ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ট্রেন আসছে দেখেও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশিত: ০৬:৩০ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২১

শনিবার, সকাল সাড়ে ১১টা। মগবাজার রেলক্রসিংয়ে ব্যারিকেড দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ট্রেনের হুইসেল ও ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক আওয়াজ ক্রমেই কানে স্পষ্ট ভেসে আসে। গেটম্যান রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা হাতে লাইন ক্লিয়ারের সিগন্যাল দিচ্ছেন। রেলক্রসিংয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়াটাই স্বাভাবিক কিন্তু রেলের এগিয়ে আসার শব্দ যত কাছে আসছিল ততই অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য চোখে পড়ে।

দুর্ঘটনায় হতাহতের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বেপরোয়া হয়ে কিছুসংখ্যক মানুষকে রেললাইনের ওপর দিয়ে দ্রুত হেঁটে ও দৌড়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। তাদের কেউ মাছ বিক্রেতা, কেউ কলা বিক্রেতা আবার কেউবা সাধারণ পথচারী। শুধু পথচারীরাই নন, উঠতি বয়সী এক তরুণকে ব্যারিকেডের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল হাঁকিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন ক্রস করতে দেখা যায়। কেউবা আবার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হচ্ছেন।

এরই মাঝে ছুটে আসে রেলগাড়িটি। প্রচণ্ড গতিতে রেলগাড়িটির ক্রসিংয়ের সময় আরেক তরুণকে নির্ভাবনায় চলন্ত রেলগাড়ির পাশ দিয়ে হাটতে দেখা যায়। দ্রুতগতিতে রেল চলাচলের ফলে ব্যাপক বাতাসের গতি ওই তরুণকে একটু দূরে সরিয়ে দেয়। একটি রেল চলে যাওয়ার পর রেলক্রসিংয়ের একপাশে থেকে আরেক পাশে এসে লাইনম্যান বিপরীত দিক থেকে আসার আরও একটি ট্রেনের চালকের উদ্দেশ্যে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে গ্রিন সিগন্যাল দিতে থাকেন। আবার সেই একই দৃশ্য লোকজনের ছুটোছুটি চোখে পড়ে।

jagonews24

ট্রেন দুটি ক্রসিংয়ের পর কৌতুহলবশত এ প্রতিবেদক গেটম্যানকে ব্যারিকেড দেয়া সত্ত্বেও মানুষের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহিন মিয়া নামের ওই গেটম্যান বলেন, মানুষকে নিষেধ করলেও তারা শুনে না। বাধা দিলে কেউ কেউ তেড়ে মারতে আসে। এ কারণে প্রথম প্রথম মানুষকে সাবধান করলেও এখন বিরক্ত হয়ে কিছু বলেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

১৮৯০ সালের রেল আইনে রেললাইনের দুই পাশে ১০ ফুটের মধ্য দিয়ে মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ। এমনকি এর মধ্যে গরু-ছাগল ঢুকে পড়লে সেটিকেও নিলামে বিক্রি করে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষের। রেলে কাটা পড়ে কেউ আহত হলে উল্টো ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে রেলওয়ে। আইন থাকলেও তা মানার প্রবণতা নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর রেল দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ মানুষ মারা যায়। হতাহতের সংখ্যা প্রায় ২৫০ জনের মতো। রাজধানীসহ আশপাশের ৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ৫৮টি লেভেল ক্রসিংয়ের ২৩টি অরক্ষিত ও অননুমোদিত। এর মধ্যে কোনোটিতে নেই গেটম্যান ও সিগন্যাল বার। কমলাপুর থেকে টঙ্গী পর্যন্ত অংশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে।

jagonews24

রেললাইনে দুর্ঘটনার বিভিন্ন কারণের মধ্যে অসচেতনভাবে রেললাইন দিয়ে হাঁটাচলা, পারাপার, মোবাইল ফোনে কথা বলা বা কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনে শুনে রেললাইন দিয়ে হাঁটা, ট্রেনের হুইসেল শুনতে না পাওয়া, আঁকাবাঁকা পথে ট্রেন দেখতে না পাওয়া, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা এবং নেশাগ্রস্ত হয়ে রেললাইনে চলাচল অন্যতম।

এমইউ/এআরএ/এমকেএইচ