ষণ করে না। সুশীল সমাজের লোকজন তো সহিংসতার বিরুদ্ধে, দেশের উত্তোরণে আন্দোলন সংগ্রাম করছেই।

অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়।

জেইউ/আরএস