সাংবাদিকদের ইসি আলমগীর
সোবহান মিয়া দুর্নীতি করলে ব্যবস্থা নেবে দুদক, ইসির কিছু করার নেই
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির কিছু থাকে, তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দেখবে। দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করবে।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এসব কথা।
এই কমিশনার বলেন, দুর্নীতিমূলক কিছু যদি থাকে, দুদক দেখবে। তারা মামলা করবে। রাজস্ব কোর্টে এনবিআর মামলা করতে পারবে। পরবর্তী সময়ে আইনে যেটা আছে, সেটা আইন অনুযায়ী হবে। উনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। উনার ভোটারদের জানিয়েছেন উনার নাম কী, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কী সম্পদ আছে। আমাদের এখানে কোনো শাস্তির ব্যবস্থা নাই।
আরও পড়ুন: কানাডার আদালতের রায় বিএনপির জন্য লজ্জার : গোলাপ
দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ ভোটে অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের নাগরিকরা পারবেন না। তাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেখে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা দেখবে। তারা আমাদের বললে আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
প্রার্থী ভুল তথ্য দিলে কোয়ালিফাইড হবেন না জানিয়ে মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচিত হয়ে যান। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ না করে, এখন উনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন। উনি ভুল তথ্য দিয়েছেন, এটা শুধু বললে হবে না, প্রমাণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার পর যখন পাঠাবেন, তখন ব্যবস্থা নেবো।
কমিশনের সীমাবদ্ধতা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমাবদ্ধতা না। উনি হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে নমিনেশন সাবমিটের আগে জানালে ব্যবস্থা নেবো। হলফনামা যাচাই-বাছাইয়ের আগে দিলে আমরা দেখবো। মিথ্যা তথ্য মানেই প্রতারণা। প্রতারণার মামলা আছে আলাদা। কোর্ট শাস্তি দিয়ে আমাদের জানালে আমরা ব্যবস্থা নেবো।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের ‘এক দফা এক দাবি’
মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদকের পদ পান। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকও ছিলেন।
সোবহান মিয়া (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন বলে জানিয়েছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি। তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে নির্বাচনী হলফনামায় এসব তিনি উল্লেখ করেননি।
গত শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট ৯টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি (ডলারের বর্তমান বিনিময় মূল্য অনুযায়ী প্রায় ৪২ কোটি টাকা)।
আরও পড়ুন: বিধি ভেঙে ভোট চাচ্ছেন এমপি গোলাপ
তার হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, হলফনামা আমাদের একটা জমা দেবে। কিন্তু সেই হলফনামার সত্য-অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কোনো কিছু করার আইনের ভিত্তি নাই। হলফনামা যেটা দেবে সেটা এক ধরনের জাতিকে তথ্য জানানোর দায়িত্ব।
ভোটার তালিকা প্রসঙ্গে আলমগীর বলেন, ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হলো। প্রতি বছর মার্চ মাসে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করি। এবারও তাই হবে। যদি কারও কোনো আপত্তি থাকে, তারা আপত্তি দেবেন। ত্রুটি থাকলে সংশোধনের আবেদন করবেন। পরে আমরা চূড়ান্ত করে ভোটার দিবসে প্রকাশ করবো।
আরও পড়ুন: দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯০ লাখ
তিনি বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বৈত ভোটার হওয়া অপরাধ। শাস্তি অনেক কঠিন। তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল মামলা হবে। ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটা যাবে, পাশাপাশি জেল খাটতে হবে।
তিনি আরও বলেন, হালনাগাদ শেষে ২ মার্চ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। সাধারণ নির্বাচনের আগে একটা সময় থাকে। সে সময়ের মধ্যে ভোটার হলে তারাও অন্তর্ভুক্ত হবেন।
এইচএস/এমএইচআর/জিকেএস