পথের ক্লান্তি ভুলে…

আগামী ৭ জুন পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের চাঁদ খুশির খবর নিয়ে আসে। কিন্তু ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের মনে স্বস্তি নেই। দুর্বিষহ যাত্রার কথা মনে এলেই ঈদের আনন্দ যেন উবে যায়। ফি বছর একই অবস্থা থাকলেও উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই। বরং এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক নাও হতে পারে। এই ঈদে ১০ দিন সরকারি ছুটি থাকছে। গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য এই ছুটি ৫ দিন। এতদিন ছুটি থাকার পরও ঈদযাত্রার ভোগান্তি থেকে রেহাই নেই। মূলত চাপটা শুরু হয় ঈদের দু-একদিন আগে থেকে। কারণ এই সময় একসঙ্গে সবার ছুটি হয়। আর এত মানুষ একসাথে চলতে গিয়ে দেখা দেয় তীব্র পরিবহন সংকট।
সত্যি বলতে কি এবারও সড়কপথে ঈদযাত্রা ভোগান্তিহীন হবে- এটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যদিও গত ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদ হওয়ায় শুধু যাত্রাপথ মসৃণ রাখলে হবে না- বরং গরুর ট্রাক যেন নির্বিঘ্নে রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। কোরবানির পশুর হাট নিয়েও আছে বিড়ম্বনা। এই সময় কোরবানির পশুর হাটের কারণে নতুন করে যানজট দেখা দেয়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
রাজধানীতে যারা বসবাস করেন তাদের কাছে যানজট নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু দূরপাল্লার বাসে মহাসড়কেও যখন যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয় তখন চেনা যানজটও ভয়াবহ দুঃসহ হয়ে ওঠে। যানজট কখনো এমনও ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে ঘরমুখো যাত্রীদের অনেকেরই ঈদের দিনও রাস্তায় আটকে থাকতে হয়েছে। ঈদের দু-চার দিন আগে থেকে গাবতলী, সায়েদাবাদ, চিটাগাং রোড, সাভার, ধামরাই, ইপিজেড চন্দ্রা এলাকায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। যে জন্য ৫-৬ ঘণ্টার রাস্তা যেতে ১৬-১৭ ঘণ্টাও লেগে যায়।
যানজট সৃষ্টি হওয়ার চিহ্নিত এই জায়গাগুলোতে যদি ট্রাফিক পুলিশ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সদস্য, গাড়িচালক এবং যাত্রীরা যথাযথ আচরণ করে তাহলে সহজেই এই দুর্ভোগ এড়ানো সম্ভব। রাস্তা থেকে যাত্রী উঠানো, বাসগুলো এলোমেলো করে পার্কি করে রাখা, রংসাইড দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে এসব জায়গায় যানজট দেখা দেয়। সদিচ্ছা থাকলে এই অনিয়মগুলো সহজেই রোধ করা যায়। এছাড়া ঈদের সময় ফেরিঘাটে ফেরির অভাবও প্রকট হয়ে ওঠে। পাটুরিয়া ও মাওয়ায় ফেরিঘাটে বাসগুলো ফেরিতে ওঠার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেখানেও জট লেগে যায়। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় অসংখ্য ঘরমুখো মানুষজনকে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
পশুবাহী ট্রাকগুলোও যানজটে আটকা পড়ে। এ কারণে দেখা দেয় নানান বিপত্তি। কয়েক বছর আগের ঘটনা। কুষ্টিয়া থেকে পশুবাহী একটি ট্রাক ঢাকায় পৌঁছতে সময় লাগে ১৭ ঘণ্টা। ওই ট্রাকে ৩০ মণ ওজনের একটি ষাঁড় ছিল যার দাম ওঠে ৯ লাখ টাকা। ট্রাকে করে ঢাকায় আনার পথে দাঁড়িয়ে না থাকতে পেরে এক সময় পড়ে গিয়ে পা ভেঙে যায় ষাঁড়টির। ষাঁড়টি সুস্থ করার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মাত্র দুই লাখ টাকায় কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেন কুষ্টিয়ার কাজী খামারের মালিক কাজী শওকত। পশুবাহী ট্রাক যানজটে পড়ে গত ঈদের সময়ও অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হন। দেখা যায় অনেক সময় অমানবিক উপায়েও পশুবহন করা হয়। এসব ব্যাপারেও নজর দিতে হবে। পশুবাহী ট্রাকগুলো যাতে জরুরি ভিত্তিতে চলতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
আশার কথা হচ্ছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সরকার বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে সড়ক পথে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে পশুবাহী গাড়ি মহাসড়কের বাঁ লেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। একই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর বা পাশে বসে, এমন চিহ্নিত ২১৭টি পশুর হাট ইজারা না দেওয়া এবং সড়কে চাপ কমাতে শিল্প কারখানা পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক সভায় এরকম বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা গত ২১ মে তথ্যবিবরণীর মাধ্যমে জানানো হয়। পশুর হাটের প্রবেশমুখ সড়কের বিপরীতে রাখার নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘কোরবানির পশু পরিবহনের ট্রাকের সামনে ব্যানার ব্যবহার করতে হবে এবং পণ্য পরিবহনের যানবাহনে যাত্রী বহন করা যাবে না।’
দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নিতে রেকার প্রস্তুত রাখা হবে তুলে ধরে বলা হয়েছে, ‘দেশের সকল বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং সড়ক পথে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ও অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা রোধে নিয়ন্ত্রিত গতিসীমা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানিয়ে বলা হয়, ‘নসিমন, করিমন, ইজিবাইকসহ তিন চাকার সকল যানবাহন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল বন্ধ করা হবে। সড়কের উভয় পাশে অস্থায়ী বাজার অপসারণ করা হবে।’
বিজ্ঞাপন
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উচ্চ দামে টিকিট মিললেও যানবাহনটি যে সঠিক সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই ঘরমুখো মানুষদের যানবাহনে সওয়ার হতে হবে। ভাগ্যের ওপরই যেন ভরসা। অথচ দায়িত্ববান হলে, আইন-কানুন মেনে চললে রাস্তাঘাটের ঝুট ঝামেলা কিছুতেই বাড়ি ফেরার আনন্দ মাটি করতে পারবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনিয়মই যেখানে নিয়ম, সেখানে নিয়মের কথা মুখে আনাও যেন অপরাধ!
‘ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হবে। মেরামতের ওয়ার্কশপ ঈদের দশ দিন আগে থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’ সড়ক সংস্কারের কাজ ঈদের সাত দিন আগে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভায়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সব মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ ঈদের সময় সাত দিনের জন্য বন্ধ রাখা হবে।
তথ্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, ‘চিহ্নিত ১৪৯টি স্পটে যাটজট নিরসনে মনিটরিং টিম গঠন করে কার্যক্রম গ্রহণ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। দেশে সকল বাস টার্মিনালে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বিভাগের অধীন সকল সেতুতে টোল প্লাজা যানজটমুক্ত রাখতে সার্বক্ষণিক ইটিসি (ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন) বুথ চালু রাখা হবে।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলেছে, ঈদের বন্ধের দিনে মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। গরুবাহী যানবাহন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, পচনশীল দ্রব্য, তৈরি পোশাক সামগ্রী, ওষুধ, সার ও জ্বালানি বহনকারী যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। সড়কে যেন একসঙ্গে ঘরমুখো মানুষের চাপ না পড়ে সে জন্য তৈরি পোশাক কারখানা সব শিল্পকারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সড়কপথে গুরুতর দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এর সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা ও অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা রাখা হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগ মহাসড়কের পাশে থাকা হাসপাতালের তালিকা হাইওয়ে পুলিশকে দেবে। সদরঘাটসহ সব টার্মিনালে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরা ও সার্চলাইটের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে তথ্যবিবরণীতে বলা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ফিলিং স্টেশনগুলো ঈদের দিন, তার আগের সাত ও পরের পাঁচ দিন সার্বক্ষণিক খোলা রাখা ও যাত্রী পারাপারের জন্য পর্যাপ্ত ফেরির ব্যবস্থা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের সভায়।
ঈদের ছুটি শুরুর আগের দিন এবং ছুটির দিনগুলোর জন্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে তথ্যবিরণীতে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর, ফোকাল পারসন সংক্রান্ত তথ্যাদি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অবহিত করা হবে। এতে বলা হয়, গরুর হাটের সুনির্দিষ্ট সীমানা ও ম্যাপ তুলে ধরে ইজারা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে কোনো গরুর হাট ইজারা দেওয়া হবে না। যানবাহন কোরবানির পশু নামানোর জন্য ও বিক্রি করা পশু বহনের জন্য হাটে পৃথক পৃথক জায়গা খালি রাখা হবে। প্রতিটি গরুর হাটে ইজারাদারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মীর ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়া হাটের কার্যক্রম ঠিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে এবং পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। (সূত্র : বিডি নিউজ ২১ মে ২০২৫)
রাজধানী থেকে যে পরিমাণ মানুষ গ্রামে ফেরেন সে তুলনায় যানবাহনের সংখ্যাও অপ্রতুল। এ কারণে বাসে, ট্রেনে, এমনকি লঞ্চেও অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লোকজনকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। যদি সার্ভিস বাড়ানো যায় তাহলে হয়তো এই দুর্ভোগ অনেকটা কমিয়ে আনা যায়। কিন্তু রাতারাতি তো আর সমস্যার সমাধান করা যায় না। এজন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের দেশে সেই পরিকল্পনার বড়ই অভাব। নইলে প্রতিবছর ঈদে একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলেও সেগুলো সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেই কেন? কেন ঈদের আগে যৎসামান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয় যেটা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না। রেলের কয়েকটা বগিজুড়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন রুটে ট্রিপ সংখ্যা সামান্য বাড়িয়েই তো রেলওয়ে তার দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। এবারো গতানুগতিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালুর কর্মসূচি নিয়েছে। এই সার্ভিস চালু থাকবে আগামী কয়েক দিন। বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ট্রেন সার্ভিস চলাচল করবে। নতুন বগিও সংযোজন করা হবে। চাহিদা অনুযায়ী দাঁড়ানো যাত্রীর টিকিটও ইস্যু করবে রেল কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
রেলের টিকিট কী রকম সোনার হরিণ তার একটি উদাহরণ দিই। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পশ্চিমাঞ্চলের যেসব যাত্রী আগামী ৬ জুন ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ২৭ মে সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এসময় প্রথম ৩০ মিনিটেই টিকিট কিনতে ১ কোটি ১৪ লাখ হিট বা টিকিট কেনার চেষ্টা করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৬ জুন ঢাকা থেকে সারাদেশে যাতায়াতের জন্য পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে ৩২ হাজার ৯৬৫টি টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৭৮টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তো এই হচ্ছে রেলের টিকিটের অবস্থা। সড়কগুলোর দুর্দশার কারণে এবং নিরাপদ যাত্রার ভরসায় লোকজন রেলকেই বেছে নিলেও রেলের সে তুলনায় সার্ভিস দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এটা খুবই দুঃখজনক যে অমিত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও রেল এখনো যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারলো না। লাভজনক হয়ে উঠতে পারলো না রেল।
ঈদযাত্রায় রেল, লঞ্চ, বাসের টিকিট কাটতে গিয়েই প্রথম ধাক্কাটা খেতে হয়। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম দিনই তা সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবারের মতো আবার সেই পুরোনো দৃশ্য। ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিনেই সব টিকিট উধাও। শুধু তাই নয় ঈদকে সামনে রেখে বাড়ানো হয়েছে টিকিটের দামও। দূরপাল্লার বাসগুলোর কোনো কাউন্টারেই মিলছে না ঘরে ফেরার টিকিট। সদরঘাট নদীবন্দরেরও একই দৃশ্য। যদিও পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রার দুর্ভোগ অনেকটাই কমেছে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে উচ্চদামে টিকিট মিললেও যানবাহনটি যে সঠিক সময়ে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই ঘরমুখো মানুষদের যানবাহনে সওয়ার হতে হবে। ভাগ্যের ওপরই যেন ভরসা। অথচ দায়িত্ববান হলে, আইন-কানুনগুলো মেনে চললে রাস্তাঘাটের ঝুট ঝামেলা কিছুতেই বাড়ি ফেরার আনন্দকে মাটি করতে পারবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অনিয়মই যেখানে নিয়ম, সেখানে নিয়মের কথা মুখে আনাও যেন অপরাধ!
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সার্ভিসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করবে বিআরটিসির বিশেষ বাস সার্ভিস। পরিবহন সংকট যেখানে ভয়াবহ সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত এই পরিবহন সংস্থাটি মানুষের আশা-ভরসার স্থল হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা এই প্রতিষ্ঠানকে এতটাই অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছে যে এর অস্তিত্ব রক্ষাই এখন দায় হয়ে পড়েছে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সড়ক পথে চলাচল করছেন। কম ভাড়াসহ নানাবিধ কারণে নৌপথেও বিরাট সংখ্যক মানুষ চলাচল করে। কিন্তু নদীপথে পর্যাপ্ত তদারকির অভাব, নৌ ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা, যাত্রী পরিবহনে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, ধারণক্ষমতার চেয়ে ৭-৮ গুণ বেশি যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ইত্যাদি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এতে সম্পদহানির পাশাপাশি নৌযাত্রীদের জীবনও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। বহু মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে। দিন দিন নদীপথে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। আসন্ন ঈদে ঘরমুখো লোকজনকে যাতে ঠাসাঠাসি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে না যেতে হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ-স্টিমার চলাচল বন্ধ করার পাশাপাশি লঞ্চের সংখ্যাও বাড়াতে হবে।
প্রতি বছর ঈদযাত্রায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গ্রামে যান। যাত্রাপথের নানান ভোগান্তি, পথের ক্লান্তি ও কষ্ট যেন ঈদের আনন্দ ম্লান করতে না পারে সেটি নিশ্চিত করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর জাগো নিউজ।
drharun.press@gmail.com
এইচআর/এমএফএ/জেআইএম
বিজ্ঞাপন