ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অমলিন আনন্দ আর প্রেরণার বৈশাখ

প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

যেন বাঙালি হওয়ার প্রেরণা। যেন অমলিন আনন্দের দিন। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু পিছে ফেলে নতুনের কেতন উড়িয়ে আবার এল বৈশাখ। উৎসবের রঙে সেজেছে সারা বাংলাদেশ। স্বাগত জানাতে ১৪২২ বঙ্গাব্দকে। 

শুরু হবে আরও একটি নতুন বছর। নববর্ষ মানেই নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্প। জাগো নিউজের সকল পাঠক, ফেসবুক বন্ধুদের নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

পৃথিবীতে প্রচলিত অধিকাংশ বর্ষপঞ্জির উৎপত্তি কোনো না কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। সেদিক থেকে বাংলা নববর্ষ এক অনন্য বৈশিষ্ট্যময় উৎসব; কৃষিকাজ ও খাজনা সংগ্রহের নিমিত্তে এর প্রচলন এবং দিনে দিনে তা হয়ে ওঠে সর্বজনীন সাংস্কৃতিক উৎসবে।

বাঙালির আদি পরিচয় বহনকারী এই অসাম্প্রদায়িক উৎসব আমাদের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানের শাসকশ্রেণি যখন তাদের অন্যায়-অন্যায্য শাসনকে ন্যায্যতা দিতে ধর্মকে ব্যবহার করতে চেয়েছে, তখন শোষণমুক্তির সংগ্রামে এ ভূ-খন্ডের বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করেছে তার সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। ষাটের দশকে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসব বাঙালির আত্মপরিচয়ের আন্দোলন-সংগ্রামকে বেগবান করেছিল। সেই একই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে।

গ্রামাঞ্চলে শুরু হলেও পয়লা বৈশাখের উৎসবের আড়ম্বর এখন শহরগুলোতেই বেশি। রাজধানী ঢাকায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সূচিত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় নানা ধরনের অনুষ্ঠান হয়, মেলা বসে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতেও বসে বৈশাখী মেলা, আয়োজিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যবসায়ীরা খুলে বসেন হালখাতা। তরুণ-তরুণীরা বৈশাখী উৎসবের রঙিন পোশাক পরে বেরিয়ে আসেন। চলে ঐতিহ্যবাহী দেশি খাবারের উৎসব। পথ-ঘাট, মাঠ-মঞ্চ -সবকিছু ভরে ওঠে নতুন প্রাণের উচ্ছ্বাসে। আপন জাতিসত্তার গৌরব ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের চেতনা নিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে প্রবাসী বাঙালিরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করেন।

ঢাকায় বৈশাখী উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে সকালে। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রধান প্রতীক পাঞ্জা। প্রতিবারের মতোই রাজধানী ঢাকা পরিণত হবে উৎসবের নগরে। লাল-সাদা নকশার পরিধেয় পাবে প্রাধান্য। নারীর কবরীতে থাকবে তাজা ফুলের মালা, হাতে বেলোয়ারি কাচের চুড়ি। ক্লান্ত শিশুটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে বাবা কিনবেন রঙিন কাগজের চরকি, ঢোল, পাখি অথবা টুমটুমি গাড়ি কিংবা নারকেল মালার ছোট্ট একতারা।

ঢোল-ঢাগরার বাদ্য, বাঁশির প্যাঁ-পুঁ, অগণিত কণ্ঠস্বর আর গানের সুরের কলরোলে এক মহা আনন্দের ঐকতান ভেসে যাবে বৈশাখী দমকা হাওয়ায়। নগরজুড়ে বৈশাখী উৎসবের আয়োজন থাকবে অজস্র।

নগরজীবনে বৈশাখবরণের সূচনা করেছিল ঐতিহ্যবাহী সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট, রমনার বটমূলে ১৯৬৭ সালে। এবারও তারা সেই প্রভাতি অনুষ্ঠান করবে ওই প্রাচীন মহীরুহের ছায়াচ্ছন্ন তলায়। মঙ্গলবার সকাল ছয়টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রবাদন দিয়ে শুরু হবে তাদের পরিবেশনা।

বৈশাখী উৎসবের প্রধান কেন্দ্র রমনা-শাহবাগ-সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা। মহানগর পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হলেও রমনা উদ্যান ছাড়াতে হবে বিকেল পাঁচটার মধ্যে আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ফিরতে হবে সাতটার মধ্যেই।

আশার কথা, নতুন বছরটা শুরু হচ্ছে কিছুটা স্বস্তির মধ্য দিয়েই। রাজনৈতিক সংকট কিছুটা দূর হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটি দেখতে আরও কিছুটা অপেক্ষা হয়তো করতে হবে। আর উদ্বেগের বিষয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে স্থায়ী ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ এখনও নেই। বিরোধ-সংঘাতের সেই পুরোনো আবর্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনীতি। জঙ্গিবাদী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাষ্ট্রের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

এসবের মাঝেও তবু স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২২। স্বাগত অনিঃশেষ সম্ভাবনাকে।

আর হ্যাঁ, নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গলবার থাকছে সরকারি ছুটি।

এসএ/আরএস/এসআরজে