লামার ত্রিপুরা-ম্রোদের ৪০০ একর জমি রক্ষার দাবি
বান্দরবান লামা উপজেলার ৫ নম্বর সরই ইউনিয়নের লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভূমি আগ্রাসন থেকে ত্রিপুরা ও ম্রোদের তিনটি পাহাড়ি গ্রামের ৪০০ একর জমি রক্ষার দাবিতে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছে লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি।
সংবাদ সম্মেলনে রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভূমি জবরদখলের চেষ্টা, সেখানকার অশোক বৌদ্ধ বিহারে হামলা, ভাঙচুর ও বুদ্ধমূর্তি লুট, জুমের জমি পুড়িয়ে দেওয়া এবং ভূমিরক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা।
লিখিত বক্তব্যে আহবায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাধীন সরই ইউনিয়নের ৩০৩ নম্বর ডলছুড়ি মৌজায় আমাদের ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৪০০ একর জুম ভূমি রয়েছে, যা আমরা বংশ পরম্পরায় ভোগ দখল করে আসছি। এই জুম ভূমি তিন গ্রামবাসী লাংকম পাড়া (ম্রো কারবারি), জয়চন্দ্র পাড়া (ত্রিপুরা) রেংইয়েন পাড়ার (ম্রো) ৩৯ পরিবার বংশ পরম্পরায় ভোগদখল করে আসছে।
কিন্তু গত ৯ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রকল্প পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম গং ২০০ জনের অধিক মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভাড়া করে ভূমিজ সন্তান লাংকম পাড়া, জয়চন্দ্র পড়া ও রেংইয়েন পাড়াবাসীদের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায় এবং আমাদের লাগানো ফলজ চারা বাঁশ বাগানসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে সাফ করে দেয়। গত ২৬ এপ্রিল তারা ওই জমির বাগানে আগুন দিয়ে প্রাকৃতির পরিবেশ বিনষ্টসহ লাখ লাখ টাকার সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে। এতে আমরা তিনটি গ্রামের বাসিন্দারা একদিকে যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি, অন্যদিকে চরম খাদ্য সংকটে পড়ে যাই।
তিনি বলেন, গত ২১ মে ৪০০ একর জমি সংক্রান্ত বিরোধ মীমাংসার লক্ষ্যে বান্দরবান জেলা প্রশাসন কর্তৃক স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. লুৎফর রহমানকে প্রধান করে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির উদ্যোগে লামার ৫ নম্বর সরই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের প্রতিনিধি ও গজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাথোয়াইচিং মারমা এবং সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী ওই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানিতে ৩৯ পরিবারকে পরিবার প্রতি ৫ একর করে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করা হলে উপস্থিত গ্রামবাসী তা প্রত্যাখ্যান করেন।
গত ১৬ আগস্ট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সভাপতিত্বে পৃথক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই শুনানিতেও পূর্বের ন্যায় পরিবারপ্রতি ৫ একর জমি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে ভূমি রক্ষা কমিটি পুনরায় এ অন্যায্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
লিখিত বক্তব্যে রংধজন ত্রিপুরা আরও বলেন, আমাদের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের পেছনে যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। আমাদের বাঁচার শেষ অবলম্বন ৪০০ একর জমি রক্ষার জন্য প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। কিন্তু ভূমিদস্যুদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হলে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি। দাবিগুলো হলো-
১) লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ভূমি বেদখল বন্ধ করতে হবে এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগ দখলীয় ৪০০ একর জুম ভূমিসহ কোম্পানি কর্তৃক বেদখলকৃত সকল জমি ফেরত দিতে হবে।
২) উক্ত কোম্পানির কর্মকান্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো ও ত্রিপুরাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩) জুম ভূমি কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা, অশোক বৌদ্ধ বিহারে হামলা ভাংচুর ও বুদ্ধ মূর্তি লুট এবং ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত কামাল উদ্দিন, মোয়াজ্জেম হোসেন, জহির উদ্দিন গংদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিতে হবে।
৪) কোম্পানি কর্তৃক ভূমি রক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ১১ জনের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
এমকেআর/এএসএম