হজে যেতে পারছেন না ৩৯৭ জন
হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতিতে ৩৯৭ জন এবার হজে যেতে পারছেন না। ভিসা না হওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতায় তারা হজে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।সোমবার সচিবালয়ে হজযাত্রী পরিবহন কার্যক্রমের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৫০০ জন হজযাত্রী পাঠানোর কথা ছিল, সেখানে সরকারিভাবে যাওয়ার কথা ছিল ৪ হাজার ২০০, এজেন্সিরা পাঠাবে এক লাখ ২২ হাজার, আর ডেলিগেট যাবে এক হাজার ২৫০ জন।চুক্তি অনুযায়ী ৫০ ভাগ পাঠাবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স আর বাকি ৫০ ভাগ পাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। সেই হিসেবে বিমান ও সৌদিয়ার ৬৩ হাজার ১২৫ জন করে হজযাত্রী বহনের কথা। তবে বিমানের গভর্নমেন্ট ডেলিগেট এক হাজার ২৫০ জন যুক্ত ছিল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিমান ৬৪ হাজার ৮৭৩ জন যাত্রী বহন করেছে। সৌদিয়া ৬২ হাজার ২৩০ জন যাত্রী পরিবহন করেছে, যেখানে তাদের ৬৩ হাজার ১২৫ জন পাঠানোর কথা ছিল। বিমান ও সৌদি মিলিয়ে এক লাখ ২৭ হাজার ১০৩ জন হজযাত্রী পাঠিয়েছে।৩৯৭ জন রয়েছেন যাদের সবারই ভিসা হয়নি, কিংবা তারা পাসপোর্ট করেনি বা টিকেট করেনি, তারা রয়ে গেছেন, তারা আমাদের হিসাবের মধ্যে আসেনি।’
রাশেদ খান মেনন বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের হজ এজেন্সি ধরে আনতে র্যা ব ইউজ করতে হয়েছে। তাদের ধরে আনা হয়েছে টাকা আদায়ের জন্য। এবার আমরা চিহ্নিত করতে যাচ্ছি, যেসব হজ এজেন্ট, যারা এই ধরনের প্রতারণা করেছে, তাদের লাইসেন্স বাতিলের বিষয়ে। এটা মূলত ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। যে সব ট্রাভেল এজেন্ট টিকেট নিয়ে যাত্রী দেননি তাদের লাইসেন্স বাতিল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করব। এজেন্সিগুলোকে জরিমানাও করা হবে। আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বলেছি আবশ্যিকভাবে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।’
সোমবার রাতে হজে যাওয়ার ফ্লাইট শেষ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৬ আগস্ট পর্যন্ত হজে যাওয়ার ফ্লাইট পরিচালনার কথা থাকলেও বিমানের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরে আরও আটটি স্লট নিয়ে আসা হয়। এর দু’টো স্লট এখনও আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। আমরা আরও ৮১৯ জন যাত্রী পাঠাতে পারতাম।
পর পর দু’বছর হজ পালনকারীদের কাছে বাড়তি ২ হাজার রিয়াল দাবি, ই-ভিসার প্রিন্ট জটিলতা, মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধির কারণে এবার হজযাত্রী পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে আমাদের হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। এরমধ্যে প্রধান বিষয়টি হচ্ছে বাড়ি ভাড়া। ইচ্ছাকৃতভাবে তারা আগে বাড়ি ভাড়া করেনি। অনেক হজ এজেন্সি যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে টিকেট না করে পালিয়ে গেছে।তাই সময়মতো হজযাত্রী সরবরাহ করতে না পারার কারণে বিমান ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ক্যাপাসিটি লস হয়। বিমানকে ২৪টি ও সৌদিয়াকে চারটি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক বলেই আমরা মনে করি।
হজযাত্রী পরিবহনে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে বিমানমন্ত্রী বলেন, এবার যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছর থেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিমান মন্ত্রণালয়সহ সবাইকে নিয়ে পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইটগুলো নির্বিঘ্ন হওয়ার আশাবাদ জানিয়ে মেনন বলেন, গত কিছুদিন আমরা সবাই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। সব উৎকণ্ঠা দূর করে শেষ পর্যন্ত আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানমন্ত্রী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির হিসাব আমরা করব, সেটা কীভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় সেই ব্যবস্থাও করব।
এ সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদসহ মন্ত্রণালয় ও বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/ওআর/এমএস