আগামী বছর চালু হচ্ছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার
ঢাকা ওয়াসার আওতায় প্রণীত সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে পাঁচ এলাকায় পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এর মধ্যে আফতাবনগর সংলগ্ন দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের কাজ চলমান।
চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি হয়েছে (ডিপিপি অনুসারে) ৪৭ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক, ২০২১ সালের মার্চের মধ্যে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার চালু করা যাবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনগার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ওয়াসা। এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসার আওতাধীন প্রণীত সুয়ারেজ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে পাগলা, দাশেরকান্দি, রায়েরবাজার, উত্তরা এবং মিরপুর এলাকায় মোট পাঁচটি পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পয়ঃশোধনাগার নির্মাণের মাধ্যমে গুলশান, বনানী, বারিধারা, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাঁতারকুল, হাতিরঝিল এবং আশপাশের এলাকার সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদীতে নিষ্কাশিত হওয়ার মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া হাতিরঝিল প্রকল্পের গুণগতমান উন্নয়নসহ সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্ট শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মহসিন আলী মিয়া জানান, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মোট ৬২ দশমিক ৬১ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম সম্পন্ন করে গত বছর ঢাকা ওয়াসা বরাবর দখল হস্তান্তর করা হয়। গত বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পটির নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। আশা করা যায়, স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক প্রকল্পের নির্মাণকাজ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে শেষ করে চালু করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি প্রকল্পটির সার্বিক অবস্থা জানতে পরিদর্শনে আসেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। ওই সময় তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বর্জ্য সঠিক উপায়ে ধ্বংস করতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প ছাড়াও আরও চারটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য আমরা দাশেরকান্দি ছাড়াও পাগলা, মিরপুর, উত্তরা ও রায়ের বাজারে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের সুপারভিশন প্রকল্প চালু হলে সব সুয়ারেজ এখানে এনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। সেই লক্ষ্যে নেটওয়ার্ক পাইপলাইন স্থাপনের কাজও শিগগিরই শুরু হবে।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজটি করছে চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না কর্পোরেশন। ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতরের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রিতা লেগে যায়। এছাড়া প্রকল্প এলাকা খুবই নিচু হওয়ায় প্রায় সারা বছরই পানিতে ডুবে থাকত। তাই ভরাট কার্যক্রম পরিচালনা করতে দীর্ঘসময় লেগে যায়। প্রকল্প এলাকায় প্রায় ২০ ফুট গভীরতায় বালু ভরাট করা হয়েছে।
প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে ২৩০ কেভি দুটি হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইনের টাওয়ার বিদ্যমান ছিল। প্রকল্প সঠিকভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ওই দুইটি হাই-ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তত্ত্বাবধানে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফুজিয়ান ইলেকট্রিক কোম্পানির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার দুই পাশে সীমানা বরাবর স্থানান্তর করা হয়েছে। এই কাজে প্রায় ১০ মাস সময় ব্যয় হয়।
পুরো প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তদারকির জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোরিয়ান হাংকক ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাইড্রো চায়না কর্পোরেশন পরবর্তী এক বছর তত্ত্বাবধান এবং দেখভাল করবে।
এএস/এসআর/পিআর