অবরোধ প্রত্যাহার হলে সংলাপের বিবেচনা: এইচ টি ইমাম
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধ নামে সহিংস কর্মসূচি প্রত্যাহার করলে সংলাপ হবে কি না বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের একশতিনতম পর্বে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল সদস্য হিসেবে এইচ টি ইমাম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্টাস্ট্রির সভাপতি হোসেন খালেদ।
অনুষ্ঠানের প্রথম প্রশ্ন ছিলো- রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের আর কতদিন নিরাপত্তাহীনতার হুমকির মধ্যে জীবন যাপন করতে হবে?
উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, এ সহিংসতা কতদিন চলবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। সহিংসতা আগে থেকে অনেক কমেছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকার ভাবে যতটুকু সম্ভব সমাধানে কাজ করছে। শহরের বাইরেও গ্রাম, ইউনিয়নগুলোর জনগণ যদি এগিয়ে আসে তবে অতি শীঘ্রই এ সমস্যা থেকে আমরা মুক্তি পাবো।
আওয়ামী লীগের কেউ কিন্তু বোমা মারছে না দাবি করে এইচ টি ইমাম বলেন, আওয়ামী লীগ বিরোধীরাই এ কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, আজকের বাংলাদেশে যারা সহিংসতা করছে তারা একাত্তরেও বাংলাদেশের বিরোধীতা করে এ কাজ করেছিল।
একই প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজকে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী এমন কাজ করছে। এর সাথে বিএনপি’র কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যে মুহূর্তে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ঘোষণা দেয়া হবে, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখনই হরতাল-অবরোধ উঠিয়ে নেয়া হবে।
হোসেন খালেদ বলেন, আমরাও নিরাপত্তাহীনতা বোধ করি। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে আমাদের বাজেট ছিল ১৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা আয় করা। সেভাবে প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কন্ট্রিবিউশন থাকার কথা। সেখানে প্রতিদিন দুই হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে।
ফারাহ কবির বলেন, ব্যক্তি, মা বা উন্নয়নকর্মী হিসেবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতিদিন গণমাধ্যমে খবর আসছে দেশের কোথাও না কোথাও সহিংসতা হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমরা কি করে ফিরে পাবো?
দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো- চলমান সহিংসতা দমনে সন্দেহভাজন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কি দেশকে আরও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে পারে?
উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচনে না গিয়ে তারা সন্ত্রাস করছে। সবার গ্রহণযোগ্য সরকার এসেছে। এরপর হঠাৎ করে এসে তালগাছটি চাই বললে হবে? পরবর্তীতে যখন নির্বাচন হবে, তখন নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে কথা হতে পারে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার মূল সমস্যার সমাধান করলে কখনোই সংঘাতের দিকে যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ। জনগণ আজ উত্তপ্ত। এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এ দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
ফারাহ কবির বলেন, জনগণকে সরকারের বোঝাতে হবে, ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটছে। এ সমস্যা রাজনৈতিক সমস্যা হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ভূমিকা আছে।
হোসেন খালেদ বলেন, দুষ্কৃতিকারীদের কোনো জাত পাত ধর্ম নেই। যারা টেররিস্ট তারা সবভাবেই টেররিস্ট। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এসব বন্ধ হওয়া উচিত।
তৃতীয় প্রশ্ন ছিলো- রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যেতে পারে বলে অনেকেই যে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, আপনারা কি তার সঙ্গে একমত?
উত্তরে এইচ টি ইমাম বলেন, সংকট তৈরি না করলেই তো হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বছরের প্রথমে আমরা যখন ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বই পৌছে দিচ্ছি তখন তারা অবরোধ দিয়ে তাদের পরীক্ষা দিতে দিচ্ছে না। সরকার তো সমস্যা সৃষ্টি করেনি, যে (সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী) এমন কথা বলেছেন, তিনি যেন তার দল এবং যারা সমস্যা সৃষ্টি করেছে তাদেরকে এ কথা বলেন।
হরতাল আইন করে বন্ধ করা হবে কিনা দর্শকের করা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হরতাল সংক্রান্ত আইনের ব্যাপারে জনগণ সমর্থন দিলে সরকার এমন আইন পাশ করবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার যদি জনগনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে এমন করতে চায় তবে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। গণমাধ্যমের কোনো স্বাধীনতা নেই। এটা রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে যদি এর সমাধান না হয়, তবে গৃহযুদ্ধ কেন, আমাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিতে পারে।
আইন করে হরতাল বন্ধের বিরোধীতা করে ফারাহ কবির বলেন, প্রত্যেকেরই প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। হরতালের অধিকার যদি আজকে বন্ধ করে দেয়া হয়, তবে কিছুদিন পর অন্যান্য অধিকারের দাবিতেও আমরা প্রতিবাদ করতে পারবো না।
হোসেন খালেদ বলেন, আমাদের রাজনৈতিক চর্চায় কিন্তু কোনো পরিবর্তন হয়নি। হরতাল বা যে ধরনের কর্মসূচি আমাদের আঘাত করে এমন কোনো কর্মসূচি থাকা উচিত নয়।
চতুর্থ প্রশ্ন ছিলো- বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কি কোনো পথই খোলা নেই?
হোসেন খালেদ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার করে কোনো দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের আসা সম্ভব নাও হতে পারে, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
ফারাহ কবির বলেন, আমাদের জন্যই নাকি আপনারা সব কিছু করেন, তাই সমস্যার সমাধান যদি সংলাপ হয়, তবে সংলাপে বসতে হবে আপনাদের।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকারে আছে তাদেরকেই এই একমাত্র সমাধান সংলাপের ডাক দিতে হবে।
এইচ টি ইমাম বলেন, যারা এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন, তারা আগে বন্ধ করুন জনগণকে মুক্তি দিন। বন্ধ হলেই যে, আলোচনা হবে তা নয়। তারা তালগাছটি আমার এ অবস্থান থেকে সরে আসুক, তখন জনগণই বলবে এ সমস্যার সমাধান করতে।
অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলা।
এসআই/বিএ/এমএস
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ, সংগ্রহ ৩১১৪টি
- ২ হাদি হত্যার আসামিদের সহযোগিতার অভিযোগে ভারতে ৫ বাংলাদেশি আটক
- ৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় মিরপুরের আরামবাগে জে-ড্রাম স্থাপন
- ৪ ২৫ নারী উদ্যোক্তাকে নার্সারি স্থাপনে জায়গা বরাদ্দ দিলো উত্তর সিটি
- ৫ তৃতীয় লিঙ্গের ৩০ জনকে অস্থায়ী দোকান স্থাপনের অনুমতি উত্তর সিটির