পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারির ইফতারের কদর কমেনি
শনিবার মধ্য দুপুর। সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা আশরাফ আলী দাঁড়িয়ে আছেন রাজধানীর পুরান ঢাকার সাতরওজার আনন্দ বেকারির দোকানের ভেতর। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এ বেকারিতে হরেক রকম ইফতারসামগ্রী থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
ক্রেতা আশরাফ আলী এক কর্নারে সাজিয়ে রাখা আইটেমের দিকে অঙ্গুলি প্রদর্শন করে ৮টা মুরগি মোসাল্লাম, হাফ কেজি কাবাব, হাফ বাটি হালিম এবং ১২টা টানা পরোটা অর্ডার করলেন।
প্রতিটি মুরগি মোসাল্লাম ৩৫০ টাকা, হাফ বাটি হালিম ৫০০ টাকা, হাফ কেজি সুতি কাবাব ৬০০ টাকা ও টানা পরোটা প্রতিটি ২৫ টাকা করে চার হাজার ২০০ টাকা বিল পরিশোধ করলেন আশরাফ আলী।

তার কাছে জানতে চাওয়া হলো- সিদ্ধেশ্বরী ও বেইলি রোডে এত আধুনিক ও নামকরা ইফতারির দোকান থাকতে কেন আনন্দ বেকারিতে এসেছেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আনন্দ বেকারির কিছু কিছু মজাদার ইফতার আইটেমের সঙ্গে ঢাকার অন্য কোনো ইফতারের তুলনা হয় না।’

উদাহরণ হিসেবে তিনি মুরগি মোসাল্লামের কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদের এই আইটেমটি সিদ্ধেশ্বরীতে পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও আনন্দের মুরগি মোসাল্লামের যে টেস্ট তা পাই না। তাই প্রতি বছর রমজানে এ আইটেমটি ছাড়াও সুতি কাবাব, হালিম, জিলাপি, শাহি টুকরা, স্পেশাল লাবাং ও শরবত কিনতে দু-চারবার আসতেই হয়।
শুধু আশরাফ আলীই নন, তার মতো অনেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনন্দ বেকারির বিভিন্ন মজাদার লোভনীয় আইটেমের ইফতার সামগ্রী কিনতে ছুটে আসেন।

লকডাউনের মাঝে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বেকারিতে অর্ধশতাধিক আইটেমের ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। যেমন-পনির সমুচা, বিফ সমুচা, ডিম চপ, মুরগি মোসাল্লাম, চিকেন পরোটা, টানা পরোটা, শাহি কাবাব, জালি কাবাব, চিকেন স্টেক, চিকেন ফ্রাই, চিকেন শর্মা, সাসলিক, ভেজিটেবল রোল, দইবড়া, ফিরনি, শাহি টুকরো, স্পেশাল চিকন জিলাপি, মোটা জিলাপি, বুন্দিয়া, মিষ্টি দই, রসমলাই এবং শাহি জাফরান শরবতসহ অন্যান্য মজাদার ইফতার।
দুপুরে দোকানটিতে গেলে দেখা যায়, করোনার কারণে দোকানে প্রবেশপথে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ স্টিকার লাগানো রয়েছে। দরজার সামনে স্যানিটাইজার হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন কর্মচারী। দোকানের ভেতর ক্রেতা প্রবেশ করার আগেই হাতে স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। দোকানের ভেতর নির্দিষ্ট সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য লাল রঙ দিয়ে বক্স আকারে চিহ্ন এঁকে দেয়া হয়েছে। হরেক নামের হরেক স্বাদের ইফতারের আইটেম পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা আছে। যারা ইফতার বিক্রি করছেন তাদের সবার পরিধানে একই রঙের পোশাক, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা একজন নারী তার দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে আনন্দের স্পেশাল হালিম কিনতে আসেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আনন্দ বেকারির সব ইফতারের আইটেমই মজাদার। দামও খুব বেশি নয়, সাধারণ মানুষেরও নাগালের মধ্যে। তিনি আজ ৫০০ টাকার হাফ কেজি হালিম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কলাবাগানের বাসিন্দা মধ্য বয়সী সোহরাব আলী ৫০০ টাকা কেজি দরে জিলাপি আর ৩০০ টাকা দরে এক লিটার জাফরান শরবত কিনেছেন। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে এসে এ বেকারি থেকে ইফতার কিনে নিয়ে যেতাম। এবার করোনা ও লকডাউনের কারণে ছেলেকে পাঠিয়ে দুদিন ইফতার কিনে নিয়ে গেছেন। আজ তিনি নিজেই এসেছেন বলে জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন পুরুষ ধরে আনন্দ বেকারির এ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠানটি প্রচার প্রচারণায় বিশ্বাসী নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালিকদের একজন বলেন, তিন পুরুষের ব্যবসা সুনামের সঙ্গে পরিচালনায় তারা গুণগত মানসম্পন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরির ক্ষেত্রে এতটুকু আপস করেন না। তারা বিশ্বাস করেন খাদ্যের গুণগত মান ভালো হলে ক্রেতারা পছন্দের খাদ্যসামগ্রী কিনতে আসবেন। মহামারি করোনাকালে ব্যবসায়িক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। করোনাকালে ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এমইউ/জেডএইচ/জিকেএস/এএসএম